উত্তর : মানব জীবনের অপরিহার্য অংশ হলো দাম্পত্য জীবন। বিবাহের মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কিত পুরুষকে স্বামী (পতি) এবং নারীকে স্ত্রী (পত্নী) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। স্বামী ও স্ত্রীর যুক্ত জীবনকে দাম্পত্য জীবন” হিসাবে অভিহিত করা হয়। প্রতিটা ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মাবতার কর্তৃক মানব সম্প্রদায়কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবন পরিচালনার তাগিদ ও উৎসাহ দিয়েছেন। নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতি টান ও ভালোবাসাটা এক প্রাকৃতিক ব্যাপার; তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা প্রথম মানব-মানবীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দাম্পত্য জীবনের সূচনা করেন। বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ে ইসলামী শরীয়তে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে; কেননা দাম্পত্য জীবন মানব জীবনের সবচেয়ে মূখ্য বিষয়। এক সাথে দুটি মানুষের আমৃত্যু ঘর-সংসার করার বাহ্যিক প্রতিশ্রুতিই হলো বিবাহ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা বিয়ে করো সেই স্ত্রীলোককে, যাদের তোমাদের ভালো লাগে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩) বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ে সৌন্দর্য, সামর্থ্য, বংশগত মর্যাদা এবং বিশেষ করে দীন-দারিত্বের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে, তখন সম্ভব হলে— তার এমন কিছু যেন দেখে নেয়, যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে।’বর্ণনাকারী বলেন, আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা-অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি— যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করল। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮২)
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন স্ত্রী সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘(স্বামী) যে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পুলকিত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা; হাদিস : ১৮৩৮) বিবাহে পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে সৌন্দর্যের ব্যাপারটা হলো আপেক্ষিক। একেকজন একেক দৃষ্টিতে সৌন্দর্য বিচার করে। একজনের কাছে যেটা মোহনীয় অন্যজনের কাছে সেটা নাও হতে পারে। কারো কালো পছন্দ, কারো ফর্সা আবার কারো শ্যামলা পছন্দ; কারো লম্বা প্রকৃতির পছন্দ, কারো স্বাভাবিক প্রকৃতির। কেউ বাহ্যিক চেহারা দিয়ে সৌন্দর্য বিচার করে; কেউ বিচার করে জ্ঞান, মেধা, বুদ্ধিমত্তা, যোগ্যতা ও মননশীলতা দিয়ে। বিয়ের আগে পাত্রপাত্রী একেঅপরের পছন্দের ব্যাপারটি সুনিশ্চিত করতে হবে। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, মনের পরিতৃপ্তি ও প্রশান্তি অর্জন করা। চরিত্রের সুরক্ষা ও চোখ অবনমিত রাখার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আপনি যদি এমন নারীকে বিয়ে করেন, যার দিকে তাকালে আপনার মনে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় কিংবা ভালো লাগে, তাহলে স্বভাবতই মনে প্রশান্তি আসবে। পাশাপাশি পরনারী থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সহায়ক হবে।
বিবাহে পাত্র বাছাইয়ে পাত্রী পক্ষকে অনেক বেশি সতর্ক হতে হয়;পাত্রের বাহ্যিক রূপের চেয়ে দ্বীনদারী ও চরিত্রকে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের নিকট এমন কোনো পাত্র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও দ্বীনদারিতে তোমরা সন্তুষ্ট; তবে তোমরা তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। যদি তোমরা তা না করো, তবে তা পৃথিবীতে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণ হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস :১০৮৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯৬৭) আমাদের বর্তমান সমাজে পাত্র বাছাইয়ে দ্বীনদারিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হচ্ছে; পাত্রের চরিত্র ও দ্বীনদারীত্ব থেকে পাত্রের অর্থনৈতিক সামর্থ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে সামাজিক অশান্তি ও বিবাহ বিচ্ছেদ মহামারী আকার ধারণ করেছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) দ্বীনদার মেয়েকে বিয়ে করার ব্যাপারে অধিক হারে তাগিদ দিয়েছেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘নারীদের (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। যথা: ক. তার ধন-সম্পদ। খ. বংশমর্যাদা। গ. রূপ-সৌন্দর্য। ঘ. দ্বীনদারি বা ধার্মিকতা। তবে তুমি দ্বীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হও; অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৯০; মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২০৪৭)
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা । প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন