স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করল বাংলাদেশ। পাঁচ দশকে অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে বাংলাদেশ দৃষ্টিগ্রাহ্য উন্নতি করেছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে চলেছি। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশের বেশি। করোনা মহামারির মধ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঁচ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৭২-১৯৭৪ অর্থ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮৮ ডলার, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বনি¤œ। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হার ছিল ৩.০৮ শতাংশ। ক্রমান্নয়ে বিভিন্ন পট পরিবর্তন যেমন, গণতান্ত্রিক শাসক, সামরিক শাসক, স্বৈরশাসক অর্থাৎ রাজনৈতিক বিভিন্ন সরকারের আমলে অর্থনীতি উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে। অর্থনীতি কৃষির পাশাপাশি শিল্প ও সেবাখাত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্রমান্নয়ে অগ্রগতি লাভ করছে। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রদর্শনে সমাজতন্ত্রের চাপ ছিল, যেখানে ব্যক্তিখাতের অবদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আশির দশকের মাঝ থেকে পরবর্তী সময়ে ব্যক্তি উদ্যোগে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রতি নজর দেয়া হয়। ফলে ১৯৮৫ সালে সার্বিক বিনিয়োগের ৩৭ শতাংশের মধ্যে ব্যক্তি খাতের অবদান ছিল ৮০ শতাংশ। আমাদের আশেপাশের দেশগুলোর তুলনায় আমাদের প্রবৃদ্ধি এখন ক্রমান্নয়ে ঊর্ধ্বমুখী বলা যায়। ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৫.০৯ শতাংশ। ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সময়কালে বেড়েছে ৬.০২ শতাংশ হারে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বেড়েছে ৭.৪ শতাংশ হারে। এশিয়ার ১২টি দেশের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, আমাদের গড় প্রবৃদ্ধির হার ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ছিল। অর্থাৎ আমাদের প্রবৃদ্ধির হার মোটামুটি সন্তোষজনক। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্জনের মধ্যে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ বর্তমানে অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। ১৯৭৪ সালে যেখানে আমাদের রিজার্ভ ছিল মাত্র ৪২.৫ মিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ৪৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী যে জনসংখ্যা ছিল, ৫০ বছরে তা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। তখন আমাদের কৃষি ও খাদ্যশস্য উৎপাদন সন্তোষজনক ছিল না। বর্তমানে ব্যাপক জনসংখ্যার মঝেও আমাদের খাদ্যশস্যে অভাবনীয় উন্নতি লক্ষ করা যায়।
১। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার এখন ৪০৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৩৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে আমাদের বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তা উত্তরণের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার বিরাট জনসংখ্যাকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুষম বণ্টন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসনের প্রতি সরকারকে নজর দিতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতকে পিছিয়ে নানা সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু সূচকে পাকিস্তানকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, আয় ও আয়ুতে ওই দুই দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
মানুষের বৈশ্বিক গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। বাংলাদেশে এখন তা ৭৩ এর কাছাকাছি। মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর পর দুই বছর ধরে ভারতের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে প্রথম বারের মতো মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। মূলত করোনার কারণেই এটা হয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ইকোনমিক সার্ভে অব পাকিস্তানের মতে, ওই বছর পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৬৭১ ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৭৫১ ডলার। দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। এখন ১৬ কোটিরও বেশি। জনসংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদন তিনগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫০ বছরে কৃষিতে সবুজ বিপ্লব হয়েছে। কৃষির আধুনিকায়ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ৫০ বছরে পণ্য ও সেবা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করেছে বাংলাদেশ।
আমাদের আরেকটি সাফল্য হলো অনাবাসী শ্রমিকে। এ মুহূর্তে এক কোটি বিশ লাখ শ্রমিক বিদেশে অবস্থান করছে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবস্থানও আমাদের বড় অর্জন।
কৃষি থেকে শিল্প ও সেবা খাতে অর্থনীতির ক্রম রূপান্তর ঘটছে। কৃষিতে আধুনিকায়নের পাশাপাশি শিল্পখাত অর্থনীতিতে বিরাট অংশ দখল করে নিয়েছে। পুরো শিল্পখাত জিডিপির প্রায় ৩৫ শতাংশ। ৫০ বছরে রপ্তানি খাতে অগ্রগতি লক্ষণীয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৫ শতাংশর নিচে। ২০১৭ সালে তা ১৫ শতাংশে দাঁড়ায়। ১৯৭৫-১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ মাত্র ৩৮০ মিলিয়ান ডলার পণ্য রপ্তানি করে। এখন বছরে রপ্তাানি হয় ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলারের মোট রপ্তানির মধ্যে পোশাক খাত থেকে এসেছে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ডলার। বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে আছে চীন। দ্বিতীয় স্থানে ভিয়েতনাম। আশির দশকের গোড়ার দিকে পণ্য রপ্তানিতে যুক্ত হয়ে তৈরি পোশাক। বর্তমান সার্বিক রপ্তানিতে ৮১ শতাংশ দখল করে আছে এই খাত। বর্তমানে মোট রপ্তানিতে পোশাক, পাট ও পাটজাতপণ্য কৃষি ও কৃষিজাতপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য ও হিমায়িত খাদ্য প্রায় ৯০ শতাংশ। স্বাধীনতার পরবর্তী রপ্তানি খাত ছিল ২-৩টি পণ্যের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, পাট ও পাটজাতপণ্য, চা ও চামড়াজাত শিল্পই প্রধান রপ্তানিপণ্য ছিল। বর্তমানে ঔষধ রপ্তানিতেও বাংলাদেশ ভালো করছে। বর্তমানে ১১৯টি দেশে বাংলাদেশি ঔষধ রপ্তানি হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাইলফলকে আমাদের অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করলেও এতে তুষ্টির অবকাশ নেই। এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। আমাদের দীর্ঘ পথ চলা আশানুরূপ না হলেও সন্তোষজনক ছিল। তবে সম্ভাবনা ছিল অনেক বেশি। এগুলো আলোচনা-পর্যালোচনার প্রয়োজন। নানা কারণে আমরা আমাদের সম্পদের ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারিনি, দেশকে দ্রæত এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাও কাজে লাগাতে পারিনি। এর মধ্যে বর্তমানে ব্যাংকিং খাত বড় ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখাতের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, ঋণ আদায়ের হার হ্রাস ও বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার অর্থনীতিকে মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। দ্রæত সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্ত হাতে, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সময়োচিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও এ সমস্যার সমাধান না করলে আগামীদিনের বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন দিকে যাবে তা ভেবে দেখতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। আশানুরূপভাবে আমরা এখাতের উন্নয়ন ঘটাতে পারিনি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও এখনো ঢেলে সাজাতে পারিনি। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠি নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তাছাড়া করোনার আগে যারা দরিদ্র ছিল ও করোনার কারণে যারা দরিদ্র হয়েছে তাদের জন্য সরকারের যে সমাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও কার্যক্রম আছে তার ব্যপ্তি, পরিধি ও বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। এক্ষেত্রে কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করা উচিত। গত ৫০ বছরে নানা ধরনের পরির্বতনের মধ্যে গেছে বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা, অবকাঠামোর অভাব ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ার পরও বাংলাদেশের জনগণের টিকে থাকার সক্ষমতা দেশকে সাফল্য এনে দিয়েছে। তবে তার মাঝে যেসব দুর্বলতা যেমন, বেকারত্ব বৃদ্ধি, হাতেগোনা রপ্তানিরপণ্য, পোশাকশিল্পের কাঠামোগত দুর্বলতা, কৃষিকে আধুনিকীকরণের ঘাটতি, কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ও এক্ষেত্রে মধ্যসত্ত¡ ভোগীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধিসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রের অবনতি ও সু-শাসন ও জবাবদিহির অভাবের মতো সমস্যাসমূহ দূর করার জন্য কার্যকর প্রদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী ৫০ বছরের বাংলাদেশের জন্য অংশগ্রহণমূলক টেকসই অর্থনীতির ভিত তৈরির জন্য কতটুকু প্রস্তুতি গ্রহণ করবো তা ঠিক করতে হবে।
৫০ বছরে রপ্তানি খাতে উন্নয়নের জন্য এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন তৈরি করা হয়েছে। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট অর্থরিটি করা হয়। ফিলিফাইন, থাইল্যান্ড, চীনের সফলতার অভিজ্ঞতা নিয়ে এক্সপোর্ট জোন তৈরি করা হয়। ৪০ বছরে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অর্থরিটি (বেপজা) আটটি ইপিজেড করেছে এবং এর আওতায় ২ হাজার দুইশত নব্বই একর জমি উন্নয়ন কমসূচির আওতায় এসেছে। ২০১০ সালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০৪০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সভ্যতার ক্রম বিকাশের জন্য বিদ্যুৎ একটি অপরিহার্য উপাদান। সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে। ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ২৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বর্তমানে ১৪৬টি কেন্দ্র রয়েছে। দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫২৩৫ মেগাওয়াট।
আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও বিদ্যুৎ চাহিদা মিটিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো যেমন, স্বপ্নের পদ্মাসেতু, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মেট্রোরেল, পার্যটকদের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল পথ, কর্ণফুলী নদীতে ট্যানেল, রামপাল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনালসহ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গড়ে উঠছে আগামীর নতুন বাংলাদেশ। এসব প্রকল্প যথাসময়ে সঠিক তদারকির মাধ্যমে, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার সাথে অপচয় রোধ করে সম্পন্ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো, বাজেট বাড়নোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের জন্য এখন থেকে সম্পদের সুরক্ষা, অপচয় রোধ ও সঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে।
আমরা টেকসই উন্নয়নের ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো ও স্মার্ট শহর উন্নয়নের কথা বলছি। এগুলো করতে হলে আমাদের জনবলকে স্মার্ট করতে হবে। সিস্টেমের মধ্যে সকলকে আসতে হবে। আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। অবকাঠামো টেকসই করতে হলে গুণগত মানে তা বানাতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা হতে হবে পরিকল্পিত ও দূরদর্শী। আমাদের বড় বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে বিজ্ঞান ও আধুনিক পরিকল্পিত উন্নয়নদর্শন অনুসরণ করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে সুশিক্ষিত, সৎ, মেধা ও মনন সমৃদ্ধ করে। হতে হবে পরমতসহিষ্ণু। কর্মমুখী ও বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তিমুখী আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে নতুন করে নিজেদের অর্জন ও ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করে দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। জবাবদিহি ও স্বাধীন মত প্রকাশের পরিবেশ সংকুচিত হচ্ছে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠি এখনও দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। আয় ও সম্পদের বৈষম্য আগের চেয়ে বেড়েছে। একই সময়ে দুর্যোগকালীন সংকট মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতির বিষয়গুলো নিয়েও ভাবতে হবে। আমাদের এসডিজির যাত্রা শুরুর সময় ২০১৬-২০ পর্যন্ত আমাদের সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা চলমান ছিল। বর্তমানে অষ্টম পঞ্চ বার্ষিক (২০২১-২৫) পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আগামীতে নবম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগোতে হবে।
আমাদের সাফলকে আরও সংহত করতে হলে দূর করতে হবে বৈষম্য। বৈষম্য এখন সমাজ ও অর্থনীতির মধ্যে অবশ্যম্ভাবী বিষয় হয়ে উঠেছে। এটা আমাদের স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। গত ৫০ বছরে আমাদের যে সফলতা এসেছে তার সুফল সবাই সমানভাবে পাচ্ছে না। সমাজে শুধু অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের সুযোগেও বৈষম্য দেখা দিয়েছে। আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গঠন করতে হলে এখন থেকে এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সুষ্ঠু ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগোতে হবে। যুব সমাজ হলো আমাদের বিরাট শক্তি। এই শক্তিকে প্রযুক্তি ও দক্ষতায় উন্নত করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে। পরমতহিষ্ণু জাতি গঠন, আধুনিক শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নের মধ্য দিয়ে কৃষি ও শিল্পের অগ্রগতি বাংলাদেশকে উন্নত ও টেকসই উন্নয়নের দিকে ধাবিত করবে।
লেখক: ব্যাংকার
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন