ডিলান হাসান : সাংবাদিক দাবিকারী এবং সাংবাদিকতা কী করিয়া করিতে হয়, এমন ছবকদানকারী ‘ব’ আদ্যাক্ষরের নবীন এক নায়িকার বিবাহ ও মাতা হইবার সংবাদে চলচ্চিত্রের সবে ধন নীলমনি তালব্য ‘শ’ আদ্যাক্ষরের নায়কটি বেশ রাগিয়া, চটিয়া ফাটিয়া গিয়াছেন। নায়িকাটিকে লইয়া ইতোমধ্যে তিনি তার নতুন একখানা জুটি করিবার মানসে একটি মিশন লইয়াছিলেন। ভাবিয়া ছিলেন, দীর্ঘদিনের ‘অ’ আদ্যাক্ষরের নায়িকাটির সহিত জুটি বাঁধিয়া যথেষ্ট সিনেমা করা হইয়াছে। দর্শকের নিকট একঘেয়ে হইয়া উঠিয়াছে, এইবার উহাকে ক্ষান্ত দেওয়া প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু চাহিলেই তো আর হুট করিয়া তাহার যোগ্য নায়িকা পাওয়া যায় না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ‘ব’ আদ্যাক্ষরের নায়িকাটিকে জোগাড় করিয়াছিলেন। যেহেতু নায়কটি একটি বনের একজন রাজা বনিয়া গিয়াছেন, তাই তাহার পছন্দ করা নায়িকাটিকে লইয়া এক ধরনের হুলুস্থুল পড়িয়া যায়। আলোচনাও জমিয়া উঠে। কাল বিলম্ব না করিয়া উহাকে লইয়া জুটি বাঁধিয়া দুইটি সিনেমাও করিয়া ফেলেন এবং মুক্তিও পাইয়া যায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হইল, সিনেমা দুইটি আশানুরূপ ব্যবসা সফল হয় নাই এবং নায়িকাটিও তার দুর্বল অভিনয়ের কারণে দর্শকের মন গলাইতে ব্যর্থত হইয়াছেন। তাহার পরও নায়িকা সংকটে পড়িয়া খাবি খাওয়ার উপক্রম নায়কটি উহাকে লইয়াই একের পর এক সিনেমা করিবার জন্য মনস্থির করিয়াছিলেন। উহার আচরণ দেখিয়া যে কাহারো মনে হইবে, সিনেমার জন্য উহা একাই যথেষ্ট, শুধু শোপিস হিসেবে একজন নায়িকা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, তাহার দীর্ঘদিনের নায়িকা ‘অ’-কে দূরে ঠেলিয়া ‘ব’-কে লইয়া নতুন জুটি করিবার প্রবণতা তাহার মধ্যে পরিলক্ষিত হইয়া উঠে। তাহার লক্ষ্য যখন এই, তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই ‘ব’-এর একাধিক বিবাহ ও সন্তানের মাতা হইবার সংবাদ শুনিলেন। এমন এক নায়িকাকে লইয়া যাহারা তাহার সঙ্গে জুটি বাঁধিবার জন্য উঠিয়া-পড়িয়া লাগিয়াছিলেন, তাহাদের উপর তিনি বেশ চটিয়া গেলেন। কেন তাহাকে বিবাহিত এক নায়িকার সহিত জুটি বাঁধিতে উৎসাহ এবং তৈল মর্দন করিয়াছিল, উহার জন্য তাহাদের উপর রাগিয়া ফাটিয়া পড়েন। ভাবখানা এমন নতুন জুটি করিবার ক্ষেত্রে এত বড় ধোঁকা তাহারা কী করিয়া দিল! নায়িকার বিবাহ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরটি তাহার ফেসবুকে কে বা কাহারা আঁটিয়া দেওয়ায়, তিনি আরও রাগিয়া যান। রাগিয়া দীর্ঘদিন ধরিয়া তাহার ফেসবুক পরিচালনাকারীকেই দায়িত্ব থেকে সরাইয়া দেন এবং নতুন আরেক জনের উপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। সত্য বটে, তাহার নতুন জুটি করিবার এই উদ্যোগ প্রারম্ভেই হোঁচট খাইবে, উহা মানিয়া লওয়া কষ্টকর। এই দিকে, ‘ব’ নায়িকাটি উহার বিবাহ হয় নাই, সন্তানের মাতা হন নাই, নাতি-নাতনির দাদী মা-ও হন নাই বলিয়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এন্তার বক্তব্য দিয়া এক ধরনের সোরগোল তুলিয়া চলিয়াছেন। নিজেকে সাংবাদিক দাবী করিয়া কীভাবে সাংবাদিকতা করিতে হইবে উহাও নসিহত করিয়া বেড়াইতেছেন। তবে তিনি কবে কোথায় সাংবাদিকতা করিয়াছেন, তাহা ভাবিয়া সাংবাদিক সমাজ কোনো কূলকিনারা করিতে পারিতেছে না। তবে যতদূর জানা যায়, তিনি এক কালে সংবাদ পাঠ করিতেন। ফলে বিজ্ঞ সাংবিদকগণ প্রশ্ন তুলিয়াছেন, সংবাদ পাঠ আর সাংবাদিকতা কী করিয়া এক হয়? একজন সাংবাদিককে সরজমিনে সংবাদ সংগ্রহ করিয়া প্রতিবেদন তৈরি করিতে হয়, সম্পাদনা করিতে হয়, এমনকি মন্তব্য প্রতিবেদনও করিতে হয়। একজন অতি সাধারণ মানুষও জানেন, একজন সংবাদ পাঠক বা পাঠিকা কেবল ঐসব সংবাদ পাঠ করিয়া যান। পাঠ করা ছাড়া সংবাদ তৈরি ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে তাহার কোনো ভূমিকা থাকে না। তাহার দাবি মোতাবেক তিনি যদি সংবাদিক হইয়া থাকেন, তবে তো একজন পত্রিকা পাঠক যিনি সংবাদ পড়েন, তিনিও সাংবাদিক! নায়িকাটি শিক্ষা-দীক্ষায় নিজেকে অতি উত্তম বলিয়া দাবি করেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হইল, সাংবাদিক কে, এ সহজ বিষয়টি তিনি বুঝিতে অক্ষমতার পরিচয় দিয়া বেড়াইতেছেন এবং বিনোদন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের নসিহত করিতেছেন। উহাতে অনেক সাংবাদিক হাসিয়া বলিয়াছেন, বিবাহ সংক্রান্ত সংবাদ ছড়াইয়া পড়িবার পর, নায়িকাটি বিচলিত হইয়া পড়িয়াছেন। তাই সাংবাদিকতা সম্পর্কে কটূ মন্তব্য এবং অজ্ঞতা প্রসূত বক্তব্য দিয়া বেড়াইতেছেন। তাহার পক্ষ লইয়া অনেকে প্রশ্ন তুলিয়াছেন বিবাহ করা কি দোষণীয় কিছু কিনা? এমন প্রশ্ন শুনিয়া চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ জবাবে বলিয়াছেন, বিবাহ করা কোনো কালেই দোষণীয় কিছু নয়। তবে আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের ধারাটাই এমন যে, দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বিবাহিত নায়ক বা নায়িকাকে দর্শক খুব একটা গ্রহণ করেননি। যদি তাই হইতো তবে নায়ক-নায়িকারা সকলেই বিবাহিত হইতেন। বিবাহ লইয়া বাদ-প্রতিবাদ, লুকোচুরি বা গোপনীয়তা অবলম্বন করিতেন না। সকলেই স্বগৌরবে ঘোষণা করিতেন আমি বিবাহিত। এমনকি ‘ব’ আদ্যাক্ষরের নায়িকাটিকেও তারস্বরে চিৎকার করিয়া বলিয়া বেড়াইতে হইত না, আমি বিবাহিত ও সন্তানের মাতা নই। কিংবা তিনি অবিবাহিত-এই কথা প্রমাণ করিবার জন্য উঠিয়া-পড়িয়া লাগিতেন না। কারণ তিনি নিশ্চয়ই অগত হইয়াছেন বা তাহাকে জানানো হইয়াছে, বিবাহ করিলে কশ্মিনকালেও স্বীকার করা যাইবে না। কারণ বিবাহিত নায়ক-নায়িকারা আমাদের দেশের দর্শকের কাছে কখনোই কদরনীয় নহে, গ্রহণ করা তো অনেক দূরের কথা। যাহারা প্রশ্ন তুলিয়া বলেন, বিবাহ করা দোষণীয় কিনা, তাহাদের যে আমাদের চলচ্চিত্রের ধারা সম্পর্কে যৎকিঞ্চিত ধারণা নাই, তাহা তাহাদের এই প্রশ্ন উত্থাপন থেকেই বোঝা যায়। তাহাদের কথা মতো যদি ধরিয়া নেয়া হয়, তবে ‘ব’ নায়িকাটির যদি বিবাহ হইয়া থাকে, তাহা হইলে তাহার স্বীকার করিতে অসুবিধা কোথায়? যুক্তি আসিতে পারে, তিনি বিবাহিত হইলেই না স্বীকার করিবেন। এ কথার বিপরীতেও কথা আসিতে পারে, বিবাহিত না হইলে এত বিচলিত হইয়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ধর্ণা দিয়া বলার বা প্রমাণের কী প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে যে, আমি বিবাহিত নই। তবে আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসটিই এইরকম যে, কোনো কিছুই লুকায়িত থাকে না। এক সময় না এক সময় প্রকাশিত হইয়া পড়ে। এ যাবৎকালে বিনোদন সাংবাদিকগণ প্রেম-বিবাহ সংক্রান্ত ঘটনা লইয়া যাহাদের কথাই লিখিয়াছে, উহার কোনোটাই বৃথা যায়নি। যদি ‘ব’ আদ্যাক্ষরের নায়িকাটির বিবাহ সংক্রান্ত খবরটি অসত্য হইয়া থাকে, তবে উহাই হইবে চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের এ যাবৎকালের বিফল সংবাদ। এ কথাও বলা প্রয়োজন, অপেক্ষা করিতে দোষ কি! যাহাই হউক, অনেক কথাই বলা হইয়াছে। যে কোনো বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষ থাকে এবং থাকিবে। সুযুক্তি এবং সুতর্ক দিয়াই উহার উত্তম-অধম নির্ধারিত হয়। উহাই বাঞ্চনীয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন