ইউক্রেনের ফেসবুক থেকে একাধিক ফিচার সরিয়ে ফেলা হল। বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের তরফেও। থার্ড-পার্টি ফ্যাক্ট চেক-এর উপর জোর দিচ্ছে সংস্থা। ইউক্রেনে অঞ্চলে মেটার সহযোগী ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাগুলিকে অর্থ সাহায্য করে তাদের কাজ বাড়ানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মেটা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সাইবার হানাদারি। প্রমাদ গুণছে মেটা-র মতো বৃহৎ প্রযুক্তিগত সংস্থাগুলি। ইতিমধ্যেই মেটার তরফ থেকে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বিষয় নজরে রাখতে বলা হয়েছে গ্রাহকদের। সেগুলি একদিকে যেমন ইউক্রেনবাসীর জন্য জরুরি, তেমনই গোটা বিশ্বের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
মেটা অধীনস্থ হোয়াটসঅ্যাপের তরফে ট্যুইট করে বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমাদের ভাবনাচিন্তা কার্যকর করতে হচ্ছে। কী ভাবে নিজেদের অ্যাকাউন্টের গোপনীয়তা বজায় রেখে নিজেকে ও দেশকে সুরক্ষিত রাখা যায় তার কয়েকটি পয়েন্ট এখানে রইল। এই সুরক্ষা পদ্ধতি ইউক্রেন-সহ সমগ্র বিশ্বের গ্রাহকের জন্য জরুরি।"
সাইবার সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, ‘সব সময় আপনার ব্যক্তিগত বার্তা এবং কলগুলিকে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনে যুক্ত রাখুন। এ জন্য এটিকে ডিফল্ট করে নিন। যাতে সেগুলি কোনও ভাবেই কোনও রাষ্ট্র দ্বারা রুদ্ধ না হয়ে পড়ে।’ গত সপ্তাহে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করেছে রাশিয়া। তারপর থেকেই রাশিয়ান সেনাবাহিনী ক্রমাগত ইউক্রেনের দখল নিয়ে চলেছে। তারা রাজধানী কিভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে ইতিমধ্যেই দু’দেশের মধ্যে সাইবার হানাদারিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
তারই প্রেক্ষিতে এ ধরনের বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে মেটাকে। শুধু তাই নয়, হোয়াটসঅ্যাপের অভিভাবক সংস্থা মেটা কর্তৃপক্ষের তরফে এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে, তাঁরা একটি বিশেষ ‘অপরেশন সেন্টার’ তৈরি করেছেন। যেখানে রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ান ভাষাভাষি-সহ মেটার আধিকারিকেরা কাজ করছেন। তাঁরা সর্বদা পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন যাতে কোনও সমস্যা হলেই সংস্থা দ্রুত পদক্ষেপ করতে পারে।
মেটা জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট লক করে দেওয়ার ফিচার যোগ করা হয়েছে। গ্রাহকদের অনুরোধ করা হচ্ছে তারা যেন সুবিধা মতো নিজেদের অ্যকাউন্ট লক করে নেন। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বন্ধুতালিকা খুঁজে দেখার সুযোগও। তুলে নেওয়া হচ্ছে মেসঞ্জারের কিছু অতিরিক্ত টুল।
সংস্থার দাবি, ভুল তথ্যের প্রচার রুখতে একাধিক ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। পাশপাশি রাশিয়ান এবং ইউক্রেনিয়ান ভাষায় ‘থার্ড-পার্টি ফ্যাক্ট চেক’ করার ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে সচেষ্ট তারা।
হোয়াটসঅ্যাপের বক্তব্য, "আমরা সমস্ত গ্রাহকে অনুরোধ করছি two-step verification জারি রাখতে। এতে হ্যাকারদের থেকে সুরক্ষিত থাকবে আপনার অ্যাকাউন্ট। না হলে যে কোনও দিন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে হ্যাকাররা।" ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক’ ব্যবহার করার কথাও সুপারিশ করছে সংস্থা। সেই সঙ্গে মেসেজ ফরওয়ার্ড করার ক্ষমতাও সীমায়িত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। যে সমস্ত বার্তা প্রেরকের কাছ থেকে আসে না, তা বেশি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, বা প্রাপক যাতে বুঝতে পারে এটি তৃতীয় পক্ষের তরফে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাই এই ব্যবস্থা।
মেটার তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকের উপর জোর দিচ্ছেন। কোনও খবর ‘মিথ্যা’ বলে জানা গেলে তা নিউজ ফিডের একেবারে তলায় ঠেলে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রাহক কী পড়বেন, কোনটা বিশ্বাস করবেন আর কতটা শেয়ার করবেন তা বুঝিয়ে দিতেও তৎপর মেটা। ফ্যাক্ট চেকিংয়ে ধরা পড়া ‘ভুয়ো’ তথ্যের উপর তারা সতর্কবার্তা রাখছে বলে জানান হয়েছে। এমনকী রাশিয়া-ইউক্রেন অঞ্চলের বাসিন্দারা এক বছরের পুরনো যুদ্ধের ছবি শেয়ার করলে তাও স্ক্যানিং করে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মেটা। সূত্র: রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন