আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি প্রধান উপদেষ্টা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ফেলানী হত্যার পরই ভারতকে আমাদের চেনা উচিত ছিল। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর লাশ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। এই ছবি শুধু ফেলানীর লাশের ছবি নয়, এই ছবি কাঁটাতারে বিদ্ধ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব। এই ছবি বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতিকদের ভারত তোষণনীতির বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার। ভারতের কারণে আমাদের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এখন সমস্যা শুরু হয়েছে। দশ লাখ রোহিঙ্গা তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে ১৫ লাখে পৌঁছেছে। এমন নানান দুর্ভোগ ভারত সৃষ্টি করে। তারা আমাদের সব দুর্ভোগের কারণ। এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।ফেলানী হত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সীমান্ত আগ্রাসন বন্ধের দাবীতে আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। কমিটির আহবায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সংরক্ষণ সংস্থার চেয়ারম্যান এডভোকেট জহুরা খাতুন জুইঁ।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফের হাতে নির্মম হত্যার শিকার বাংলাদেশের ফেলানীর হত্যা দিবস ৭ জানুয়ারি জাতীয়ভাবে ফেলানী দিবস পালন করতে হবে। একই সাথে ভারতীয় দূতাবাসের সামনের সড়কের নাম ‘ফলানী সড়ক’ নামকরণের তিনি দাবি জানান।
কুড়িগ্রামে ফুলবাড়ী সীমান্তে বিনা উস্কানীতে বিএসএফ বাবার সামনে শিশু কন্যা ফেলানীকে হত্যাসহ সারা বছর সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের হাতে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যার উদ্বেগ জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, এই ঘটনা ভারতের আগ্রাসী চরিত্র। ভারতকে সীমান্ত আগ্রাসন, বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারত তোষণনীতির কারণেই সীমান্তহত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই ভারত সীমান্তহত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হয় না তারা বাংলাদেশের মন্ত্রী, মনে হয় তারা ভারতীয় জনপ্রতিনিধি।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকার নির্বাচন নিয়ে ভয়ানক ষড়যন্ত্র করছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এবার আর রাতে ভোট হবে না। এবার সরকার আরেক প্রস্তুতি নিয়েছে। ভোট আর রাতে হবে না, ভোরেই সরকারের পুলিশ ও প্রশাসনের অন্যরা মিলে ৬০-৭০ ভাগ করে ফেলবে। পরে ৯টার পর ভোট শুরু হবে। এটি কি আমরা মেনে নেব? যদি আমরা না মানি, তবে আমাদের লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোট পাহারায় বসাতে হবে।
জাফরুল্লাহ বলেন, সরকার জনগণ নয় আমলাদের উপর নির্ভরশীল। এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি বানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যিনি সরকারের মিষ্টিভাষী ও দীর্ঘদিন সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। রাজনীতিবিদের তো বিবেক আছে।কিন্তু একজন আমলার বিবেক থাকে না। এইচ টি ইমামের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সদ্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে। এভাবেই তারা এগোচ্ছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সরকার দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। সীমান্তে বাংলাদেশী জনগণ স্বাধীন ভুখন্ডে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা ও কৃষি কাজ করতে পারছে না। ৭ জানুয়ারী ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা। শহীদ ফেলানী দিবসে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার তিনি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, দেশ এখন কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিসহ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির একক মদদে বর্তমান একদলীয় সরকার বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় আজ দেশের রাজনৈতিক শক্তি-ব্যক্তি-গোষ্ঠী ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আর্ন্তজাতিক ফারাক্কা কমিটির সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, লেবার পার্টির মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান, জাগপা মহাসচিব অধ্যাপক ইকবাল প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক রাশেদ খান, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ। সভায় সঞ্চালনা করেন আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব লায়ন নুরুজ্জামান হীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন