শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

আশাশুনিতে বন্ধুকে হত্যার দায়ে কলেজ ছাত্রের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১:৫৯ পিএম

সাতক্ষীরা আশাশুনিতে প্রেমের সম্পর্কে বাঁধা মনে করে বন্ধুকে হত্যার দায়ে মোবাশ্বির হোসেন (২৩) নামে এক কলেজ ছাত্রকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দু’বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্ত মোবাশি^র হোসেন আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়লের ছেলে ও আশাশুনি ডিগ্রী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

মামলার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের শঙ্কর সরকারের ছেলে চন্দ্রশেখর সরকার ও একই গ্রামের মোবাশি^র হোসেন ছোটবেলা থেকে একই সাথে পড়ালেখা করতো। শোভনালীর নলকুড়া বিলে তাদের দুজনেরই পৈত্রিক মাছের ঘের রয়েছে। চম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আশাশুনি ডিগ্রি কলেজ থেকে একই সাথে এসএসসি ও এইসএসসি পাশ করার পর চন্দ্রশেখর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ও মোবাশি^র হোসেন আশাশুনি ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হন। এদিকে মোবাশি^রের সাথে একই গ্রামের ইন্দ্রানী ঘোষ ওরফে পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একজন হিন্দু মেয়ের সঙ্গে একজন মুসলিম যুবকের প্রেম মেনে নিতে পারেনি চন্দ্রশেখর। তাদের প্রেমজ সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাগবিতন্ডা হতো দু’বন্ধুর মধ্যে। এর ধারাবাহিকতায় চন্দ্রশেখরকে পথের কাটা ভেবে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মোবাশি^র।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর রাতে বাড়ি থেকে চন্দ্রশেখরকে বাড়ির পাশের একটি ঘেরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাপিয়াকে নিয়ে কথা উঠলে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চন্দ্রশেখরকে মারপিট করতে থাকে মোবাশি^র। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘেরের পানির মধ্যে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করেন তিনি। পরের দিন ওই ঘের থেকে চন্দ্রশেখরের মরদেহ উদ্ধার করে আশাশুনি থানা পুলিশ। ২০ অক্টোবর নিহতের বাবা শঙ্কর সরকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে ছেলেকে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- জিআর-২৫৬/২০। পুলিশ রাতেই সাতক্ষীরার একটি বাসা থেকে মোবাশি^রকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। পাপিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে ঘিরে বন্ধু চন্দ্রশেখরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে আদালত থেকে জামিন পেয়ে পালিয়ে যান মোবাশি^র।

এদিকে, গত বছরের ৩১ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর মোবাশি^র হোসেনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পলাতক অবস্থায় লিগ্যাল এইডের আইনজীবী অ্যাড. আনিছুজ্জামান আনিছ আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

মামলার নথি ও ১৪ জন সাক্ষীর জেরা-জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামি মোবাশি^রের বিরুদ্ধে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বয়স বিবেচনায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ এবং ২০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে আরও ২বছরের কারাদÐাদেশ দিয়েছেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌসুলি অ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার সময়ে আসামির বয়স ছিল মাত্র ২১। বয়স বিবেচনায় তাকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদÐ দেওয়া হয়েছে। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন