মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের আমপাং এলাকার তার বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
জানা যায়, মালয়েশিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন তিনি।
এদিকে, আটকের পর খায়রুজ্জামানের আইনজীবী এ এস ডালিওয়াল অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।
নোটিশে আইনজীবী এ এস ডালিওয়াল নোটিশে উল্লেখ করেন, মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই আটক করেছে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ইউএনএইচসিআর কার্ডধারী হিসেবে খায়রুজ্জামানের মালয়েশিয়ায় থাকার অধিকার রয়েছে। খায়রুজ্জামানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দেওয়া হলে রিট করবেন বলে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান ১৯৭৫ সালের জেল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন এবং পরে খালাস পান। খালাস পাওয়ার পর ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরতে আহ্বান জানান এবং পরবর্তী সময়ে তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।
পরে খায়রুজ্জামান তার জীবনের ঝুঁকি অনুমান করে কুয়ালালামপুরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কাছে যান এবং মালয়েশিয়ায় তার অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি পরিচয়পত্র পান।
উল্লেখ্য, মেজর (অব.) এম খায়রুজ্জামান ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্তীকৃত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকাকালে তাকে ফিলিপাইন থেকে ফেরত এনে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে অবসর দেওয়া হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৪ সালে ট্রায়াল কোর্টে জেলহত্যা মামলা থেকে খায়রুজ্জামানকে খালাস দেওয়া হয়। তবে মামলা চলাকালেই ‘নজিরবিহীন’ ভাবে তাকে পদোন্নতি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে তাকে ‘সসম্মানে’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তাকে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদেও নিয়োগ দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের আগস্টে তাকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার করা হয়।
সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিটা রহমান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। বিএনপির জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের প্রধান ছিলেন এই রিটা রহমান। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন