উত্তর : শীতকালে অধিকহারে এদেশের গ্রামে-গঞ্জে ও শহরে ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এর উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই হচ্ছে উঠতি বয়সের যুবক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তাছাড়া মসজিদ, মাদরাসা কেন্দ্রিক হাফেয ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান উপলক্ষে বার্ষিক ইসলামী সম্মেলন, ইসলাহী জোড় ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে থাকে। এই দিনী মাহফিলগুলো সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে আরো ফলপ্রসূ হতে পারে। শুধু রেওয়াজ না বানিয়ে মানুষদেরকে আল্লাহমুখী করার ফিকির করা দরকার। এ বিষয়ে ইতিহাসখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজালী রহ. ‘আয়্যূহাল ওলাদ’ কিতাবটিতে কিছু সুন্দর দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এর চুম্বুকাংশ এখানে তুলে ধরা হলো- প্রচলিত বক্তা ও ওয়ায়েয হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। কারণ এর অনেক ক্ষতি রয়েছে। তবে তুমি যা বলবে সে বিষয়ে যদি নিজে আমল করতে পার তাহলে মানুষকে সে বিষয়ে ওয়ায করতে পার। আর হযরত ঈসা আ.কে যা বলা হয়েছিলো সে বিষয়ে চিন্তা করো। তাকে বলা হয়েছিলো- হে মারয়াম পুত্র ঈসা! যদি নিজে উপদেশ অনুযায়ী আমল করতে পার তাহলে মানুষকে উপদেশ দাও। অন্যথায় আপন রবকে ভয় কর। কিন্তু এ বিষয়ে যদি অভ্যস্ত হয়ে থাকো তাহলে দু’টি অভ্যাস পরিহার করে চলবে। (ক) কথা বলার ক্ষেত্রে লৌকিকতা পরিহার করবে। ছন্দ ও সুর তরঙ্গ মিলিয়ে কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। কারণ লৌকিকতা প্রদর্শনকারীকে আল্লাহ অপছন্দ করেন। লৌকিকতার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন একথাই প্রমাণ করে যে, তার কলব নষ্ট হয়ে গেছে এবং সে গাফলতের মাঝে রয়েছে। ওয়ায ও উপদেশের উদ্দেশ্য হলো পরকালের আযাব ও শাস্তির কথা স্মরণ করা। জীবনের যে সময়গুলো নষ্ট হয়েছে, তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে চিন্তা করা। যদি মৃত্যুর সময় ঈমান নসীব না হয় তাহলে কী ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে? মৃত্যু যন্ত্রনার কথা চিন্তা করা। কোন্ অবস্থায় না জানি মুত্যুর পরওয়ানা নিয়ে ফেরেশতা হাযির হয়ে যায়।কবরের বিভিন্ন অবস্থার কথা চিন্তা করা। কবরে মুনকার নাকীরের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রস্তুতি কী আমি নিয়েছি? কবর কি আমর জন্য জান্নাতের বাগিচা হবে না জাহান্নামের গর্ত? ইত্যাদি। কিয়ামত দিবসের ভয়াবহ অবস্থা, বিভিন্ন ঘাঁটি এবং কিয়ামত দিবসে নিজের অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা করা। আমি কি পারবো পুলসিরাত নির্বিঘ্নে পার হতে না পড়ে যাবো ভয়াবহ জাহান্নামের জ¦লন্ত অগ্নিকুণ্ডে? সবসময় এ বিষয়গুলো মনে মনে স্বলণ করতে থাকবে যেন বিষয়গুলো তোমাকে ব্যাকুল ও অস্থির করে তোলে। এসব বিপদ-আপদ ও ভয়াবহ অবস্থা এবং জাহান্নামের ভয়ংকররূপ ও কঠিন আযাব সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাকেই তাযকেরা বা উপদেশ বলে। সুতরাং মানুষের সামনে এসব বিষয় তুলে ধরতে হবে। এবং এ সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করতে হবে। এ জাতিয় বিষয়ে মানুষের শিথিলতা, উদাসীনতা ও গুরুত্বহীনতার বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করতে হবে। যেন জাহান্নামের ভয়ংকর আগুনের উত্তাপ মজলিসের সকলেই অনুভব করতে পারে। বক্তাগণ এসব অবস্থার কথা এমনভাবে তুলে ধরবেন যেন আযাব ও শাস্তির ভয় সবাইকে ভীত শংাকত করে তুলে। ফলে তারা আল্লাহর আনুগত্যে জীবন অতিবাহিত না করার কারণে অতীত জীবনের প্রতি অনুতপ্ত হবে। সাধ্যমত স্বীয় জীবন শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এই পদ্ধতিতে উল্লেখিত বিষয়গুলো আলোচনা করাকে ওয়ায বলে। সুর করে, ছন্দ মিলিয়ে উপদেশ দেয়ার নাম ওয়ায নয়। মনে কর তুমি দেখতে পেলে, বাঁধ ভেঙ্গে কোনো গ্রামে পানির ঢল নেমে আসছে। এ বিষয়ে গ্রামবাসী কিছুই জানে না। তখন কি তুমি লৌকিক সুর সৃষ্টি করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে বিষয়টি তাদেরকে অবগত করবে? না শুধু চিৎকার করতে থাকবে পানি... পানি...! অবশ্যই তুমি তখন কোনো সুর ও ছন্দ ছাড়াই ডাকবে। বক্তা ও উপদেশকারীর অবস্থাও এই সতর্ককারীর মতো। মানুষদেরকে জাহান্নামের পথ থেকে জান্নাতের পথে আহ্বান করবে।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ জিয়াউল হক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন