বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উত্তাল আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান দানবীয় সরকারকে উৎখাত করি। একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব। এ সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাহস ও বুকের পাটা থাকলে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। তখন দেখা যাবে জনগণ কাদের চায়? তাই গণতন্ত্র রক্ষা ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের প্রভু নয়। দেশের মালিক জনগণ। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশ চলে। আপনারা সংবিধান মেনে চলুন, দেশ রক্ষায় কাজ করুন, জনগণের কথা ভাবুন। জনগণ আজ এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। আপনারা জনগণের পক্ষে থাকুন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে গতকাল শুক্রবার বিকালে জেলা শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও মহানগর বিএনপির সদস্য-সচিব মো. সোহরাব উদ্দিন এবং জেলা বিএনপির সদস্য-সচিব কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন সরকার, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবু, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবীর খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য ওমর ফারুক শাফিন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান, জেলা বিএনপির নেতা হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কমিশন করার জন্য সংলাপ শুরু করেছেন। আমরা হুদা মার্কা নির্বাচন কমিশন চাই না। নির্বাচন কমিশন গঠনের পূর্বে বর্তমান সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন আমরা নাকি নির্বাচনে আসতে ভয় পাই। আরে ভয়তো আপনারা পান। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই প্রমাণিত হবে কে কাকে ভয় পায়। জনগণ স্বৈরাচারী একনায়ক তন্ত্রমার্কা সরকারের পরিবর্তন চায়।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশের ও জনগণের জন্য গণতন্ত্র রক্ষায় আপোষহীন সংগ্রাম করেছেন। মিথ্যা মামলায় আটক হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমারা অবিলম্বে তাঁর মুক্তি চাই। তার সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, অধিকার আদায়ের জন্য বড় ধরণের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণ পছন্দ মতো ভোট দিতে পারে না। আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। দেশে চার হাজার সাংবাদিকদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। শতাধিক সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সারাদেশে ২৫ লাখ নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজকের দেশের এ সঙ্কট বিএনপি-খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নয়। এ সঙ্কট দেশের সকল জনগণের সঙ্কট। এ সঙ্কট থেকে জনগণ মুক্তি চায়।
গতকাল শুক্রবার দুপুরের আগে থেকেই জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ডখন্ড মিছিল সহকারে দলীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। দুপুরের পর স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ যায়। প্রায় ১৫ বছর পর গাজীপুরে বিএনপির বড় ধরণের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।
সভায় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুল রহমান বলেন, বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়া মারা গেলে জনগণ একশ বছর ধরে ঘৃণা করবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী এবং ১১জন সেক্টর কমান্ডারের নামও তারা উচ্চারণ করেনি। এ বিষয়টি ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন