নরসিংদী শহর ও শহরতলীতে ১১ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই গৃহবধূকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। এর মধ্যে শহরতলীর হাজীপুর গ্রামে সুবর্ণা আক্তার এবং শহরের সাটিরপাড়া এলাকার মানসুরা আক্তার।
নিহত সুবর্ণা আক্তার নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. সোহেল মিয়ার স্ত্রী। সোহেল স্থানীয় একটি হলুদ-মরিচ ভাঙানোর কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সুবর্ণা-সোহেল দম্পতির ৬ মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ বলছে, গত শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে সাংসারিক অভাব-অনটন নিয়ে তাদের দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সোহেল ও সুবর্ণা দুজনেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে উত্তেজিত সোহেল ঘরে থাকা একটি রেঞ্জ (ধাতব যন্ত্র) নিয়ে সুবর্ণার ওপর চড়াও হন। এ সময় ওই রেঞ্জ দিয়ে সুবর্ণার নাক-মুখ-মাথায় আঘাত করতে থাকেন সোহেল। এতে তার মুখমণ্ডল থেতলে যায়। ওই সময় সুবর্ণা বাধা দিতে ওই রেঞ্জ তার পেটে ঢুকিয়ে দেন সোহেল। এতে তার নাড়িভুড়ি বেরিয়ে যায়। এসময় ৬ মাস বয়সী শিশুটি তাদের পাশেই ঘুমিয়ে ছিল।
ওই সময় সুবর্ণার চিৎকারে প্রতিবেশি আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে নরসিংদী মডেল থানায় খবর দেন। পরে রাত ২টার দিকে ওই থানার উপপরিদর্শক অভিজিৎ চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। ওই সময় গুরুতর আহত অবস্থায় সুবর্ণাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে গতকাল শনিবার সকালে তার লাশ ওই হাসপাতালেরই মর্গে পাঠানো হয়।
নরসিংদী মডেল থানার উপপরিদর্শক অভিজিৎ চৌধুরী জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের স্বামী সোহেলকে আটক করা হয়েছে। সোহেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর ১১ ঘণ্টা আগে গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে একটি ভাড়া বাসায় মানসুরা আক্তার ইতি নামে এক গৃহবধূকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার স্বামী মশিউর রহমান গ্রামের বাড়ি বেলাব উপজেলার সল্লাবাদে ছিলেন বলে জানা গেছে। তার স্বামী পার্শ্ববর্তী সাটিরপাড়া কে কে ইন্সটিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পৌরনীতি বিষয়ের প্রভাষক।
নিহত গৃহবধূ মানসুরার বড় ভাই নূর মোহাম্মদ জানান, ৬ বছর আগে ছোটবোন মানসুরার সঙ্গে মশিউরের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। গত একবছর ধরে এই বাসায় ওঠার পর থেকেই প্রতি শুক্রবার মশিউর মানসুরাকে বাসায় রেখে গ্রামের বাড়িতে যেতেন। গত শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তার গলাকাটা লাশ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকার খবর পাই। খবর পেয়েই মা-বাবাকে নিয়ে নরসিংদীতে আসি। কে বা কারা তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করলো, বুঝতে পারছি না। আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, কে বা কারা ওই গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করেছে তা আমরা তদন্ত করে বের করবো। সম্ভাব্য সব বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত করা হবে। আশা করছি, দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন