টানা আট কার্যদিবস পতনের পর দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলিছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ। আর দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ডিএসই’র পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। এর আগে আট কার্যদিবসের টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৫৫৫ পয়েন্ট। শেয়ারবাজারে এমন দরপতন হওয়ায় গত রোববার লেনদেন শেষে মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগে বিনিয়োগকারীরা তাদের নিজস্ব তহবিলের ৮০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ মার্জিন ঋণ নিতে পারতেন। বিএসইসির নতুন নির্দেশনার ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের নিজস্ব তহবিলের সমপরিমাণ মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন।
বিএসইসি থেকে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানোর পাশাপাশি গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সিনিয়র অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে শেয়ারবাজার ভালো করতে দিকনির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের অভিঘাত থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় নতুন করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থা চলায় সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব দেশের শেয়ারবাজারসহ অর্থনীতির কোনো খাতে না পড়ে সেই বিষয়ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে শেয়ারবাজার খুলতেই ডিএসই’র প্রধান সূচক প্রায় ৫০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। আর লেনদেনের দুই মিনিটের মাথায় সূচকটি একশো পয়েন্ট বেড়ে যায় এবং লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় বাড়ে ১৩৪ পয়েন্ট। লেনদেনের একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি ১৪৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষদিকে এসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা কমে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ২৬১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩০৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৯০ শতংশ বা ৩৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯টির। আর ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৮২ কোটি ২১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শাহিনপুকুর সিরামিকের ৩৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এসিআই ফরমুলেশন, ফরচুন সুজ, ওরিয়ন ফার্মা এবং আরডি ফুড। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩২২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫১টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন