আমাদের দেশে শীতে অসুস্থ শিশুদের তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শত শত অসুস্থ শিশু। অসুস্থ শিশুদের বিরাট একটি অংশ ভর্তি হয় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। ভর্তি হওয়া এ শিশুদের অনেকেই রোটাভাইরাস ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। রোটাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত শিশুর পাতলা পায়খানা শীতকালে আমাদের দেশে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গায় একটি মারাত্মক সমস্যা। নাক দিয়ে পানি ঝরা, কাশি, নাক বন্ধ, নিঃশ^াসে কষ্ট, জ¦র, প্রাথমিক লক্ষণসহ ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে তাকে আমরা রোটাভাইরাস ডায়রিয়া বলি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনবরত পানির ধারার মতো বা পিচকারির মতো মলত্যাগ করতে পারে। সঠিক সময় দ্রুত ব্যবস্থা নিলে এসব শিশুদের রক্ষা করা যায়। এটা একটা ভাইরাসজনিত রোগ; তাই কোন এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের দরকার হয়। এই রোগে শরীর থেকে পানি ও লবন বের হয়ে যায়, তাই মুখে খাওয়ার স্যালাইন কিংবা আইভি-স্যালাইনের মাধ্যমে হাইড্রেশন ঠিক রাখতে হয়। বুকের দুধের পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়ানো উচিত, সাথে এন্টিহিস্টামিন, প্যারাসিটামল, নাকের ড্রপ দেয়া যেতে পারে। প্রোবায়োটিকে অনেক ক্ষেত্রে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
মায়ের কোলে রেখে শিশুকে গরম রাখতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রবাহসহ গরম কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখা ও ঘর গরম করার জন্য প্রয়োজন রুমহিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে কিংবা নিউমোনিয়ার প্রকোপ হলে দ্রুত হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করা উচিত। তাছাড়া ছয় সপ্তাহ থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে এক মাস অন্তর দুই ডোজ ভ্যাকসিন বা টিকা দিলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। রোটাভাইরাস ডায়রিয়া শীতকালেই বেশি দেখা যায়। যেহেতু ভাইরাসটি কয়েক দিন পর্যন্ত ঘরের মেঝেতে, টেবিলে, খেলনার মধ্যে এবং বিভিন্ন আসবাবপত্রে বেঁচে থাকতে পারে, তাই ভাইরাসটি খুব সহজে একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হতে পারে। কমপক্ষে ৩১ রকমের রোটাভাইরাসের মধ্যে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে এমন প্রধানত পাঁচ রকমের ভাইরাস আছে।
রোটাভাইরাস ডায়রিয়া কয়েকদিন পর আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়, চিকিৎসা লক্ষনভিক্তিক অর্থাৎ যে যতটুকু আক্্রান্ত তার ততটুকু চিকিৎসাই যথেষ্ট। তাই বলা যায় এ ধরনের ডায়রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। শিশুরা মারা যায় পানিশূন্যতা থেকে। তাই পানিশূন্যতায় শিশুরা যেন আক্রান্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তাই পরিবারের সামান্য কিছু সতর্কতা শিশুকে দেবে রোগমুক্ত জীবন।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবাইল: ০১৭১৬-২৭০১২০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন