শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব- প্রেসিডেন্ট
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপারিশের জন্য চ‚ড়ান্ত হওয়া ১০ জনের নাম প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের কাছে জমা দিয়েছে সার্চ কমিটি। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে গিয়ে সার্চ কমিটির সদস্যরা ১০ জনের নামের তালিকা প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তর করেন। আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের তালিকা থেকে ৫ জনকে মনোনয়ন দেবেন।
তালিকা হস্তান্তরের পর প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রেসিডেন্ট অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের নিরলস প্রচেষ্টার জন্য তাদের প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা করেন, কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। যারা আগামীতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে সক্ষম হবে।
সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত এই ১০ জনের নাম থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারসহ অনধিক পাঁচজনকে নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট। নতুন এই নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে। এবারই প্রথম আইনের অধীনে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা তাদের কার্যক্রমে সাচিবিক সহায়তাসহ সার্বিক সহায়তার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সার্চ কমিটির সদস্যদের মধ্যে বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক। সার্চ কমিটির প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শারীরিক অসুস্থতার কারণে বঙ্গভবনে উপস্থিত হতে পারেননি।
বঙ্গভবনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়–য়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. সামসুল আরেফিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সূত্রমতে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট আজ বা আগামীকালের মধ্যে ১০ জনের তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন। এরপর আগামী ২৭ ফেব্রæয়ারি নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা শপথ গ্রহণ করতে পারেন।
বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ গত ১৪ ফেব্রæয়ারি শেষ হয়েছে। ১৫ ফেব্রæয়ারি থেকে নির্বাচন কমিশনের সব পদ শূন্য রয়েছে। তবে এতে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি। গত ৫ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ অনুযায়ী ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
সার্চ কমিটি নতুন ইসি গঠনে গত ১২ ফেব্রæয়ারি প্রথম দফায় বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশিষ্টজনদের মতামত নেয়। বিশিষ্টজনদের মতামত নিতে পরদিন ১৩ ফেব্রæয়ারি বিকেলেও বৈঠক হয়। দুদিনের সভায় অধ্যাপক, গণমাধ্যমের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি, সরকারি সাবেক কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, পেশাজীবী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। পরে সার্চ কমিটির কাছে আসা ৩২২ জনের নামের তালিকা করা হয়। এরপর ১৪ ফেব্রæয়ারি রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসব নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরদিন চার সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি। আইন অনুযায়ী কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা সুপারিশ করতে হবে। সে অনুযায়ী কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নামের তালিকা প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তর করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন