থার্টি ফাস্ট নাইট ঘিরে সৈকতে নেই বাড়তি কোনো আয়োজন। তারপরও পুরনো বছর বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় ঢল নেমেছে পর্যটকদের। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠছেন তারা। আবাসিক সঙ্কট ও অতিরিক্তি ভাড়া নিয়ে অনেকের অসস্তোষ থাকলেও নিরাপত্তা আর আতিথিয়তায় মুগ্ধ পর্যটকরা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি কক্সবাজারে ধর্ষণসহ কিছু নেতিবাচক ঘটনায় এবার নড়েচড়ে বসেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। পর্যটকরা যেন নির্ভয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে পারেন সেজন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি নারী পর্যটকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, কক্সবাজারে ৪৫০ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত যাপন করতে পারবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ সবসময় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে প্রত্যেক বিনোদন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তবে এবারেও সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যে, উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফাস্ট নাইটের কোনো আয়োজন করা যাবে না। তাই কক্সবাজারেও উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানান, পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একাধিক বৈঠকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুধু থার্টি ফার্স্ট নাইট বা বর্ষবরণ নয়, ভরা পর্যটন মৌসুমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবেন এটি।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার সভাপতি আনোয়ার কামাল জানান, এবারে থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে এ পর্যন্ত ৭০-৮০ ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজন হচ্ছে না। নতুন বছর ভালোভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস এবার একটি বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। তা হচ্ছে রুমে দু’জনের জায়গায় তিনজন, তিনজনের জায়গা চারজন। এভাবে প্রতিটি রুমে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হবে না। নিয়ন্ত্রিত মূল্যে সব রুম বুকিং দেওয়া হচ্ছে। তিনি কোনো দালালের মাধ্যমে হোটেল বুকিং না দেওয়ার জন্য পর্যটক অতিথিদের প্রতি অনুরোধ করেন।
আবাসিক হোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, এখন সব হোটেল অনলাইনে বুকিং নিচ্ছে। তাই কোনো দালালের কাছে না গিয়ে সরাসরি হোটেল বুকিং দিলে সাশ্রয় রেটে রুম পাওয়া সম্ভব।
এদিকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভ‚মি সাগর কন্যা কুয়াকাটার সৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে বিরাজ করছে। বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকদের আগমনে সর্বত্রই উৎসবের আমেজ বইছে। আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, ঝিনুকের দোকান, শুটকির দোকানসহ পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেচা-কেনার ধুম পড়ে গেছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন সৈকতে একটি বাড়তি আকর্ষণ ছিল। আনন্দের এ স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অনেকেই নিজ নিজ ব্যবহৃত মোবাইল সেট ও ক্যামেরায় ছবি ধারণ করে রেখেছে। ঠাÐা বাতাস বইলেও ওইসব পর্যটকরা সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে উল্লাস করে গোসল করছেন অনেকেই। এ সময় অনেককেই ছোট ছোট নৌকা নিয়ে সাগরে ভেসে বেড়াতে দেখা গেছে।
পর্যটকরা জানান, ২০২১ সালের দুঃসহ সব স্মৃতি ধুয়েমুছে ২০২২ সালের সূর্যোদয়ের সঙ্গে একটি নতুন পৃথিবী দেখার প্রত্যাশা তাদের। তারা চান নতুন বছর করোনামুক্ত পৃথিবী হোক। তারা আরও জানান, করোনা পরিস্থিতির পর দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। বছরের শেষ ও নতুন বছরের আগমনটা উপভোগ করতে আসা কুয়াকাটায়।
এদিকে থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে কুয়াকাটায় কোন আয়োজন না থাকলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে এসেছে হাজারো পর্যটক। আগামী দু’চার দিন এরকম চাপ থাকবে। তবে কিছু কিছু অভিজাত হোটেলে থার্টিফাস্ট নাইটে পর্যটকদের লাইভ কনসার্ট, ডিজে পার্টি ও ফানুস উৎসবের আয়োজন করেছে বলে ট্যুরিজাম ব্যবসায়ীরা জানান।
পর্যটক তানভির হাসান বলেন, শহরের এক ঘেয়ে জীবন থেকে একটু পরিত্রাণ পেতে স্বপরিবারে কুয়াকাটায় এসেছি। এখানে প্রকৃতির গড়া নির্মল শোভা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। বছরের শেষ সূর্যাস্ত সাগরের মাঝখানে নিমজ্জিত হতে দেখেছি। আশা করি এ সৈকতে দাঁড়িয়ে ২০২২ সালের প্রথম সূর্যোদয় দেখব। অপর এক পর্যটক মিজানুর রহমান বলেন, সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিয়েছে আমাদের। এখানকার ছবি আমার ফেইসবুকেও আপলোড করে দিয়েছি।
কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম হাওলাদার জানান, সমিতির আওতাভুক্ত আবাসিক হোটেলের সকল রুমই বুকিং হয়ে গেছে। তবে পর্যটকের ভিড়কে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল খালেক বলেন, ইংরেজি নতুন বছর বরণে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটেছে। পর্যটকের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দর্শনীয় স্পটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিতেও রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন