বিজয় দিবস ও টানা তিন দিনের ছুটিতে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হয়েছে কক্সবাজারে। এ কারণে হোটেলে রুম না পেয়ে ফুটপাত, সৈকতের বালিয়াড়ি ও বাসে রাত্রি যাপন করছে পর্যটকরা।
গত বুধবার থেকেই কক্সবাজারমুখী লাখো মানুষ। এতে পর্যটন নগরীর চার শতাধিক হোটেল-মোটেলে চড়া দামেও রুম পাওয়া যাচ্ছে না।
বাধ্য হয়ে ফুটপাতে রাত যাপন করছে অনেকে। আবার কেউ কেউ বাসেই রাত কাটাচ্ছেন। এসবের মাঝেও পর্যটকদের সৈকতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে টুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা ৩ দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে এখন অবস্থান করছে অন্তত তিন লাখ পর্যটক। একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটায় এক শ্রেণির দালাল চক্র আগে থেকে নিজেদের নামে হোটেল রুম বুকিং করে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে এক ধরনের নৈরাজ্যে লিপ্ত হয়। তবে টানা ছুটিতে এক সঙ্গে অসংখ্য পর্যটক সমাগম ঘটায় সীমিত জনবল দিয়ে পর্যাপ্ত সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের সংশ্লিষ্টরা।
টুরিস্ট পুলিশের এক পরিদর্শক বলেন, সৈকতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। মাস্ক পরিধানসহ শারীরিক দূরত্ব মানতে প্রচারণার পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে অভিযোগ কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটরের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, একদিনেই তিন লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। এর আগের দিনও একই রকম। কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেলে দুই লক্ষাধিক অতিথি থাকতে পারেন। বাকিদের একটু কষ্ট করে রাত অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
এদিকে হোটেলে রুম না পাওয়ার সুযোগে খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও বাড়তি দাম রাখছে। পাশাপাশি পর্যটন এলাকায় রাস্তা মেরামতের কাজ চলমান থাকায় যানজটসহ নানা সংকট ও দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটকরা। অনেক ভ্রমণকারী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রাত কাটানোর একটি কক্ষের জন্য।
রংপুর থেকে আসা ফরিদুল ইসলাম নামের এক পর্যটক বলেন, ছুটিতে প্রথমবার কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছি। কিন্তু, এখনকার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ঢাকার মতো মানুষের ভিড়। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার এলেও এক রাত সৈকতে ঘুরাঘুরিতে কাটিয়েছি। আমার মনে হয় মৌসুমে কক্সবাজার না এসে অফ-সিজনে আসা উচিত।
ঢাকা থেকে আসা ইসতিয়াক হক স্ত্রী নিয়ে প্রথমবার কক্সবাজারে এসেছেন। তারা বলেন, প্রথমবার কক্সবাজারকে এলাম। একসঙ্গে এত মানুষ আর দেখিনি। সৈকতে এত বেশি মানুষ দেখে মনে হচ্ছে, এটা ঢেউয়ের সাগর নয়, যেন মানুষের সাগর।
এদিকে কক্সবাজার শহরের অলিগলি ও হোটেল মোটেল জোনে চলছে পার্কিংয়ের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। শুধু মালামাল ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে টোল আদায়ের জন্য বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন যানবাহন ও কুলি স্ট্যান্ড ইজারা নেওয়া হলেও এভাবেই পার্কিংয়ের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন এলাকার আবাসিক হোটেল রিগ্যাল প্যালেসে অবস্থানকারী আবুল কাশেম বলেন, ঢাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করেন। করোনা মহামারির কারণে গত ২ বছর একপ্রকার বন্দি জীবনযাপন করেছেন। টানা ৩ দিন সরকারি ছুটি থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন। কিন্তু হোটেল রুম বুকিং করতে গিয়ে গুনতে হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ভাড়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন