উত্তর : বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজের পঙ্কিলতা দূর করত শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাবার অদূরে হেরা গুহায় ভাবনারত থাকাকালীন আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম যে নির্দেশ আসে তা হলো জ্ঞানার্জনের তাকিদ।আল্লাহ কর্তৃক হযরত জীবরাইল আলাইহিমুস সালাম এর মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল কৃত প্রথম আয়াত সমূহ হলো, ”পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু,যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না” (সূরা আলাক:১-৫ আয়াত)। ইসলাম ধর্মের আগমনে পৃথিবীবাসী মানুষের জন্য জাগতিক ও পারলৌকিক সকল প্রকার শিক্ষার দ্বার উম্মুক্ত হয়েছে। এখান থেকে অনুধাবন করা যায়, ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য জ্ঞানের দ্বার কিভাবে উম্মুক্ত করে দিয়েছে।আল্লাহ সর্বপ্রথম তার নবীকে কোনো কর্মের আদেশ দেননি তার কারণ হলো না জেনে কোনো কর্ম করা যায়না।কর্ম করার আগে জানতে হয়।যারা না জেনে কর্মকরে তারা অনেকাংশে ছেলেখেলারূপ কর্ম করে।জ্ঞানবান মানুষকে সর্বপ্রথম নিজেকে চেনা উচিত।মানুষ যখন নিজেকে চেনার চেষ্টা করবে শুরুতেই তার স্রষ্টাকে স্বরণ হবে।মানুষের এতো সুন্দর অবয়ব যা সকল কিছুকে হার মানায়।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেন, ”নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম-সুন্দর আকৃতিতে।”[সুরা তীন : আয়াত-৪] বস্তুত সত্য এই যে, প্রতিটি মানুষ কোন না কোন অর্থে সুন্দর।কারোর চোখ সুন্দর,কারোর চুল,কারোর হাসি, অথবা কারোর গায়ের রঙ!মানুষের এই সৌন্দর্যের ঐশ্বরিক সব লিলাখেলা স্রষ্টাকে ঘিরে।তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সর্বপ্রথম তার নামেই পড়তে বলেছেন।মানুষের জন্য জ্ঞানার্জন করাকে ফরজ করা হয়েছে।আমলের পূর্বশর্ত জ্ঞানার্জন।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,”প্রতিটি মুসলিম পুরুষের উপর দ্বীনী ইলম শিক্ষা গ্রহণ করা ফরজ। অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে– প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর দ্বীনী ইলম শিক্ষা গ্রহণ করা ফরজ “ (ইবনে মাযাহ, হাদীস নং- ২২৪)।জ্ঞানার্জনকে যেমনি ভাবে ফরজ করা হয়েছে তেমনি ভাবে জ্ঞানার্জনকারীকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয়েছে।আল্লাহ বলেন,” হে নবী আপনি বলে দিন, যে ব্যক্তি (কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়াতের বিধান) জানে আর যে জানে না, তারা কি উভয়ে সমান গতে পারে?”(সূরা জুমার-আয়াত ৯)।ইবেন মাজাহ ও তিরমিজির রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়,” তাবেয়ী কাছির ইবনু ক্বায়েছ রহমাতুল্লাহি আলাইহ বলেন: আমি দামেশকের মসজিদে বিশিষ্ট সাহাবী আবুদ্দারদাহ রাদিআল্লাহু তাআ›লা আনহু এর সাথে বসা ছিলাম, এমন সময় তার নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বললেন: হে আবুদ্দারদাহ! আমি সুদূর মদিনাতুর রাসূল থেকে আপনার নিকট শুধু একটি হাদীস শুনার জন্য এসেছি। আপনি নাকি উহা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করে থাকেন। তখন আবুদ্দারদাহ রাদিআল্লাহু তাআ›লা আনহু বললেন: হ্যা, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: তিনি বলেন; যে ব্যক্তি ইলম আন্বেষণ করার লক্ষ্যে কোন পথ অবলন্বন করে, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তাকে জন্নাতের পথ সমূহের মধ্য থেকে একটি পথে পৌছিয়ে দেন এবং ফেরেস্তাগণ ইলম অন্বেষণকারীদের সন্তুষ্টির জন্য তাদের নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেন। এতদ্ব্যতীত যারা আলেম, তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছেন , তারা সকলেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দোয়া করতে থাকেন। এমনকি পানির মধ্যে অবস্থিত মাছসমূহ তাদের জন্য দোয়া করে থাকেন। আলেমের ফজিলাত সাধারণ আবেদের (ইবাদতকারী) উপর এমন, যেমন পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তারকারাজির উপর। আর আলিমগণ হচ্ছেন নবীদের ওয়ারিশ। নবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম ( টাকা-পয়সা ও ধনসম্পদ) রেখে যান না। তারা মিরাস হিসেবে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করলো সে সৌভাগ্যের পূর্ণ অংশ গ্রহণ করলো।(তিরমিজি, ২৬৮২, ইবনু মাজাহ, ২২৩)।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফভত ত্বোহা। প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন