আসমা আহমেদ শিমু
আগামী ৩০ অক্টোবর ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। আর কেয়কটা দিন মাত্র বাকি। এই ইউনিটে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে সেই তুলনায় আসন সংখ্যা অনেক কম। বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ঢাবি তে প্রায় ১ হাজার ৫শ এবং জবিতে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ-এর মতো আসন। ঢাবিতে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় ‘ঘ’ ইউনিটে। বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক সব শিক্ষার্থীর জন্য এটি উন্মুক্ত। তবে সবার জন্য পরীক্ষাপদ্ধতি একই। তবে মেধা তালিকা হয় বিভাগ অনুযায়ী। ঢাবিতে ‘ঘ’ ইউনিটে ১০০টি প্রশ্নে ১২০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি প্রশ্নের মান ১.২। বাংলা ও ইংরেজি থেকে ২৫টি এবং সাধারণ জ্ঞান থেকে ৫০টি প্রশ্ন থাকে। সাধারণ জ্ঞান অংশটিতে আলাদা ২৫টি করে বাংলাদেশ বিষয়ক ও আন্তর্জাতিক ঘটনার উপর প্রশ্ন থাকে। এখন ঘরে বসে মডেল টেস্ট দিতে পারলে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে। এমসিকিউ প্রশ্ন চর্চা বেশি করলে পরীক্ষার হলে টেনশন থাকবে না।
নিয়মিত খবর দেখ। পত্রিকা পড়। বিভিন্ন সাল-তারিখ মনে রাখতে চেষ্টা করা। সাধারণ জ্ঞানে ভালো করতে মানচিত্রটা মনে গেঁথে নিতে পারো, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও বিশ্ব মানচিত্র। খেলাধুলা, আবিষ্কার, রাজনীতি, স্থাপনা, পুরস্কার, সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা ইত্যাদি সম্বন্ধে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
পরীক্ষায় কোনোভাবেই ভুল উত্তর করা যাবে না। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৩০ করে নম্বর কাটা যাবে। উত্তরপত্রে বৃত্ত ভরাট করার সময় অবশ্যই প্রশ্নের নম্বর ও উত্তরের নম্বর দেখে নিতে হবে। অনেক সময় একটি ঘর ভুলের কারণে পরবর্তী সব উত্তর এক ঘর পিছিয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাবিতে যারা ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে ‘ইংলিশ বিভাগে’ পড়তে চান, তাদের ‘বাংলাদেশ বিষয়াবলীর পরিবর্তে উত্তর দিতে হবে ‘এডভান্স ইংলিশ’। অন্যথায় ‘ঘ’ ইউনিট থেকে ‘ইংরেজি বিভাগ’ নিতে পারবেন না। চলতি বছরও ওই নিয়ম বহাল থাকছে। সুতরাং সেভাবেই প্রস্তুতি নিন। এডভান্স ইংলিশের ক্ষেত্রে মোট নম্বর ৩০। এরমধ্যে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১.২০ মার্কস। ভুল করলে প্রতিটি ভুলের জন্য কাটা যাবে ০০.৩০ মার্কস। আরেকটি কথা জেনে রাখা ভালো এডভান্স ইংলিশ আর ইলেক্টিভ ইংলিশ এক বিষয় নয়। তবে প্রশ্নের ধরন প্রায় একই। তবে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। টেকনিক খাটিয়ে ও নিয়মিত পড়াশোনা করলে এডভান্স ইংলিশেও ভালো করা সম্ভব। আর একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে- বাংলা ও ইংরেজিতে ভালো নম্বর না থাকলে স্কোর ভালো থাকার পরও কাক্সিক্ষত বিষয় পাওয়া যাবে না। কাজেই এ দুটি বিষয়ে অতিরিক্ত সময় দিতে হবে।
বাংলা
বাংলায় ৩০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। প্রশ্ন থাকে ২৫টি। এরমধ্যে সাত থেকে আটটি প্রশ্ন আসে বাংলা প্রথম পত্র থেকে। বাকি প্রশ্ন আসে বাংলা ব্যাকরণ ও শব্দভিত্তিক অংশ থেকে। বাংলা প্রথম পত্রে গল্প ও কবিতা থেকে প্রশ্ন হয়। বোর্ড নির্ধারিত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বই ভালোভাবে আয়ত্ত করলে প্রথম পত্রের জন্য ভাবতে হবে না।
ব্যাকরণ অংশে ভালো করার জন্য মুনীর চৌধুরী রচিত নবম-দশম শ্রেণির বোর্ডের বাংলা বই অনুশীলন করতে হবে। এখান থেকেই বেশিরভাগ প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাড়তি প্রস্তুতির জন্য বাজারে প্রচলিত ভালো মানের কোনো বই দেখতে পারো। সমার্থক শব্দ থেকে প্রায় প্রতিবছরই প্রশ্ন হয়। এছাড়া বাগধারা, শুদ্ধ-অশুদ্ধ থেকেও প্রায় বছরই প্রশ্ন করা হয়। শব্দভিত্তিক প্রশ্নের জন্যও মুনীর চৌধুরীর বইটি গুরুত্বপূর্ণ। ‘ঘ’ বিভাগে বাংলা প্রশ্ন তুলনামূলক কঠিন হয়। তাই বাংলায় অতিরিক্ত নজর দিতে হবে। ভালো করার জন্য বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করা যেতে পারে। এখান থেকে অনেক প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি হয়।
ইংরেজি
ইংরেজিতেও ৩০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। প্রশ্ন থাকে ২৫টি। অন্য ইউনিট থেকে ‘ঘ’ ইউনিটের ইংরেজির প্রস্তুতি একেবারেই আলাদা। সাধারণত এ ইউনিটে ইংরেজি পাঠ্য বই থেকে কোনো প্রশ্ন আসে না। তাই নতুন করে পাঠ্য বই পড়তে না যাওয়াই ভালো। এখানে শব্দভিত্তিক প্রশ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে প্রতিবছরই ১০-১২টি প্রশ্ন আসে। এরমধ্যে ংুহড়হুস-ধহঃড়হুস থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি প্রশ্ন থাকে। ংুহড়হুস-ধহঃড়হুস এমনভাবে পড়তে হবে, যাতে একই সঙ্গে বানানও পড়া হয়ে যায়। এৎড়ঁঢ় াবৎন পড়তে অসুবিধা হলে বাদ রাখাই ভালো।
ব্যাকরণ অংশ থেকে প্রতিবছর ছয় থেকে সাতটি প্রশ্ন আসে। এ জন্য ইংরেজি গ্রামার ও ঞঙঊঋখ-এর ভালো মানের একাধিক বই পড়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে হড়ঁহ, ধফাবৎন, ংবহঃবহপব পড়সঢ়ষবঃব অংশ থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে। ঢ়ধংংধমব থেকে প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয়টি প্রশ্ন আসে। ভালো করার জন্য বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে। নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়লে কাজে আসবে।
সাধারণ জ্ঞান
‘ঘ’ ইউনিটে সাধারণ জ্ঞান অংশটি ভালো করলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়। এ জন্য নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া আর টিভির খবর দেখতে হবে। পত্রিকা পড়তে গিয়ে নতুন কোনো তথ্য পেলে তা অবশ্যই টুকে রাখবে। বিসিএস গাইড বই থেকে সাধারণ জ্ঞানের অধ্যায়গুলো পড়তে পারো। সাধারণত দুটি অংশ থেকে প্রশ্ন আসে। একটি হলো বাংলাদেশ অংশ, অন্যটি আন্তর্জাতিক। উভয় অংশ থেকে ২৫টি করে প্রশ্ন থাকে। দুটি অংশে মোট নম্বর ৬০।
সাম্প্রতিক বিষয়ে উভয় অংশ থেকে সাধারণত ১৪ থেকে ১৫টি প্রশ্ন আসে। এখানে ভালো করার জন্য পরীক্ষার আগের দু-তিন মাসের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী যতœসহকারে পড়তে হবে। অন্যান্য অংশে ভালো করার জন্য বিভিন্ন পুরস্কার, বিভিন্ন সংস্থা, বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী, বইয়ের লেখক, বিখ্যাত প্রণালী, বিশ্ব রাজনীতি ইত্যাদি আয়ত্তে আনতে হবে। যেকোনো বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন আসতে পারে। তাই তোমার তথ্যভা-ার যত সমৃদ্ধ হবে, উত্তর করা তত সহজ হবে। সব শেষে বলা যায় নিজের উপর আস্থা রাখো। কেননা আত্মবিশ্বাস তোমাকে এগিয়ে দেবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন