শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

রমজান : আমার ভাবনা

মুন্সি আব্দুল কাদির | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
রমজান দানের মাস না কি বেশি লাভ করার মাস: রমজান মাস দানের মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন। তিনি প্রবাহিত বায়ুর চেয়ে আরো বেশি প্রসারিত, মুক্ত হস্তে দান করতেন। এই মাসে সকল ভাল কাজেই বেশি সওয়াব। কিন্তু আমরা দানের পরিবর্তে এই মাসকে ব্যবসায় বেশি লাভের মাস বানিয়ে নিয়েছি। এই এক মাসেই সারা লাভ করে নিতে হবে। তাই রমজান আসার আগেই জিনিস পত্রের দাম আগুনের মত বাড়তে থাকে। অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে দাম চলে যায়। কোন ব্যবসায়ীই দাম কমানোর উদ্যোগ নেন না। কিভাবে আরো বেশি লাভ করা যায় এই ধান্ধায় ব্যস্ত থাকেন। একটু ভাবুন তো এই অবস্থায় আমি কিভাবে রমজানের বরকত লাভে ধন্য হতে পারি!

রমজান অন্যের কষ্ট বুঝার মাস ন কি ঘুমানোর মাস: রমজান গরীবের ক্ষুধার জ্বালা, অনাহারের কষ্ট বুঝার মাস। কিন্তু আমি যদি সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাই তবে আমার পক্ষে তাদের কষ্ট বুঝা সম্ভব হবে? কোন ভাবেই না। আমরা অনেকেই রমজানের অবসর ঘুমিয়ে কাটাই। অন্যের কষ্ট অনুধাবন করতে হলে আমাকে অবশ্যই দিনের ঘুম ছেড়ে দিতে হবে। ক্ষুধার কষ্ট অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে।

রমজান কাজের মাস না কি ফাঁকি দেওয়ার মাস: স্বাভাবিক ভাবেই রমজানে অন্য মাসের তুলনায় কাজ কম থাকে। যারা আল্লাহর প্রিয় হতে চান তারা তাদের কর্মীদেরকে কাজ কমিয়ে দেন। আমাদের দেশে রমজানে অফিস সময়ও কম। কিন্তু এই অফিস সময়ের মধ্যে আমরা অনেকেই রোজার দোহাই দিয়ে আরো কাজ কম করতে চাই। রমজানের কষ্ট বলে চালিয়ে দেই। একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, রমজান সবচেয়ে বেশি কষ্ট করার মাস। এই মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ বদরের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এই মাসেই ইসলামের চুড়ান্ত বিজয় মক্কা বিজয় সাধিত হয়েছে। এই মাসে মহাবীর তারিক বিন যিয়াদ রাহঃ এর নেতৃত্বে স্পেনের মাটিতে কালিমার বিজয় পতাকা পত পত করে উড্ডীন হয়েছে। এই বরকতময় মাসে মুহাম্মদ বিন কাসিম রাহঃ আমাদের এই প্রিয় ভারত ভূমি জয় করেছেন। তাই এই মাস কাজ কম করার মাস নয়। সবচেয়ে কঠিনতম কাজ করে সফলতা অর্জনের মাস এই রমজান। তাই এই মাসে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব খুব ভাল ভাবে আঞ্জাম দেওয়ার এই রমজান মাস।

রমজান ব্যস্ততার মাস না অলসতা আর গল্পের মাস: রমজান রহমতের বসন্তকাল। এই মাসে যে আজলা ভরে রহমত কুড়িয়ে নেবে সেই সফল। এই মাসে আমরা বেখেয়ালে সময় কাটানোর জন্য আড্ডা আর গল্পে সময় ব্যয় করি। এই আড্ডায় সময় ব্যয়ে আমরা গীবত, মিথ্যা অনেক পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ি। অথচ রমজানের এক একটি মুহুর্ত অনেক অনেক মূল্যবান। এই এক একটি সময় আমার কাছে আর কখনো ফিরে আসবে না, শুধু আফসোস রেখে যাবে। আমার সময় যদি আড্ডা, গল্প, গীবত আর মিথ্যায় লেগে যায় তবে আমার উপোস থাকায় কোন লাভ হবে না।

রমজান সবরের মাস না গালাগালি আর রাগারাগির মাস: রমজান মাস সবরের মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রোজা সবরের অর্ধেক আর সবর ইমানের অর্ধেক। এই হিসাবে দেখা যায় পুরো ইমানের চার ভাগের এক ভাগ রোজা। রোজার মাধ্যমে ক্ষুধা পিপাসার কাতরতা। জীবনের ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে রোজাদারকে সবরের পরাকাষ্ঠা দেখাতে হয়। বাস্তবতা হলো রোজার মাধ্যমে আমার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সবরের কোন বালাই আমার মধ্যে থাকে না। একটু থেকে একটু রাগারাগি শুরু হয়ে যায়। অনেকে গালাগালি করতেও ছাড়েন না। রমজান মাসেই আমাদের মধ্যে কথায় কথায় তর্ক বিতর্ক ঝগড়া বেশি হয়। সবরের ট্রেনিং যে কোন কাজ করে না।

রমজান কোরআনের মাস না গল্প পড়ার মাস: আমরা সবাই জানি রমজান কোরআনের মাস। এই কোরআনের কারনেই রোজার মাসের এতো সম্মান এত মর্যাদা। এই রমজানে কি আমি কোরআনকে আপন করে নেই? আমি কি কোরআনের সাথে কথা বলি? আমি কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আলাপন করি। আমার ভাব, চাওয়া, পাওয়া, আকুতি-কাকুতি নিবিড়ভাবে মাওলার সাথে আদান প্রদান করি। হ্যাঁ সারা বছর কোরআনের সাথে না থাকলেও বেশি সওয়াবের আশায় কোরআন কিছুটা হলেও তেলাওয়াত করি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোরআনের দাবী এটা নয় যে, আমি বেশি সওয়াব পাব এই জন্য কোরআন তেলাওয়াত করি। বরং আমার উচিত বছরের প্রতিটি দিনকে কোরআনের সংস্পর্শে বরকতময় করে তোলা। কোরআনের রঙে জীবন রাঙ্গানোর জন্য এই রমজানকে ট্রেনিংয়ের মাস হিসেবে গ্রহন করা। অথচ দেখা যায় আমি কোরআন বাদ দিয়ে অন্য কিছু পড়াতে মশগুল থাকছি।

আসুন রমজানকে রমজানের মত করেই কাটাই। রমজান নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা করি। নিজের কাজগুলোকে ঢেলে সাজাই। নিজের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করি এবং শোধরানোর চেষ্টা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন