জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের লোক-প্রশাসন ও সরকার পরিচালন বিদ্যা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে ৩ ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে শিক্ষা সফর-২০১৬-তে আমরা গিয়েছিলাম বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যখ্যাত সুন্দরবনে।
বিকাল থেকে টানা অপেক্ষার পর সন্ধ্যা ৬টায় কুয়াশা আর অন্ধকারে প্রকৃতি ঘেরা চারদিকে প্রচ- ঠা-ায় এই হিমায়িত শীতল ঠা-া যেন হাত, মুখ, গালে ছুঁয়ে যাচ্ছে। এক বুক সুন্দর স্মৃতিময় মুহুর্তের খোঁজে বাসে উঠলাম। যাচ্ছি সুন্দরবন। বড় ভাই, বোন, আর বন্ধুবরের হইচই, গানে ঘুমকে খুব একটা মনে পড়েনি রাতে। দুপুর ১২টার দিকে ‘সাগর পাড়ে’ করে রওনা দিলাম পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের দিকে। জাহাজ এগোচ্ছে। চারদিকে সবুজ গাছ। মাঝখানে ছুটে চলা নদী। সত্যিই সে এক অপরূপ দৃশ্য। চোখ দুটোকে যেন ফেরানো যাচ্ছে না। পেছন থেকে আবির স্যারের ডাক, ‘চল নাস্তা খাবে’।
দ্রুত নাস্তা সেরে জাহাজের ওপর চলে এলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে জাহাজ পৌঁছে গেল ‘করম-জাল’। দেরি না করে ক্যামেরা কাঁধে নেমে পড়লাম। রাস্তার ধরে সারিবদ্ধভাবে জুয়েল ভাইয়ের নেতৃত্বে হাঁটতেই হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, কুমির প্রজনন কেন্দ্র। সামনে তাকাতেই সুন্দরবনের সুন্দরী, গেওয়া, কাকড়া, গোলপাতার সারি-সারি গাছ। এসব দেখা শেষ হলে কবির ভাই বলল, চল জাহাজে যাই।
সকাল ১০টার দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম কঁচিখালী অভয়ারণ্যে। সবাই নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। ফরেস্ট অফিস নির্দিষ্ট সীমানা বেঁধে দিল। সঙ্গে গার্ড। সাবধান, মামারা (বাঘ) আছে। গার্ডের সঙ্গে তারেক ভাই, আমিরুল ভাই। ভয়ে গলাটা শুকিয়ে এলো।
খুব সাহস করে অভায়ারণ্যের দরজা পেরিয়ে বালিময় পথে যাত্রা শুরু করলাম। সামনে অবারিত গাছের সারি। মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে আনন্দ। কিন্তু ভয় পিছু ছাড়ছে না।
কঁচিখালী থেকে জামতলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। জামতলায় পৌঁছে সবাইকে গাইড করছে জুয়েল ভাই আর আমি ক্যামেরা রেডি করছিলাম তারপর ক্যামেরা নিয়ে রওনা হলাম আর সাথে সবাই। হঠাৎ লিলি আপু ও হানিফ ভাই বলল, এদিক তাকাও ওয়াহিদ। ঘুরে তাকাতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। বনের ফাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে মায়াবি হরিণ। হরিণগুলো দল বেঁধে মাঠের মধ্যে ঘুরছে। ব্যাস, অনবরত ক্যামেরা ক্লিক করেই যাচ্ছি।
রাতে সৈকতে অবস্থান করলাম। সন্ধ্যা থেকে শুরু হলো সে কি আনন্দ সবার পারফরমেন্সে সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হলো জাহাজে। জাহাজে আমাদের অবস্থান দুই রাত, আর এই দুই দিনই ছিল নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার আর অনুষ্ঠানমালা।
অবশেষে তবু চলে যেতে হয়। অবুঝ মন, যেতে দিতে চায় না। আবার ধরে রাখার সাধ্যও তার নেই। তাই এবার রওনা দিতে হবে। কটকা থেকে জাহাজে করে রওনা হলাম মংলার উদ্দেশ্যে। মীর-ঘোমারী, চাঁদপাই, পশুর নদী দিয়ে মংলায় এলাম। জাহাজ থেকে নামলাম একঝাঁক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে, বাসে করে আবার ফিরে এলাম ব্যস্ত জীবনে। সঙ্গে সুন্দরবনের সৌন্দর্যতা স্মৃতির পাতায়। সক্রেটিস সত্যিই বলেছিলেন, ‘সবচাইতে বড় স্কুল হচ্ছে এই পৃথিবীটা’। আর প্রকৃতি হচ্ছে তার পুস্তক। তবে বেতনটা একটু চড়া। চলে এলাম ঠিকই কিন্তু সঙ্গে করে নিয়ে এলাম সেই পাশের সিটে বসে থাকা মানুষগুলোর সাথে কিছু স্মৃতি।
ষ ওয়াহিদুল ইসলাম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন