দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মনোরম পরিবেশের জন্য এটি সবার থেকে আলাদা। এর যেমন রয়েছে যশ খ্যাতি, তেমন রয়েছে ভক্তও। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ছাড়াও অনেকের কাছে প্রিয় এ ক্যাম্পাস। আর সবার পছন্দের ক্যাম্পাস হবেই বা না কেন? এর মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, বটতলা, ছায়ামঞ্চ আর পাখিভরা লেক তো অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাইতো প্রতিদিন ছুটে আসেন হাজার হাজার দর্শক। আর নাট্যোৎসব, পাখিমেলা, প্রজাপতি মেলা, পিঠা উৎসবের মত আয়োজনে থাকে উপচেপড়া ভিড়। এমন হাজারো ভক্তের মধ্যে রয়েছে নিপা, হ্যাপী, ময়না, মুনাজির আর আলামিনের মতো শিক্ষার্থীরা। ওরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের শিক্ষার্থী হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর এমন মনোরম পরিবেশ নেই ওদের। কর্মব্যস্ত শাহরে এমন পরিবেশ পায় না ওরা। তাই ছুটে এল জাবি ক্যাম্পাসে।
তখন সকাল ১০টা বাজে। হঠাৎ মিতুর (ছদ্মনাম) ফোন, ‘এই আমরা তোদের ক্যাম্পাসে। জলদি আয়; আমরা বিজ্ঞান কারখানার সামনে।’ আমি, মুহিব আর নয়ন গেলাম ওখানে। হ্যাপী আর ময়না ছিল মুহিবের পূর্ব পরিচিত। ঠিক হলো সবাই প্রথমে বটতলায় চা খাব। ব্যাস, চা খেতে খেতেই জমে উঠল আড্ডা। সবার অভিভাবক হয়ে ওঠে ময়না। নানান কাজে বাধা দেয় সে। ওদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলে মারুফ। মাঝে মধ্যেই গেয়ে ওঠে দু-এক লাইন গান। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হলেও তার বয়স তেমন মনে হয়না। নতুন কেউ এ সালাম দেয়ার জন্য বলা হয় তাকে। বেচারা বেশ ভদ্রলোক; হাসি-ঠাট্টা তার অন্যতম সঙ্গী। চা খাওয়ার পর শুরু হল ঘোরাঘুরি। মারিয়া, সপ্নিল আর আদনানের প্রস্তাব সবাই মিলে ক্যাম্পাস ঘুরবে। ৭০০ একরের ক্যাম্পাস বলে কথা। হেঁটে যাওয়ায় সবাই নারাজ। হ্যাপীর দাবি, ‘যা হোক ভ্যানে চড়া হবে’। প্রথমে সুইমিং পুল যাবে সবাই। অমনি সাঁতারের ইচ্ছা অনেকের। সুইমিং পুলে পানি না থাকায় তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে হাটুজলে সাঁতার কাটতেও প্রস্তুত ছিল হ্যাপী। সুইমিং পুলের পাশেই বড় লেক, যাতে শীতের সময় আসে অসংখ্য পাখি। পাখির কলকাকলিতে তখন মুখরিত হয় ক্যাম্পাস।
এবার দুপুরও হয়েছে, পেটেও খিদে পেয়েছে। তাছাড়া হরেক রকমের ভর্তা, ভাজি আর বিভিন্ন ধরনের খাবারের গন্ধে চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ। ছাত্তার ভাইয়ের ভাতের হোটেলে বসলাম সবাই। বিভিন্ন রকম ভর্তা, ভাজি, মাছ-গোস্তে ভূরিভোজ হলো সবার। বিশ্রামের পর আবার যাত্রা শুরু। ক্যাম্পাসের সুইজারল্যান্ড, ট্রান্সপোর্ট, লন্ডন ব্রিজ, টারজান পয়েন্ট ঘুরে এসে সবাই ক্লান্ত। ক্লান্ত হবারও যথেষ্ট কারণ আছে। ঘুরতে ঘুরতে সবার কণ্ঠে ছিল হাসি আর গানের স্পর্শ। কেউ গান ধরে, কেউ হাত তালি দেয়; কেউ আবার কৌতুকজুড়ে দেয় এর সাথে। সাথে আছে ছবি তোলা আর সেলফি। সব মিলিয়ে ছেলেবেলার এক আনন্দময় দিন যেন খুঁজে পেল সবাই। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। সবাই এবার ফিরে যাবে আপন নীড়ে। আবার বাসে চেপে বসল সবাই। সমস্ত দিন শেষ হল; সবাই পেল কিছু স্মৃতি। এমন আনন্দেও স্মৃতি যেন ভুলে যাওয়ার নয়। মিতুর কণ্ঠে, ‘দিনটি যদি আরো বড় হতো!’
ষ মুুহাম্মদ মূসা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন