তুমি এতো বড় চাকরি করেও আমাদের সব চাহিদা পূরণ করতে পারছো না। আর তোমার জুনিয়ররা কতো আরাম-আয়েশে জীবন কাটাচ্ছে। তাদের বৌ-বাচ্চারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। তাই বলি, এবার একটু আমাদের সবার ভবিষ্যতের কথা ভাবো।
জিসান মেহবুব চোখ কপালে তুলে বললেন,
তুমি কী আমায় উল্টো পথে হাঁটতে বলছো?
হ্যাঁ, প্রয়োজনে তাই করো। বেশি বেশি সৎ থাকার দরকার নেই। টাকা-পয়সা হয়ে গেলে সৎ থেকো। বাধা দেবো না।
এসব কী কথা বলছো! আস্তে কথা বলো। তাছাড়া ওঘরে খোকা ঘুমোচ্ছে।
তাতে কী হয়েছে?
অনেককিছু হয়েছে। আমাদের খোকা এখন স্কুলে পড়ে। ও ঘরে-বাইরে থেকে শিখছে। পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলো স্কুলে শিখলেও মানুষ হবার অনেককিছুই কিন্তু ও পরিবার থেকে শিখছে। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখেছো- আমরা কথা বললে ও কীভাবে গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনে। আমাদের অনুসরণ করে। তাই ওকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদেরও শুদ্ধতা দরকার।
এতোক্ষণ গভীর মনোযোগ দিয়ে স্বামীর কথাগুলো শুনলেন শিরিন আক্তার। এরপর আনমনে ভাবতে লাগলেন,
সত্যি তো, খোকা আমাদের দেখে দেখে বড় হচ্ছে। ওর আচরণ দেখে মাঝেমধ্যে আমি নিজেও চমকিত হয়েছি। কিন্তু এভাবে তো কখনও ভেবে দেখেনি।
জিসান মেহবুব আবার বললেন,
কী ভাবছো?
তোমার কথাগুলো ভাবছি। ঠিকই বলেছো। খোকা আমাদের অনুকরণ করে বড় হচ্ছে।
শুধু তাই নয়,শিরিন। একটু খেয়াল করে দেখো, আমাদের নামাজ পড়তে দেখে ও নামাজ পড়ে। মসজিদে যাবার সময় আমার সাথে যেতে চায়। আরেকটা বিষয় শোন- সেদিন ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে আমি যখন ওকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন ও পতাকা কিনে দিতে বলল। আমি একটি পতাকা কিনে নিয়ে হাতে দিতেই ও তা কপালে বাঁধতে বাঁধতে বলল,
"আব্বু, তোমার জন্য একটা নাও।"
ওর দেশপ্রেম দেখে আমি আনন্দে গর্ববোধ করি। আনমনে ভাবি- আমি যা মনে রাখিনি তা ও ঠিকই মনে রেখেছে। এ বয়সে এতো দায়িত্বশীল ও কীভাবে হয়েছে? এমন কৌতূহল থেকেই ওকে জিজ্ঞেস করি,
খোকা, এমন দেশপ্রেম কীভাবে শিখলে?
আমার দিকে তাকিয়ে ও মিষ্টি হেসে বলল,
কেনো আব্বু, তুমিই তো শেখালে! তোমাকে দেখেই তো আমি বড় হচ্ছি।
আমি তখন স্মিত হেসে জবাব দিলাম,
তা-ই।
হঠাৎ নিজের অজান্তে বাবার একটি কথা মনে পড়ে গেল। আমি তখন বিড়বিড় করে ক্ষীণকন্ঠে বলতে লাগলাম,
"ছেলেমেয়েরা বাবামায়েরই প্রতিরূপ।"
খোকা তখন আমার ক্ষীণকন্ঠ শুনে বলে ওঠলো,
আমিও তোমার প্রতিরূপ, ঠিক বলিনি, বাবা?
জবাবে হাসতে হাসতে বললাম,
একশত ভাগ ঠিক বলেছো, বাবা।
এরপর আরেকটি পতাকা নিলে ও নিজের হাতে তা আমার কপালে বেঁধে দেয়।
সত্যি!
হ্যাঁ, তাহলে বুঝো, বাবামায়ের আদর্শ সরাসরি সন্তানের মধ্যে চলে আসে। যে সন্তান তার বাবা-মা কিংবা পরিবারের কাছ থেকে মূল্যবোধ শিখে বড় হয়, তার বিপদগামী হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও আমাদের সুপথে চলতে হবে।
তোমার মতো করে এতোদিন আমি ভাবিনি। এই তোমাকে কথা দিলাম, আজ থেকে সন্তানের জন্য হলেও আমরা ভালো অভ্যাসগুলো জীবনে ধারণ করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন