বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

দ্বীপের রাজ্যে পাঁচদিন

প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের লোক-প্রশাসন বিভাগের প্রায় ১৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবাই শুধু শুনেছে, কেউ কখনো দেখেনি কয়েক ঘণ্টা পরেই তারা তাদের সেই কল্পনার রাজ্যে পা দিবে। ভাবতেই যেন মনে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। সেখানে পৌঁছিয়ে কি কি করবে, কোন স্টাইলে ক্যামেরা বন্দি হবে, নানা ভাবনা আর নাচ, গান, গল্প ও আড্ডায় ১২ ঘণ্টার দীর্ঘ ভ্রমণ কখন যে শেষ হয়ে গেছে কেউ বুঝতেই পারেনি। সকাল নয়টায় কক্সবাজারের পৌঁছিয়ে হোটেল মারমেইডে নাস্তা শেষে সমুদ্রস্নানে বেরিয়ে পড়ি। ঢেউয়ের তালে ফুটবল খেলা, একজন আর একজনকে ভিজানো, প্রবালে আঁছাড় খেয়ে পা কাটানো, সম্মিলিতভাবে ফটো তোলার মুহূর্তগুলো ছিল বড়ই রোমাঞ্চকর। সমুদ্র¯œান শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে ইউনানি বিচের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। উঁচু-উঁচু টিলার মধ্য দিয়ে আমাদের বাস দ্রুত গতিতে এগিয়ে চললো। ঘণ্টা খানিকের মধ্যেই আমরা ইউনানি বিচে পৌঁছে গেলাম। সমুদ্র সৈকতের তীরে বিস্তীর্ণ বালি রাশির মধ্যদিয়ে মোটরবাইক চালানো, সমুদ্রের ঢেউয়ে গা এলিয়ে দেয়া, সূর্যের সাথে ক্যামেরা বন্দি হওয়া দৃশ্যগুলো ছিল নিদারুণ। সূর্য ডোবার দৃশ্য অবলোকন করে সন্ধ্যার সময় আমরা আবার হোটেল মারমেইডে ফিরে এলাম। হোটেল থেকে ড্রেস পরিবর্তন করে আমরা সবাই কক্সবাজারের বিখ্যাত বারমিজ মার্কেটে গেলাম। যেটা বিভিন্ন প্রকার আচারের জন্যই মূলত বিখ্যাত। সেখান থেকে হরেক রকমের আচারের স্বাদ আস্বাদন করলাম এবং বারমিজ ড্রেস, মুক্তা ও ঝিনুকের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী কিনে হোটেলে ফিরে এলাম। তার পরের দিন সেই স্বপ্নের জায়গায় পদার্পনের সময় এসে গেল। আমরা ভোর হওয়ার পূর্বেই ঘুম থেকে উঠে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওয়া হলাম। নাফ নদীর বুক চিরে আমাদের লঞ্চ দ্রুত বেগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। নাফ নদীতে বসবাস রত গাংচিলে উড়াউড়ি আমাদের মনকে আন্দোলিত করেছিল। আর চার পাশের দৃশ্যগুলো ছিল খুবই মনমুগ্ধকর। অবশেষে সেই প্রতীক্ষিত জায়গায় এসে পৌঁছালাম। মনে এক অন্যরকম শিহরণ জাগ্রত হল। সেই সময় রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে গেল ‘পৃথিবীর বুকে যদি স্বর্গ থেকে থাকে কোন খানে, তবে এই খানে তা এই খানে’। এই নিদারুণ সৌন্দর্য আসলে বর্ণনা করার মত নয়। সারাদিন বাইসাইকেলে করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চারপাশ ঘুরোঘুরি, সেখানকার প্রধান ফল ডাবের পানি খেয়ে তৃষ্ণা নিবারণ, সমুদ্রতীরে হালকা জ্যোৎস্নাময়ী রাতে ঝিরিঝিরি বাতাসে নোনা বালি তীর ধরে একসাথে হাঁটা, গান আর আড্ডা ছিল বর্ণাতীত। অবশেষে মধ্যরাতের শেষ প্রহরে অবসন্ন দেহ বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা। পরের দিন আমরা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের স্থান ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। উত্তাল সমুদ্র মাঝখানে তিনটি ট্রলার হেলেদুলে ছুটে চলছে। আর এই সুযোগে সেলফি প্রেমিকরা সেলফি তুলতে ভুল করেনি। সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। যেখানে নিজ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ ছিল অফুরন্ত। এই সুযোগে অনেকেই তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করেছিল। তার পর বার-বি-কিউ পার্টি। বার-বি-কিউ পার্টি শেষে দল বেঁধে রাতের দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ। জ্যোৎস্নাময়ী রাতের মায়াময় দৃশ্যগুলো কখনো ভুলবার নয়। যা চিরদিনের জন্য মনের খাতায় স্মৃতি হয়ে থাকবে।
ষ নুর আলম হিমেল

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন