শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতির অবস্থা মন্দা। বর্তমানে বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য নিয়ে একটা কথা আসছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অর্থনীতি মন্দা। যে কারণে পৃথিবীর সব দেশেই সুদূর আমেরিকা থেকে শুরু করে সবখানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে বাংলাদেশেও দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছে দেশের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী।
গতকাল সোমবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। তিনি বিএনপির নেতৃত্ব এখন কোথায় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘ফিউজিটিভ’ অবস্থায় আরাম-আয়েশে বিদেশে অবস্থান করে আমাদের গড়া ডিজিটালের সুবিধা নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজ করছেন।
রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। যার কুফল আমরা ভোগ করছি। আমাদের এখানে কিছু জিনিসের দাম বাড়ছে কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে এখানেও তার প্রভাবটা পড়ে। তাছাড়াও কিছু লোক এখানে আছেই এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ব্যবসা করে তারা দু’পয়সা বেশি কামাই করতে চায়। সেখানে মনিটরিং আমরা করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে আমি বলবো খাদ্যে যেন কখনো আমাদের অভাব না হয়। যে যা পারবে কিছু উৎপাদন করবে। নিজের চাহিদা নিজে পূরণের চেষ্টা করবেন। এটা করতে পারলে আমাদের কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে যা দেশবাসীর ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে। বড় কথা আমাদের কারো কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। আমাদের সব পরিকল্পনা নিজেদের অর্থায়নেই বাস্তবায়ন করছি। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর পুষ্টির ব্যবস্থা করেছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও বই দেওয়া-সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেরাই পারি’- এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র অর্জন। অর্থনৈতিক মুক্তির যে কথা জাতির পিতা বলে গেছেন, অন্তত কিছুটা হলেও তা অর্জন করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে কোন দুর্যোগ আমরা মোকাবিলা করতে পারি, করোনার সময় এটা আমরা প্রমাণ করেছি। অনেক ধনী দেশ বিনা পয়সায় করোনার টিকা দেয়নি, কিন্তু আমরা দিচ্ছি। অথচ, ২৯ বছর যারা এদেশের ক্ষমতায় ছিল তারা মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের আর্থসমাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে সমাজে একটা আমূল পরিবর্তন আমরা আনতে পেরেছি। এখন আর পুরনো কাপড় বিদেশ থেকে এনে পড়তে হয় না। অন্তত মানুষের এই জীবন মানটা আমরা উন্নত করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ২১ বছর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। কারণ, তারা জানে এই ভাষণের মধ্যদিয়েই জাতির পিতার আহ্বানে এ দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই, যারা শত্রুর পক্ষে, যাদেরকে বাঙালি পরাজিত করেছে, তারা ৭ মার্চ কখনোই পালন করতে পারে না, এটা হচ্ছে বাস্তব কথা। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওই পরাজিত পকিস্তানীদের গোলামী করা, পদলেহন, তোষামোদী করা-এটা তাদের মজ্জাগত। বংশ পরম্পরায় যেন এটা নিয়েই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বলবো কে ৭ মার্চের ভাষণের দিবস পালন করলো না করলো, সেটা নিয়ে বোধহয় আমাদের চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ, এটা ধরেই নিতে হবে এরা সেই গোষ্ঠী যারা এ দেশের স্বাধীনতাই চায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা সেই গোষ্ঠী যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। এরা ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করে, যাতে আইভি রহমানসহ দেশের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে নিহত হয়। এরা আন্দোলনের নামে জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কাজেই তাদের কাছে এদেশের মানুষ কি বা আশা করতে পারে।
বিএনপির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতৃত্ব দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় আজকে নেতৃত্ব শূন্য। ‘ফিউজিটিভ’ অবস্থায় আরাম-আয়েশে বিদেশে অবস্থান করে দেশের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া তাদের যেন করণীয় নেই। মানুষকে কিছু দিতে না পারলেও হাজার হাজার কোটি টাকা তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার গ্রাম পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর সুযোগ নিয়ে তারা কেবল দেশের বিরুদ্ধে সর্বনাশ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কি পেলাম কি পেলাম না সেটা বড় কথা নয়, কতটুকু বাংলাদেশের মানুষের জন্য দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা। কেননা তাঁদের জন্য আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনটাই দিয়ে গেছেন। আমার মা’, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন, লাখো শহীদ জীবন দিয়েছেন। কাজেই, তাঁদের স্বপ্নগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।
তিনি বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ এখনও আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। এর প্রতিটি লাইন অর্থবহ, আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। বিশে^র আর কোন ভাষণ এত বছর এরকম প্রাণবন্ত থাকেনি যেভাবে ৭ মার্চের জাতির পিতার ভাষণ মানুষকে উজ্জ্বীবিত করছে। কাজেই, এই দিবসটা শুধু পালন নয়, একে অনুসরণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম)। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন