বরিশালের গৌরনদীতে ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী দুই কিশোর-কিশোরীর অপ্রাপ্ত বয়সের প্রেমে সহযোগীতা করতে গিয়ে ভাগ্যের নির্মম বলি হয়েছে সুমন খোন্দকার (১৫) নামের নবম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী । এ ঘটনায় নিহত কিশোরের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ঘটনাটি কি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, নাকি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু তা বলতে পারছেনা কেউ। এ নিয়ে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর মনে নানা সন্দেহ দানা বাঁধছে।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানিয়েছে, উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের উত্তর বাউরগাতি গ্রামের ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক মোঃ সোহেল খানের কিশোরী মেয়ে ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী শান্তা খানম (১৪)’র সাথে প্রায় দুই বছর আগে সহপাঠী শওকত বেপারীর ছেলে সিফাত বেপারী (১৪)র প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ৬ মাস আগে ওই দুই প্রেমিক প্রেমিকা ঘর ছেড়ে পালিয়ে প্রেমিক সিফাতের এক চাচার বাসায় ওঠে। তারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় চাচা কিশোরীর বাবাকে ডেকে কিশোরীকে তার হাতে তুলে দেয়।
প্রেমিক কিশোর সিফাত বেপারী জানায়, সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে প্রেমিকা শান্তা তাকে ফোন করে ওই সময়ই তার সাথে দেখা করতে বলে। না দেখা করলে সে আত্মহত্যা করবে বলেও হুমকি দেয়। তখন সিফাত তার বন্ধু একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী দুবাই প্রবাসী ইব্রাহীম খোন্দকারের ছেলে সুমন খোন্দকার (১৫)কে সঙ্গে নিয়ে রাত ২টার দিকে প্রেমিকা শান্তার সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায়। এরপর সহযোগী বন্ধু কিশোর সুমন খোন্দকারকে নিকট দূরত্বে দাড় করিয়ে রেখে তারা দুজন বাড়ির পাশে ঝোপের আড়ালে বসে গল্প করছিল। ঘটনা টের পেয়ে প্রেমিকা শান্তার বাবা-মা প্রেমিক সিফাত বেপারীকে ধরে মারধর করে তার একটি হাত ভেঙ্গে ফেলে। এর কিছুক্ষন পরই তারা ঘটনাস্থলের পাশে ওই গ্রামের মোঃ আবুল হোসেন মীরের একটি বোরো ধানের ক্ষেতের মধ্যে ইদুর নিধনের জন্য পাতা বৈদ্যুতিক ফাঁদের তারের সাথে জড়িয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। এর পর সেখান থেকে এলাকাবাসী ও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগন তাকে মৃত ঘোষণা করে।
প্রেমিকা শান্তার বাবা-মা দাবি করছেন তাদের তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে কৃষি জমির বৈদ্যুতিক ফাঁদের তারে জড়িয়ে সুমন মারা গেছে। কিন্তু কথা বিশ্বাস করছেনা নিহত কিশোর সুমন খোন্দকারের স্বজনরা। তারা সন্দেহ করছে সুমনকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
সুমনের চাচা ইউনুস খোন্দকার ও ফুপাতো বোন নুরজাহান বেগম জানান, সুমনের বাবা-মা দুজনই দুবাই প্রবাসী। আগামী এক মাসের মধ্যে তারা সুমনকে দুবাইতে নিয়ে যাবেন পরিকল্পনা ছিল তাদের। সুমনের ভিসা ও কাগজপত্র রেডি হয়ে গেছে। আহাজারি করতে করতে নুরজাহান বেগম বলেন, ‘ওর বাবা, মাকে এখন আমরা কি জবাব দেব’।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন জানান, পুলিশ নিহত সুমনের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে মর্গে পাঠিয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় নিহত সুমনের চাচা মোঃ ইউনুস খোন্দকার বাদি হয়ে ইদুর নিধনের জন্য ফাঁদ পাতা বোরো ক্ষেতের মালিক মোঃ আবুল হোসেন মীর’কে আসামী করে মঙ্গলবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন