বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

ক্যাম্পাসে ভালোবাসার রং বেরং

প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মেহেদী তারেক : ভালোবাসা। হরেক রকম ভালোবাসা। তবে ক্যাম্পাসে ভালোবাসা যেন অন্যরকম। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে থাকার নাম ভালোবাসা। একসঙ্গে পড়াশোনার নাম ভালোবাসা। ক্যাম্পাসকে ঘিরেই ভালোবাসার ঋতু বদলায়। স্বপ্নেরা ভিড় করে। ঋতুরাজ বসন্ত এখন প্রকৃতিতে বিরাজমান। এমন দিনে কোকিলের মন উদাসকরা কুহু ডাকে এবং গাছের নতুন পুষ্পপল্লবে মনোহরি রুপে প্রিয় মানুষটির জন্য মন উচাটন হয়ে উঠবেনা তা কি হয়? সময় এখন মনের কোণে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা প্রকাশের। তরুণ-তরুণীদের কাছে এই ভালোবাসা প্রকাশের মোক্ষম সময় ভালোবাসা দিবস। এ মোক্ষম সময়কে কাজে লাগাতে ভুল করেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রিয় মানুষটির সঙ্গে নিরবে নিভৃতে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য বেরিয়ে পড়েছিল তারা। এদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ভেতরের খোলা বারান্দা, কলাভবন, মল চত্বর, ডাস চত্বর, হাকিম চত্বর, চারুকলা, মেয়েদের হলগুলোর সম্মুখ প্রাঙ্গণ। মেয়েদের হলের গলি ও বিভিন্ন চত্বর হয়ে উঠে তরুণ-তরুণীর মিলনমেলা। আসলে ভালোবাসার কি কোনো দিনক্ষণ আছে? বছরের নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে কি ভালোবাসতে হয়? কবি আবু হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘পাখি যদি ডাকে তবে প্রতিদিনই ভ্যালেন্টাইন ডে।’ তবে কি বলতে হবে ফাগুন এলে কোকিলের সঙ্গে ডেকে উঠে মনের পাখিও! প্রতিবছরের মত এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোবাসা দিবস উদযাপনের জন্য আয়োজনের কোন কমতি ছিল না।

কবিতায় বলা হয়, ‘হৃদয়ে লিখেছিনু তোমায়; বসন্তে তুমি আরও স্নিগ্ধ, আহা আরও উচ্ছল তুমি- ভালবাসা। বসন্তের আগুন-রাঙা শিমুল-পলাশ ভালবাসাকে সত্যিই রাঙিয়ে দেবে’’। মানব হৃদয়ে ফাল্গুনের আবির-উচ্ছ্বাস কাটেনি। একদিন পরই আরেক সুখের লগন। ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার দিন। ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালবাসা দিবস। ঋতুরাজ বসন্তের দ্বিতীয় দিনে ভালবাসা দিবসে বাঙালি মনের ভালবাসাও আজ হয় পবিত্র। ফুলে রাঙা আর বাসন্তী মোহে মুগ্ধ।
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন›স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ডদেন। সেই দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন›স স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন› দিবস ঘোষণা করেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও পালিত হয় বিশ্ব ভালবাসা দিবস। প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এর সংজ্ঞা আলাদা। যেমন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রায়হানুল হক শিবলির ভাষায়, মানুষের জীবনের প্রত্যেকটা দিন হতে পারে এক একটা ভ্যালেন্টাইন ডে । ভ্যালেন্টাইন ডে বলতে লাল শাড়ি, লাল টিপ পরে লাল গোলাপ হাতে গোড়াগুড়ি, ফুস্কা খাওয়া কিংবা পার্কে ভিড় জমানো নয় । ভ্যালেন্টাইন ডে একটা ইতিহাস ।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘এই দিনটা আমি একজন কে উৎসর্গ করবো তিনি হলেন সেন্ট ভ্যালেন্টিনে । অনেকেই হয়তও আজকের এই দিনের প্রকৃত ঘটনা জানে না । আর বর্তমান প্রজন্ম তো এখন এই দিনটাকে অন্যভাবে নিয়ে গেছে ।’
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির মামুন বলেন, ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এই ভালবাসা ছড়িয়ে পড়ুক, সারা বিশ্বে প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি অন্তরে। ভালবাসা শুধু মাত্র প্রেমিক- প্রেমিকার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, তা প্রকাশ করতে পারি পরিবার, সমাজ, দেশ-জাতি ও মানবতার কল্যাণে।’ বিশ্বভালবাসা দিবসে ঢাকা, জগন্নাথ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী পালন করলো ভিন্ন ধারার প্রতিবাদ। এরমধ্যে ঢাবি’র প্রতিবাদটা সবার নজওে এসেছে। প্রেম করার অধিকার সবার আছে। কেউ অনেকের সঙ্গে প্রেম করবে আর কেউ একজনের সঙ্গেও প্রেম করতে পারবে না- সমাজে এ বৈষম্য থাকতে পারে না। তাই প্রেমকে সর্বজনীন করার দাবিতে ভালবাসা দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বের হয় ব্যতিক্রমী এক মিছিল। বিশ্ব ভালবাসা দিবসে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিঙ্গেল সোসাইটি’ ব্যানারে কয়েকশ› তরুণ মিছিলে অংশ নেয়।
এসময় তারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘তুমি কে আমি কে, সিঙ্গেল সিঙ্গেল’, ‘আমার ভাই ছ্যাঁকা খাইলো কেন, সুন্দরী তুই জবাব দে’,‘আমি তুমি কিসে কম, ও মেয়ে তুই উত্তর দে’, ‘ কেউ পাবে কেউ পাবে না, তা হবে না তা হবে না’, ‘ভালবাসার ধর্মঘট চলছে, চলবে’, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, ভয়া প্রেমিক গেলি কই?’, ‘পুঁজিবাদী প্রেমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াও’। এসময় উৎসুক তরুন তরুণীরা হাসি তামাসায় মেতে ওঠে।
আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐশ্বয্যের মতে, ‘ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধুমাত্র অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। এটি একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। এর রং-রূপ-গন্ধ কিছুই নেই আছে শুধু অনুভূতি। বিশেষ কোন মানুষের জন্য ভালোবাসা স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়তো এমন মুহূর্তকেই স্মরণ করে লিখেছিলেন, ‘ দোহাই তোদের, এতটুকু চুপ কর/ভালবাসিবারে, দে মোরে অবসর।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন