শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

মুসলিহে উম্মাহ হযরত মাওলানা ইদরীস সন্দ্বীপী (রহ.)

মুহাম্মদ জিয়াউল হক | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

মাদরাসা প্রতিষ্ঠা: বৃক্ষের শাখায় শাখায় পত্রপল্লব: দারুল উলূম দক্ষিণ সন্দ্বীপে শিক্ষক থাকা অবস্থায় তিনি নিজ গ্রাম সন্তোষপুরে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘ইলহাম’ প্রাপ্ত হন। তাই সেখান থেকে অব্যহতি নিয়ে নিজ গ্রামে কিছু জমি ক্রয় করেন এবং সেখানে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই হযরতের হাতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মাদরাসা। দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্ররা ‘দ্বীনি ইলম’ অন্বেষণের জন্য মৌমাছির মতো ছুটে আসতে থাকে। এই মাদরাসার প্রাথমিক অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে হযরতের প্রথম যুগের ছাত্র মাওলা আব্দুল গনী সাহেব বলেন, ‘শুরুতে অতি কষ্টে চলতো মাদরাসাটি। আখের পাতা দিয়ে ঘরের বেড়া দেয়া হয়েছিল। হযরত একাই প্রায় সাড়ে তিনশত ছাত্রের ‘শরহেজামী’ পর্যন্ত ক্লাস নিতেন।’ অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, শিক্ষক সংকট ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে অধ্যাপনার দায়িত্বসহ আনুষাঙ্গিক সবকাজ তিনি একাই আঞ্জাম দিতেন।

দ¦ীন প্রচারেÑ দ্বীপ থেকে শহরে: প্রায় ত্রিশ বছর সন্দ্বীপে দীনি তা’লিম ও তরবিয়ত প্রদানের মাধ্যমে হাজারো আলেম তৈরি করেন। আল্লাহ তা’্আলা হযরতের অন্তরে ঢাকা ও তার পাশর্^বর্তী এলাকাগুলোতে দ্বীনি শিক্ষা প্রদানের প্রচণ্ড আগ্রহ সৃষ্টি করে দেন। ফলে তিনি প্রথমে নরসিংদী জেলার ইসলামপুরে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সাত বছর পর্যন্ত প্রতি রমযানে হযরত সেখানেই ই’তিকাফ করতেন। ইসলামপুর মাদরাসা যখন মোটামুটি জমে উঠে তখন তিনি দীনদার শুভানুধ্যায়ীদের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটা মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তারপর বহু কাক্সিক্ষত দারুল উলূম মাদানীনগর মাদরাসার ভিত্তি স্থাপিত হয় ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৪ সালে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিশ^খ্যাত বুযুগর্, শাইখুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর বড় সাহেবযাদা ‘ফিদায়ে মিল্লাত’ হযরত মাওলানা আস’আদ মাদানী রহ. মাত্র ষোলজন ছাত্র নিয়ে শুরু হওয়া জামি‘আর পথচলা; আজ সেখানে শিক্ষার্জন করছে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী।

সফর: নৌপথে বাইতুল্লাহ যিয়ারতে: ১৯৬৭ সালে চট্রগ্রাম থেকে নৌপথে পাকিস্তানে তাবলিগের মারকাজ রায়বেন্ডে গমন করেন। তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বী মাওলানা ইনআমুল হাসান রহ.সহ হজব্রত পালনে সৌদিআরবে দুই মাস অবস্থান করেন। এই সময় তিনি ‘মুআল্লিমুল হুজ্জাজ’ এর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে কাকরাইলের হযরত মাওলানা লুৎফুর রহমান রহ. ও শীর্ষ মুরুব্বীদের জামাতের সাথে দ্বিতীয়বার হজ আদায় করেন। তিনি প্রায় ১২ বার হজ ও উমরা পালনের সৌভাগ্য অর্জন করেন।

ভিনদেশে দ্বীনি সফর: হযরত সন্দ¦ীপী রহ. ১৯৯১ সালে লন্ডন ও আমেরিকা সফর করেন। প্রথমে লন্ডনে গমন করেন। এই সময় তিনি লন্ডনে অবস্থানরত মুসলমানদের উদ্দেশে মসজিদে ও ইসলামি সেমিনারে বক্তব্য প্রদান করেন। লন্ডনের সফর শেষে হযরত আমেরিকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানকার মানুষদের স্বতস্ফূর্ত সহযোগীতায় নিউইয়র্কে একটি মাদরাসাও প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকায় বসবাসরত মুসলমানের মাঝে আত্মশুদ্ধিমূলক আলোচনা রাখেন। ১৯৯৫ সালে আবারও আমেরিকা, কানাডা, আরব আমিরাত ও সৌদিআরব ভ্রমণ করেন।

ইন্তেকাল: অস্তাচলে কালের সূর্য: আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে এই মহান মনীষী ২৬ নভেম্বর, ২০০২ সাল। রমযান মাসে সকাল ৯টায় পরম করুণাময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। এক স্ত্রী, চার কন্যা, সাত পুত্র ও অসংখ্য ভক্তবৃন্দ রেখে গেছেন।

হযরতের মৃত্যুর সংবাদ মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক, দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। পথ-ঘাট লোকেলোকারণ্য হয়ে যায়। তিলধারনের ঠাঁই ছিল না। জানাযার ইমামতি করেন বড় সাহেবযাদা হযরত মাওলানা হাফেয ফয়জুল্লাহ সন্দ্বীপী। উপস্থিত ছিলেন বাইতুল মোকাররমের খতিব মাওলানা উবাইদুল হক সাহেব। মাদানীনগর মাদরাসা মাঠের পশ্চিম পাশে, মসজিদের কোল ঘেষে সবুজ উদ্যানে দাফন করা হয়। তিনি আজ আমাদের মাঝে নই, রয়েগেছে তাঁর সমুজ্জল কীর্তিগুলো। আল্লাহ তাঁর কবরকে নূর দ্বারা পূর্ণ করে দিন।
লেখক : ভাইস প্রিন্সিপাল. মদিনা মাদরাসা
শ্রীরামপুর বাজার, রায়পুরা, নরসিংদী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন