সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগে স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তদন্ত শুরু করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তদন্তে বেশ অগ্রগতিও আছে। তবে তিনি (মুরাদ) আত্মগোপনে থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। থানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিডিতে বিবাদীর ঠিকানা দেয়া আছে ধানমন্ডি। আর সেখানে তিনি নেই। তাই তাকে খোঁজা হচ্ছে। তদন্তে বেশ কিছু অগ্রগতিও আছে।
গত ৬ জানুয়ারি জাহানারা এহসান রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় তার স্বামী মুরাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে জিডি করেন। এর দুইদিন পর তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এসআই রাজীব হাসান জিডি তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মামুনুর রশিদ জিডি তদন্তের অনুমতি দেন।
গতকাল ধানমন্ডি থানার ওসি একরামুল মিয়া বলেন, জিডি তদন্তের অনুমতির পর একজন সাব-ইন্সপেক্টর এটা নিয়ে কাজ করছেন। তদন্ত চলছে, অগ্রগতিও আছে।
জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাজীব হাসান বলেন, ‘বিবাদী (ডা. মুরাদ হাসান) ঘটনার দিন কি ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন তা আমরা তদন্ত করছি। এ ব্যাপারে বাদীর স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে। তবে বিবাদী কোথায় আছেন তাকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে (ডা. মুরাদ) না পাওয়ায় এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
রাজীব হাসান বলেন, তার (মুরাদ) সঙ্গে আমরা কথা বলব, তিনি কোথায় আছেন তাও জানি না। যেহেতু ঠিকানা দেওয়া আছে ধানমÐি আর এখানে তো উনি নেই- যে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাকে পেলে বিস্তারিত আরও বলতে পারব।
এবিষয়ে প্রতিবেদন কবে দেওয়া সম্ভব হবে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রæয়ারির মাঝামাঝি একটা তারিখ আছে। দেখি এই সময়ের মধ্যে তদন্তের কতটুকু অগ্রগতি হয়। আর বিবাদিকে তো আমরা তার ঠিকানায় পাচ্ছি না। আবার মারধর ও হত্যা হুমকির অভিযোগে তার স্ত্রী ডা. জাহানারা থানায় জিডি করার পর থেকে তিনি বাসায় ফেরেননি।
গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় জরুরি সহায়তা নম্বর ৯৯৯ এ মুরাদ হাসানের স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান ফোন করে পুলিশি সহায়তা চান। এরপরই ধানমÐি থানা পুলিশের ১০ সদস্যের একটি দল ধানমÐিতে মুরাদের বাড়িতে ছুটে যান। এদিন সন্ধ্যায় স্বামীর বিরুদ্ধে ধানমÐি থানায় জিডি করেন জাহানারা এহসান। জিডিতে ডা. জাহানারা জানান, ১৯ বছর আগে মুরাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে।
জিডির একদিন পর গত ৮ জানুয়ারি হুমকির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদ হাসানের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র এবং তার স্ত্রীর লাইসেন্স করা একটি অস্ত্র নিরাপত্তাজনিত কারণে জমা নেয় ধানমÐি থানা পুলিশ। যার মধ্যে একটি পিস্তল ও দুটি শর্টগান।
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ফোনে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৭ ডিসেম্বর তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। এরপর তাকে জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়।
বিতর্কের মুখে মুরাদ গত ১০ ডিসেম্বর কানাডার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন। তবে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি তাকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। এরপর কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরে আসেন সমালোচিত এই সংসদ সদস্য। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। হঠাৎ স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে আবারও আলোচনায় আসেন বিতর্কিত সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন