আগামী সপ্তাহে মানবপাচার প্রতিবেদন (টিআইপি রিপোর্ট)-২০২২ প্রকাশ করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ রিপোর্টে ২২টি অধ্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৮৮টি দেশের তথ্য থাকবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের মানবপাচার পরিস্থিতির ওপর আলাদা অধ্যায় থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা। কংগ্রেস ২০০০ সালে ট্রাফিকিং ভিকটিম প্রটেকশন অ্যাক্ট পাশ করে। তার আওতায় প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন’ (টিআইপি) প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা মানব পাচার প্রতিবেদন নামে পরিচিত।
ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছর বিশ্বের দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষ পাচারের শিকার হন। তাদের কাছ থেকে পাচাকারীরা বছরে ১৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করে। তিনি বলেন, মানব পাচারের ক্ষেত্রে ঘটনা কী ঘটছে সেটির উপর আলোকপাত করতে এবং আরও ভালো কিছু করার জন্য সরকার ও অন্যান্য অংশীজনের মধ্যে সহায়তাকে উৎসাহিত করতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। তিনি জানান, সমস্যার পরিধি বা সংখ্যা নিয়ে প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করি না। বাংলাদেশ থেকে বা বাংলাদেশের দিকে কত মানুষ পাচারের শিকার হয়, তা নয়; বরং সমস্যা মোকাবেলায় সরকার কী করছে তা প্রতিবেদনে আসে। প্রতিবেদনে আমরা বলি, সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সরকারের করার জন্য আমাদের কি কি সুপারিশ আছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করি আমরা। এটাকে নতুন অংশীদারিত্ব তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি, দেশগুলোকে শাস্তি দেওয়ার পথ হিসেবে নয়।
মানব পাচার প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরে জানানো হয়, প্রতিবেদনে থাকা বেশির ভাগ তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকারগুলোর কাছ থেকে নিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা দূতাবাস অন্যান্য সংস্থা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে ওই তথ্য মিলিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে এসব তথ্য পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা কাজ করি। এরপর বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যক্তি, এনজিও’র সঙ্গেও তথ্য সংগ্রহের জন্য কথা বলি।
তিনি বলেন, টিআইপি প্রতিবেদনটি পাচার রোধ করার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টায় বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। এটি মানবাধিকার, আইন প্রয়োগ এবং জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি মার্কিন সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। প্রতিবেদনে বাস্তব ফলাফলের সঙ্গে অগ্রগতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাচার রোধ করার প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সম্ভাব্য পদক্ষেপ এবং সরকারের প্রয়াসের ঘাটতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা নয়, সরকারের প্রচেষ্টার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানবপাচার একটি অপরাধ। এটি ব্যক্তি কল্যাণ, জনস্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা, জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে।
টিআইপি প্রতিবেদনে তিনটি স্তর তথা টায়ার রয়েছে। প্রথম টায়ারে থাকা মানে মানব পাচার প্রতিরোধে গৃহীত সর্বনিম্ন মান নিশ্চিত আছে। দ্বিতীয় টায়ার মানে সর্বনিম্ন মান নিশ্চিতের চেষ্টা করা হচ্ছে। তৃতীয় টায়ার মানে হলো, মানব পাচার প্রতিরোধে সর্বনিম্ন মান নিশ্চিত করার যথেষ্ট চেষ্টা নেই। আরেকটি হলো, টায়ার দুইয়ের ওয়াচ লিস্ট। ওয়াচ লিস্টে থাকা মানে হলো, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তৃতীয় টায়ারে নেমে যাওয়া।
কোনো দেশের মানব পাচার তালিকায় অবস্থান তৃতীয় টায়ারে থাকলে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। দেশটিতে মানবিক, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করা হতে পারে। এটা খুবই সিরিয়াস বিষয়। মানব পাচার প্রতিবেদনে তৃতীয় টায়ারে নেমে গেলে দেশটির পরিণতি খুবই খারাপ হতে পারে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই শুধু ব্যবস্থা গ্রহণ করে এমন নয়।
বরং যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি তার বলয়ের দেশগুলোও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে মানব পাচার পরিস্থিতির অবনতি মানে হলো বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়া।
মানব পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা স্বস্তিদায়ক হলেও কয়েক বছর আগে অবস্থা খারাপ ছিল। ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে মানব পাচারসংক্রান্ত মার্কিন প্রতিবেদনে দ্বিতীয় টায়ারের ওয়াচ লিস্টে ছিল বাংলাদেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে দ্বিতীয় টায়ারে উন্নীত হয় বাংলাদেশ।
তবে আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে টিআইপি প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান কী দাঁড়ায় তা নিয়ে ঢাকায় ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন