কক্সবাজারে এখন মানুষ আর মানুষ। পর্যটনে আবার সুদিন ফিরেছে। কক্সবাজার সহ দেশের পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে ব্যাপকহারে পর্যটক সমাগম হচ্ছে। করোনাকালীন দুই বছরের ঘরবন্দি জীবন থেকে মানুষ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছে। সাপ্তাহিক ছুটির সাথে বিজয় দিবসের ছুটিতে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপকহারে পর্যটক সমাগম দেশের পর্যটন খাতে শুভ লক্ষণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটন শহর কক্সবাজারে এখন লাখ লাখ পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়।
চার শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস রেস্ট হাউজে কয়েক মাস আগে থেকে অগ্রিম বুকিং দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৈকতের কক্সবাজার এসেছেন পর্যটকরা।
১৬ ডিসেম্বর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস রেস্টহাউজ কোথাও রুম খালি নেই। সৈকতে, রেস্টুরেন্টে এবং রাস্তাঘাটের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কক্সবাজারের সর্বত্র এখন মানুষ আর মানুষ।
এদিকে ব্যাপক এই পর্যটক সমাগমে একদিকে হিমশিম খাচ্ছেন হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে ব্যাপক পর্যটক আগমনে সরব হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রিক সকল ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে করে হোটেল মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করছেন গত দুই বছরের করোনাকালীন লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের পর্যটনের অন্যতম প্রোমোটার পাঁচ তারকা হোটেল সীগালের এমডি মাসুম ইকবাল বলেন, দেশ-বিদেশের ভ্রমণকারীরা কক্সবাজার আসুক- এই স্বপ্ন নিয়েই বালুচরে সর্বপ্রথম তারকা হোটেল সীগাল করা হয়েছিল। সেদিন কক্সবাজারের যে অবস্থা ছিল বালুচরে হোটেল সীগাল করতে গিয়ে মানুষ হাসাহাসি করেছিল। আজকে আমার স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে। দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এখন কক্সবাজারে ভ্রমণে আসছেন। সীগালের দেখাদেখি আরো বেশকিছু তারকা হোটেল হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর সেই দাবি এখনো পূরণ হয়নি।
ব্যাপক পর্যটক আগমন এর সুবাদে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, কক্সবাজার খুব দ্রুত একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন শহর হিসেবে রূপ নিতে যাচ্ছে। বিস্তীর্ণ সৈকতসহ পর্যটন এলাকার বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় টুরিস্ট পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। অতীতে সৈকতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটলেও টুরিস্ট পুলিশের ভূমিকায় বলতে গেলে পর্যটকরা এখন নিরাপত্তা সহকারে ঘোরাফেরা করতে পারেন। তাই কক্সবাজারে পর্যটক সংখ্যাও বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার কলাতলীর হোটেল মোটেল জোনে খবর নিয়ে জানা গেছে, ডজনখানেক তারকা হোটেল ছাড়াও চার শতাধিক হোটেল মোটেল রেস্ট হাউজ গেস্ট হাউসের কোথাও রুম খালি নেই। আগে বুকিং দিয়ে যারা কক্সবাজার এসেছেন তারা রুম পেলেও হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজারের রাস্তাঘাটে সৈকতে এবং শহরের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের ডজনখানেক জাহাজ চলাচল করে পর্যটক নিয়ে। কিন্তু বিজয় দিবসের ছুটিতে কোন জাহাজের টিকিট খালি না থাকায় আগে বুকিং দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করেননি এরকম হাজার হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারেননি।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির নেতা আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার বলেন বিজয় দিবসের ছুটিতে ব্যাপকহারে পর্যটক আশায় হোটেল মালিকরা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা তারা আশা করছেন পর্যটক আগমনে এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই মৌসুমে গত দুই বছরের করোনাকালীন লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সৈকতে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ সৈকতে হাজার হাজার পর্যটক মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সময় কাটাচ্ছেন আপনজনদের নিয়ে। শত শত পর্যটক সৈকতে গোসল করছেন। আবার কেউ বিনোদন করছেন স্পিডবোটে চড়ে, বা ঘোড়া ও জেডএস্কি চালিয়ে।
এ সময় ঢাকা ও রাজশাহীর কয়েকটি পর্যটক দম্পতি জানিয়েছেন, তারা সরকারি চাকরি করেন। পর্যটন শহর কক্সবাজারে বেড়ানোর জন্য বিজয় দিবসের ছুটি তারা বেছে নিয়েছেন। তাই আগেভাগেই হোটেলের রুম দিয়ে কক্সবাজার এসেছেন। খুব ভালো পরিবেশ এবং আবহাওয়ায় তারা ভালোভাবেই ভ্রমণ উপভোগ করছেন বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন