শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা

২০২১ সালজুড়েই রাজশাহী দাপিয়েছে করোনার ভারতীয় ধরন ডেলটা

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:১০ এএম

বিগত বছরের জের শেষ হতে না হতেই ২০২১ সালের শুরুতে অতিমারী করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টার আগমন ঘটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। দ্রæত বাড়ে আক্রান্ত আর মৃত্যুর হার। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ে করোনা মৃতের সংখ্যা। চাপাইনবাবগঞ্জে কঠোর লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা হলেও সেটা পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। আতংকে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে মানুষ গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে আসে রাজশাহীতে। বাসে ট্রেনে চলে যায় কর্মজীবীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে। রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়ে করোনার ভারতীয় ডেল্টা। রাজশাহী নগরীতেও আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। একমাত্র বড় হাসপাতাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঠাই নেই অবস্থা দাঁড়ায়। চরম সংকট দেখা দেয় অক্সিজেনের। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রেডক্রিসেন্ট, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ শত শত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে যায় মুমুর্ষ রোগীদের পাশে। বিভিন্ন সংগঠনও তৎপরতা শুরু করে।

পরিস্থিতি সামলাতে রাজশাহী নগরীতে দেয়া হয় কঠোর লকডাউন। ভ‚তুরে নগরীতে পরিনত হয় রাজশাহী। সংক্রমন গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় জেলাজুড়ে দেয়া হয় লকডাউন। এক বিভিষীকাময় সময় পার করে রাজশাহীর মানুষ।

নগরীর অসহায় মানুষের জন্য খাবার নিয়ে ছুটে চলে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। সবচেয়ে বেশী করুন দৃশ্য ছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ। কুড়ি শয্যার এ ওয়ার্ডে সব সময় সিরিয়ালে ছিল ষাট সত্তরজন। কাকে ছেড়ে কাকে নেবে এনিয়ে পেরেশানীতে ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একে একে ঢলে পড়ে সিরিয়ালে থাকারা। চোখের সামনেই এমন মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে স¦জনরা। এখানে শুধু রাজশাহী নয় আশেপাশের জেলা গুলো হতে শত শত রোগী আসতে থাকে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত রোগী মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ে। চোখের সামনে চলে যায় না ফেরার দেশে। এছিল এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। মানুষের আহাজারীতে হাসপাতাল চত্তরের বাতাস সব সময় থাকতো ভারী।

২০২১ এর শুরু থেকে মধ্য পর্যন্ত কটা মাস এমনি ছিল রাজশাহীর চিত্র। করোনার কারনে নগরজীবন বিপর্যস্ত হলেও গ্রামীন জনপদে ছিল কর্ম চাঞ্চল্যতা কর্মবীর কৃষক মাস্ক নয় মুখে প্রিয় গামছা জড়িয়ে মাঠে নেমেছে। ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলিয়ে মানুষের আহার জুগিয়েছে। লকডাউনের কারনে মৎস্য খামার, পোল্ট্রি খামারীবৃন্দের লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে।

করোনার ভয়াবহ আক্রমনের কারনে শিক্ষানগরী রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল বন্ধ। কি ক্যাম্পাস আর পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ওঠা ছাত্রাবাস মেসবাড়ি গুলোয় ছিল প্রান্তরের নীরবতা। বিনোদন কেন্দ্রগুলো করছিল খাঁ খাঁ। সর্বত্র এক ভ‚তুড়ে অবস্থা। নগরীর অর্থনৈতিক লাইফ লাইন শিক্ষার্থীরা। এরা না থাকায় এখান কার অর্থনীতির চাকাও থমকে যায়। ফলে বিপাকে পড়ে মানুষ।

করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় অক্টোবরের শেষ প্রান্ত থেকে খুলে দেয়া হয় ক্যাম্পাসগুলো। নিজ গ্রামে বন্দি থাকা শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে প্রিয় ক্যাম্পাসে। মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে। প্রানের উচ্ছাসে ছড়িয়ে পড়ে সব খানে।

এরমধ্যে প্রতি বছরের মত এ বছরও হানা দিয়েছে বন্যা। বছরের নয় মাস ভারত ফারাক্কা দিয়ে পানি আটকে রাখলেও বর্ষার সময় বানের পানির চাপ সামলাতে ফারাক্কা ব্যারেজের সবগেট খুলে এক সাথে বিপুল পরিমান বালি মিশ্রিত ঘোলা পানি এপারে ঠেলে দেয়। মরা পদ্মা জেগে ওঠে। দুপাড় ছাপিয়ে চলে। ভাসায় গ্রাম জনপদ। চালায় দুপাড়ে ভাঙ্গনের তান্ডব। এবারো তার ব্যাতিক্রম হয়নি। পদ্মার দক্ষিনপাড়ে ভাঙ্গনের তীব্রতা ছিল বেশী। চরখানপুর আরো ছোট হয়েছে। এখনকার ফসলি জমি, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ সবি চলে গেছে পদ্মার পেটে। বাঘার চরকালিদাসপুর আরো ছোট হয়েছে। শত শত মানুষ হয়েছে গৃহহীন। নদী ভাঙ্গনে উদ্বাস্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশী আলোচিত সমালোচিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহান। এরমধ্যে নগরী হারিয়েছে বেশ কজন বিশিষ্ট জনকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বোটানী বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট লেখক গবেষক কলামিষ্ট এবনে গোলাম সামাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক উপমহাদেশের খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, রাজশাহীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় আয়কর আইনজীবী মহসীন খান, সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন রাজশাহী বারের সভাপতি প্রবীন আইনজীবী মোজাম্মেল হক, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি ডাঃ মাসুম হাবিবসহ অনেক সুধীজন।
সুখের খবর ছিল এবছরের শেষদিকে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। আনন্দে ভাসে দলের নেতাকর্মীসহ শুভাকাঙ্খিরা। বছরের শেষদিকে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় দেন রাজশাহীর আদালত। বিভিন্ন মামলায় দেড় ডজন আসামীর ভাগ্যে জোটে ফাঁসির আদেশ। যাবজ্জীবন দন্ডাদেশ প্রাপ্ত সংখ্যা ত্রিশ জনেরও বেশী। সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যাও কম ছিলনা। মোবাইল কেড়ে নেওয়ায় অভিমানে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কটুক্তি করায় রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে তার পদ হারিয়ে যেতে হয়েছে কারাগারে । আড়ানি পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলী অস্ত্র-সস্ত্র, মাদক ও নগদ কোটি টাকা নিয়ে ধরা পড়ে এখন কারাগারে। তার পরিনতিও একই রকম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন