ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের ৭৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। দিবসটি উপলক্ষে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন কবর জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। হানিফের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাবার আত্মার শান্তির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ হানিফ ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার এক সম্ভ্রান্তÍ মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন। তিনি ছিলেন আবদুল আজিজ এবং মুন্নি বেগম দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান। ১৯৬৭ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকার প্রখ্যাত পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মাজেদ সরদারের কন্যা ফাতেমা খাতুন এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক।
শুরু থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল। তার সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুব কাছে থেকেছেন। উদার চিন্তাচেতনা, প্রখর ব্যক্তিত্ব ও সংবেদনশীলতা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারনে তিনি সবার প্রিয় নেতায় পরিণত হন। ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পান। এ সময় ছয় দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন ও প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সব আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ হানিফ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মোহাম্মদ হানিফকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন ও ভালোবাসতেন। তাই ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু তার ঢাকা-১২ আসন ছেড়ে দেন এবং মোহাম্মদ হানিফ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে হুইপেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
১৯৯৪ সালে লক্ষাধিক ভোটের ব্যাবধানে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তারই নেতৃত্বে ৯৬-এর মার্চের শেষ সপ্তাহে ‘জনতার মঞ্চ’ গঠিত হয়, যা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। ৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি করে দলের বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন মোহাম্মদ হানিফ। একের পর এক ছোড়া গ্রেনেডে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মক আহত হন তিনি। তার মস্তিকসহ দেহের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য স্প্রিন্টার ঢুকে পড়ে। দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেও মোহাম্মদ হানিফ জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন। ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গণে এক সমাবেশে সভাপতির ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ব্যাংককে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ঢাকায় ফিরে ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাতে ৬২ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অবসান ঘটে মোহাম্মদ হানিফের কর্মময় বণার্ঢ্য রাজনৈতিক জীবনের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন