সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আটকে আছে বিডিআর পিলখানা হত্যা মামলার রায়। আসামিদের জেল আপিল এবং প্রসিকিউশনের ডেথ রেফারেন্স শুনানির পর বাকি এখন রায় কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন দন্ডিতরা। ওই আপিলের শুনানি আটকে আছে আপিল বিভাগে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর রিভিউ এবং প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দান শেষে কার্যকর করা হবে রায়। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এবং আদালত সূত্র জানিয়েছে এসব তথ্য।
পিলখানা মৃত্যুদন্ডর ১৩ বছর হতে চললেও বিচারিক আনুষ্ঠানিকতার কারণে কার্যকর করা যায়নি রায়। ইতিহাসের নৃশংসতম এই মৃত্যুদন্ড নিহতদের স্বজনরা এখনো আসামিদের রায় কার্যকরের অপেক্ষায়।
দেশের অভ্যন্তরে ‘বিডিআর বিদ্রোহ’র নামে নিষ্ঠুর এই হত্যাকান্ডের সূত্রপাত ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন সকাল ৯টার পরপরই পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরের ভেতরে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। বিডিআর সপ্তাহ চলার কারণে আশপাশের মানুষ সেসব শব্দকে কোনো কর্মসূচি বলেই মনে করেছিল। কিন্তু ঘটনার কিছু সময় পর জানা গেল, পিলখানার ভেতরে বিদ্রোহ হয়েছে। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়লে সরকারের নেতৃস্থানীয়রা একাধিকবার বৈঠকে বসেন।
২৫ ফেব্রæয়ারি গভীর রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পিলখানায় গেলে বিদ্রোহীরা তার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিয়ে আসার সময় বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।
২৬ ফেব্রæয়ারি বিকেলে গোলাগুলি থেমে গেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। অবসান ঘটে ৩৩ ঘণ্টা বিদ্রোহের। পরে দেখা যায়, কথিত ওই বিদ্রোহে বিডিআর’র তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, তার স্ত্রীসহ অন্তত: ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক ২টি মামলা হয়। এর মধ্যে বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতে শুনানি পর্যায়েই রয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর কেবল হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়।
মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান বকশী বাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে রায় ঘোষণা করেন। পিলখানা ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড, বিএনপির মরহুম নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৪ জন পলাতক। এছাড়া বন্দি অবস্থায় তোরাব আলীসহ আরো কয়েকজন আসামি ইতোমধ্যেই ইন্তেকাল করেন।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিপরীতে আসামিরা উচ্চ আদালতে গেলে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ৫৫২ জনকে বিচারের আওতায় এনে বাকি ২৮৩ জনকে খালাস দেন আদালত। উচ্চ আদালতে শুনানি চলাকালে আরো ১১ জনের মৃত্যু হয়। রায় হয় মোট ৮৩৫ জনের বিরুদ্ধে। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের দÐাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। ৮ জনকে মৃত্যুদÐের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদÐ ও ৫ জনকে খালাস দেন উচ্চ আদালত। ১১ দফা পর্যবেক্ষণসহ ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের অনেকেই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। এগুলোই এখন শুনানির অপেক্ষায়। তবে আসামিদের সাজা কার্যকরের অপেক্ষা যেন ফুরাচ্ছেই না।
আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, মামলা হয়েছিল ২০০৯ সালে। এরপর ২০১৭ সালে হাইকোর্টের রায় হয়। ওই রায়ের পর আসামিরা বেশকিছু লিভ টু আপিল ও আপিল দায়ের করে। অনেক সময় কেটেছে। তারা এখনো জেলে আছে। তাই প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ জানাতে চাই, যে আপিলগুলো এখনো শুনানির জন্য পেন্ডিং আছে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে ও মানবিক দিক থেকে তা দ্রæত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবেন।
পক্ষান্তরে খালাসপ্রাপ্ত ও অপর্যাপ্ত দÐাদেশের বিরুদ্ধেও লিভ টু আপিল ও আপিল আবেদন করেছে সরকারপক্ষ। কিন্তু এসব আপিল শুনানির উদ্যোগ সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত যেসব আপিল করা হয়েছে, সেসব আপিল একত্র শুনানি হবে। আমরা শুনানির উদ্যোগ নেব। আশা করছি চলতিবছরেই আপিল শুনানি শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন