উত্তর : বিবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়ায় তিনটি মুক্তার মিলবন্ধন হয়েছিল। সেই তিন মুক্তার একটি হলো মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব পিরজী হুজুর রহ.। শাইখুল হাদিস রহ. এর উস্তাদ, মুফতি আমিনী রহ. এর উস্তাদ। সুতরাং বুঝে নিন কোন পর্যায়ের আলেম ছিলেন। আধ্যাত্মিকতার লাইনে ছিলেন সময়ের সবচে বড় বুযুর্গ।
পিরজী হুজুরের জন্ম: মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব পিরজী হুজুর রহ. কুমিল্লার সন্তান। উনিশ শতকের শেষের দিকে ১৮৯০ সালে বর্তমান কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার অন্তর্গত রামকৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারটি ছিলেন একটি ধার্মিক ও রক্ষণশীল পরিবার। তাঁর পিতা ছিলেন একজন মুনশি। নাম ছিল আহসানুল্লাহ রহ.।
দেওবন্দে গমন: মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব পিরজী হুজুর রহ. পড়ালেখার সূচনা নিজ পিতামাতার কাছেই। অতপর গ্রামের সুবাহি মকতব থেকে ধর্মীয় জ্ঞানের সূচনাপর্ব। অতপর নিজ গ্রামের মাদরাসায় প্রথম দিককার ক্লাসগুলো পড়েন। তারপর চলে আসেন ঢাকার মুহসিনিয়া মাদরাসায়। এখানে কিছুদিন পড়াশোনার পর উস্তাদদের পরামর্শক্রমে উচ্চতর পড়ালেখার জন্য চলে যান ভারতের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ। সেখানে দাওরা ও ফুনুনাতের পাঠ উত্তর সনদ গ্রহণ করেন।
পিরজী হুজুরের লেখাপড়া: মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব পিরজী হুজুর রহ. যখন দেওবন্দে পড়াশোনা করেন সে সময় ছিল দারুল উলুম দেওবন্দের স্বর্ণযুগ। তখন দেওবন্দের একেক উস্তাদ ছিলেন একেক বিষয়ের গভীর জ্ঞানের পন্ডিত। তিনি যাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. তাঁর কাছেই তিনি সিহাসিত্তার একাধিক কিতাব অধ্যয়ন করেন। তৎসময়ের প্রখ্যাত কারী আবদুল ওয়াহেদ ইলাহবাদী রহ. এর নিকট থেকে ইলমে কিরাতের সনদ গ্রহণ করেন। সেই সময়েই তিনি জাফর আহমদ উসমানী রহ. এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে তাঁর থেকে খেলাফতও লাভ করেন। এছাড়াও আধ্যাত্মিকতার লাইনে আশরাফ আলী থানবী রহ. এর বায়আত গ্রহণ করেন।
পিরজী হুজুরের কর্মজীবন: মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব পিরজী হুজুর রহ. যখন পড়ালেখা শেষ করেন তখন তার উস্তাদরা তাকে সরাসরি বিবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়ায় পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে এখানে আসেন মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও শামসুল হক ফরিদপুরী রহ.। বিবাড়িয়ায় কয়েক বছর থাকার পর তিনজনই চলে আসেন ঢাকায়। তিনজনের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা হয় জামিয়া হুসাইনিয়া বড়কাটারা, জামিয়া নুরিয়া কামরাঙ্গীচর ও ঐতিহাসিক লালবাগ মাদরাসা। জামিয়া হুসাইনিয়া বড়কাটারা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি প্রধান শিক্ষক ও মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মৃত্যু অবধি তিনি এই দায়িত্বে বহাল ছিলেন।
পিরজী হুজুরের আখেরাত যাত্রা: মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব পিরজী হুজুর রহ. জীবনের শেষ দিনগুলোতেও নিয়মতান্ত্রিক দরস তাদরিসে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু আল্লাহর এই ওলি কখন যে তার রফিকে আলার দরবারে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কেউ বুঝতে পারেনি। তিনি যে আকাশে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কেউ জানতোও না। অতপর ২৯ই সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সালে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন