নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবসে দেশের শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। অর্ধডজন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। গতকাল ডিএসইর পাশাপাশি অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। একইসঙ্গে দাম বেড়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
এর আগে সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালের শেষ চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। ফলে বছরের শেষটা যেমন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য খুশির ছিল, তেমনই নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবসটাও হলো আনন্দদায়ক।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রি-ওপেনিং পদ্ধতি চালু থাকায় নতুন বছরের লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়িয়ে ক্রয়-বিক্রয় আদেশ দেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২১ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
লেনদেনের শুরুতে দেখা দেয়া এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে লেনদেনের পুরো সময়। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকা দাম বাড়ার তালিকা। একইসঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। ফলে সূচকের উল্লম্ফন দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৮৫৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৯৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৯৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪৭ কোটি ৭৯ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-আইএফআইসি ব্যাংক, জিএসপি ফাইন্যান্স, সোনালী পেপার, ওয়ান ব্যাংক, জিনেক্স ইনফোসিস, ডেল্টা লাইফ ও পাওয়ার গ্রিড।
ডিএসইতে ২৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৪টির। আর ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশের ওপরে। আর পাঁচ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এমনকি এক পর্যায়ে এই পাঁচ কোম্পানির শেয়ারের বিক্রেতাও উধাও হয়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে-আরএন স্পিনিং, ফরচুন সুজ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও লাভেলো আইসক্রিম।
বছরের প্রথম কার্যদিবসে সবকটি খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়লেও বস্ত্র, ব্যাংক, অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং খাত এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাপট একটু বেশি দেখা গেছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া বস্ত্র খাতের ৫৫টির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে তিনটির। ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটির শেয়ার দাম কমার বিপরীতে দাম বেড়েছে ২৬টির। আর্থিক খাতের ১৮টির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে একটির। ২৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে দুটির। আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২০টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে তিনটির।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৮৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪১টির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন