নির্বাচন কমিশনার গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি যে দশ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে তা তিন দিন আগে জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমিও সার্চ কমিটির মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। যে দশ জনের নাম প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠাবেন তা আগেই জনগণের সামনে প্রকাশ করুন। জনগণকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে হবে। সার্চ কমিটি যতই সার্চ করুক জনগণের চেয়ে বেশি সার্চ তারা করতে পারবে না। জনগণ হলো আসল সার্চের মালিক। তিন দিন আগে এই দশ জনের নাম প্রকাশ করা হলে তাদের সম্পর্কে আমরা সকল তথ্য দিতে পারব। গোয়েন্দা বাহিনী যে তথ্য দিতে পারে না। জনগণ সে তথ্য দিতে পারবে।
আজ শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডি অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে 'কাশ্মীর ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কিছু হলেই বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। বঙ্গবন্ধুর কথা শুনি না, কিন্তু তাকে পূজা করি। বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী শাসকের পরিবর্তে ন্যায়বিত্তিক, আদর্শভিত্তিক, জনগণের কল্যাণ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে প্রথম কাজ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাদিনাকে 'র' এবং মোসাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটির আইনের ভয়ে কেউ মুখ খুঁলে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল আইনকে ধ্বংস করতে হবে। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসতে চান তাহলে সবাইকে নিয়ে আন্দোলনে যেতে হবে। এবং পরিষ্কারভাবে বলতে হবে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন কবরে পাঠানো হবে৷ পরিস্কারভাবে বলতে হবে র্যাবকে বিলোপ করা হবে৷ খালেদা জিয়ার দুই ভুলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্লিন হার্ট অপারেশন করে তিনি ভুল করেছিলেন। আরেকটা ভুল করেছিলেন, সালমানে কথা শুনে ওষুধের দাম উঠিয়ে৷
তিনি বলেন, সার্চ কমিটির কাছে আমি আট জনের নাম বলেছিলাম। আমি কাউকে জিজ্ঞেস করে নাম দেই নাই। হঠাৎ হানিফ আবিষ্কার করলেন এটা বিএনপির দেওয়া নাম। এই মিথ্যাচার কেন করলেন? এই ভুল তথ্য কেন দিলেন? এটা আমি জানি না। আমার সাথে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কারও সাথে গত তিন মাসে কথাও হয়নি। আলাপ দূরের কথা। হানিফ আরেকটা ভুল কথা বলেছেন। বলেছেন আমি খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। আমি কোনো দিন বিএনপি সদস্য ছিলাম না, উপদেষ্টাও ছিলাম না।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আধিপত্যবাদী ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের স্বৈচ্চার হতে হবে। র'কে বের করতে হবে৷ র এর অফিস হলো প্রধানমন্ত্রীর অফিস। এটা কেমন কথা। এটা তো আমার দেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর নিজের জন্যও ক্ষতিকর৷ প্রথমবার তিনি (শেখ হাসিনা) যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন নিয়ম ছিল সপ্তাহে একদিন যে কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারবে। কিন্তু এখন তিনি সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা দলের কারো সাথেও দেখা করেন না। অন্তরীন হয়ে আছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করে শেখ হাসিনা ইতিহাসের অংশ হতে পারেন। আপনি ভয় পাবেন না।
আপনার কিছু হবে না। শুধু একটা মামলা হবে, সেটা হলো অপচয়ের। আমি জানি না আপনি কোনো দুর্নিতি করেছেন কিনা। তবে এতটুকু বলবো, খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, সেটা আপনার সঙ্গে হবে না। যদি হয়, তাহলে আমি আপনার পাশেই দাঁড়াবো।
পাকিস্তানে নিয়োজিত সাবেক উপরাষ্ট্রদূত সাকিব আলী বলেন, কাশ্মির একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। রাজনৈতিকভাবেও এটা গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ থেকেই এটা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বেশ কিছু যুদ্ধ হয়েছে। ৮৯ সাল থেকে এই জায়গাটাতে সশস্ত্রীকরন করা হয়৷ লস্কর ই তইয়েবাসহ বেশ কিছু সশস্ত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে। কাশ্মিরের মধ্যে যে শয়তানি অশুভত্ব আছে, সেটা নানা জায়গাতেই আছে৷ এক সম্প্রদায়কে আরেক সম্প্রদায়ের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে নিজেদের আখের গোছানো হচ্ছে। যেমন আমরা যদি বলি, ওরা হিন্দু, ওরা হিন্দু, তাহলে ওরাও তো বলবে ওরা মুসলিম ওরা মুদলিম, ওদের মেরে ফেল। পাকিস্তান আর্মি আইএসআই যে কত মানুষকে গুম করে দিয়েছে, তার কোনো হিসাব নাই। পাকিস্তান আর্মি হলো পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শত্রু। দেশের রাজনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে এক ধরনের নির্লিপ্ততা তৈরী হয়েছে৷ সেটা আমাদের বিবেককে ধ্বংস করে দিয়েছে। গুণ্ডামির ট্রাডিশন শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে আমাদের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এসেছে৷ আর এটাকে নিয়ে ইউটিউবে আর বিদেশে অনেকে বলতে শুরু করেছে নিষেধাজ্ঞা আসছে, সরকার এবার পড়ে যাবে৷ এটা নিয়ে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে বুদ্ধিজীবীদের ব্যর্থতা রয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা যদি চিন্তা দিতে না পারে, তাহলে রাজনীতিবিদরা কাজ করতে পারবেন না। আজ বলা হচ্ছে, আমাদের কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। এটা নিয়ে অর্থনীতিবিদরাও এটা নিয়ে কিছু বলছে না। কারণ তারা ভয় পায়।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নিয়ে ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, শ্রীলঙ্কায় আমরা দেখছি দুই ভাইয়ের শাসন। জনগণের ভোটেই তারা ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু তারপর হয়ে গেছে অটোক্র্যাট। কখনো ভারতের সঙ্গে আপোষ করছে, কখনো চীনের সঙ্গে আপোষ করছে৷ নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশই একইভাবে চলছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত সার্ককে কার্যকর করা উচিত। যেন দক্ষিণ এশিয়ার সবাই নিজেদের সমস্যা নিয়ে একসঙ্গে বসে কথা বলতে পারে৷ তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এলে অনেকে উল্লসিত হন। কিন্তু এতে উল্লসিত হওয়ার কিছু নাই। নিষেধাজ্ঞা শুভ কিছু নয়৷ আরো নিষেধাজ্ঞা আসতে থাকলে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প, আমাদের শান্তি মিশনে কর্মরত বাহিনীর কি অবস্থা হবে৷
ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, কাশ্মির সমস্যার দুটি মাত্র সমাধান। একটা যুদ্ধ। এটা নেতিবাচক। আরেকটা হলো গণভোট। এটা ইতিবাচক একটা সমাধান। কিন্তু ভারত কখনো সেটা হতে দেবে না। ভারতের র বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও আর সফল হয় নাই৷ আর বাংলাদেশে গুম হয়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ র নিয়ে কথা বলে না।
সাগর রুনি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সারোয়ার বলেন, সমস্যাটা হলো দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি। এজন্যই ৮৪ বার এটা তারিখ পেছায়। তিনি আরো বলেন, বসুন্ধরা নামে একটা গ্রুপ হয়েছে৷ তার বাবা নাকি ছিল ফেরিওয়ালা। তাদের ছেলেরা লেখাপড়া করে নাই। শুধু ধর্ষণ করে। তারা সাব্বির নামে একটা ছেলেকে চার তলা থেকে ফেলে মেরে ফেলেছিল। মুনিয়া হত্যাকাণ্ডেও তাদের নাম আছে৷ সরকারকে বোধহয় তারা কিছু দিয়েছে তাদের সব কেস ধামাচাপা পড়ে যায়৷ আনভির বিদেশে যায়, খেলাধুলা দেখতে যায়, পুলিশ তাকে ধরে না৷ আমি মুনিয়া মামলার আইনজীবী দেখে আমার নামে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে৷ আমি এজন্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নইম নিজামসহ আরও কয়েকজনের নামে মামলা করেছি।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে.এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্ব উপস্থিত ছিলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, ব্যারিস্টার মেজর (অব) সরোয়ার, ভাসানী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উইং জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমূখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন