শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘বাংলাদেশের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ৪:১৪ পিএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২১ সালের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে ফের বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ‘২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্রাকটিসেস: বাংলাদেশ’-এ বলা হয়েছে, সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্নীতি, অপব্যবহার ও হত্যার ঘটনা তদন্ত ও বিচারে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে ব্যাপক অর্থে আইন শৃংখলা বাহিনীকে ‘দায়মুক্তি’ দেয়া হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত মঙ্গলবার রাতে গ্লোবাল রিপোর্টটি প্রকাশ করেন। বিশ্বের ১৯০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তৈরি করা বাৎসরিক রিপোর্টে এ দাবি করা হয়েছে। ওই প্রতিবদনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারটি ৭৪ পৃষ্ঠার।

বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে ওয়াশিংটন বলছে, ব্যাপক অর্থে আইন শৃংখলা বাহিনীকে দায়মুক্তি দেয়া হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্নীতি, নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনায় তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করেছে সরকার।

রিপোর্টের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের এক্সিকিউটিভ সামারিতে বলা হয়েছে- সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বহাল, যেখানে ক্ষমতা মূলত কেন্দ্রীভূত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়ে আরও পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, বাক্সভর্তি জাল ভোট, বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ অনিয়মের নানা অভিযোগ ছিল। ফলে পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনটিকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে স্বীকৃতি দেননি।

মার্কিন রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে পুলিশ, বর্ডার গার্ড এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মতো সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটগুলোকে নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গঠিত হয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তায় নিয়োজিত। দেশটির সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় প্রতিরক্ষার দায়িত্বে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করেন। বাংলাদেশে বেসামরিক নেতৃত্ব নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন উল্লেখ করে মার্কিন রিপোর্টে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করা হয়। তবে ওই রিপোর্ট বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টের সামারিতে ক্যাটাগরিক্যালি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের কিছু অভিযোগ তোলা হয়। বলা হয়, উত্থাপিত কিছু অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। যার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, সরকারি এজেন্টদের দ্বারা নিষ্ঠুর এবং অবমাননাকর আচরণ, নির্যাতন, মামলা; প্রাণনাশেন হুমকি; নির্বিচারে আটক; রাজনৈতিক কারণে বন্দি করা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিশোধ; বিচার বিভাগকে চাপে রাখা, স্বেচ্ছাচারী বা বেআইনী হস্তক্ষেপ; একজনের অপরাধে পরিবারের অন্য সদস্যকে হয়রানী; সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, অযৌক্তিক গ্রেপ্তার, সেন্সরশিপ আরোপসহ মতপ্রকাশ এবং মিডিয়ার উপর গুরুতর বিধিনিষেধ; ইন্টারনেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা; শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, তদন্ত এবং জবাবদিহিতার অভাব, যৌন সহিংসতা, শিশু নির্যাতন, বাল্য বিবাহ ও জোরপূর্বক বিবাহসহ মানবাধিকার লংঘনের আরও কিছু অভিযোগ করা হয়। রিপোর্টে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা আদিবাসীদের লক্ষ্য করে সহিংসতার হুমকি; লেসবিয়ান, সমকামী, ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার সুরক্ষার পথে প্রতিবন্ধক আইনের অস্তিত্ব বা ব্যবহার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ এবং শিশুশ্রমের মারাত্মক রূপের অস্থিত্ব থাকার বিষয়টি মানবাধিকার রিপোর্টে উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন