শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চারজনের মৃত্যুদণ্ড

হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

লেখক, কবি, ভাষা বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল মামুন এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগিনা শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন এবং নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। এদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক রয়েছেন। ভাগিনা শহিদ এবং মিজানুর রহমান কারাগারে রয়েছে। গতকাল রায় প্রদানকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। গত ২৭ মার্চ ধার্যকৃত তারিখ অনুযায়ী এ রায় ঘোষণা করলেন আদালত। হুমায়ুন আজাদ মৃত্যুর ১৮ বছর পর মামলাটির রায় হলো।
রায় প্রদানকালে আদালত বলেন, প্রসিকিউশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। এ কারণেএই জঘন্য অপরাধের জন্য আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে।

আদেশের পর সরকারপক্ষের কৌঁসুলি ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। তবে আসামি পক্ষের কৌঁসুলি ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা সংক্ষুব্ধ। তাই মক্কেলদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।

আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আদালত চত্বরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে এজলাসে আসামিদের হাজির করা হয়। বেলা ১২ টার দিকে আদালত রায় প্রদান শুরু করেন। রায় প্রদান শেষে বিচারক এজলাস ত্যাগ করার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিনহাজ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা, আপনারা খুশি তো ? মন মতো রায় পেয়েছেন তো ?

এর আগে প্রসিকিউশন এবং ডিফেন্স তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করেন। আদালত মামলার অভিযোগকারীসহ ৪২ জন সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করেন। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি হুমায়ুন আজাদকে (৫৬) ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় তিনি রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত একুশে বইমেলা থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠছিলেন। হামলার পর হুমায়ুন আজাদকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার তাকে ব্যাংককে পাঠানো হয়। ৪৭ দিন পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। সুস্থ হয়ে তিনি জার্মান চলে গেলে ওই বছরের ১২ আগস্ট মিউনিখে একটি কক্ষে মারা যান। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানির মিউনিখে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এর আগে ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর নৃশংস হামলার পর তার মঞ্জুর কবি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি ‘হত্যা চেষ্টা’র মামলা করেন। পরে সেটিই ‘হত্যা মামলা’য় পরিণত হয়। ঘটনার ৩ বছর পর ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর সিআইডির পরিদর্শক কাজী আবদুল মালেক ৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে আবুল আব্বাস ভূইয়াঁ ও গোলাম মোস্তফা নামে দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম, হাফিজ মাহমুদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। চার্জশিটের বিষয়ে মঞ্জুর কবিরের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

তদন্তকালে মিনহাজ ও নূর মোহাম্মদ সাবু ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। ‘অধিকতর তদন্তে’ ৫ জেএমবি নেতাকে অভিযুক্ত করে সিআইডি একটি নতুন চার্জশিট দাখিল করে। ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল মামলাটিকে ‘হত্যা মামলা’য় পরিণত করার জন্য আদালতে আবেদন করে। ওই দিনই সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। এ মামলায় ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালত ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামিদের মধ্যে হাফিজ ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর টাঙ্গাইলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় হুমায়ুন আজাদের মেয়ে অ্যাডভোকেট মৌলি আজাদ বলেন, মামলাটির আগে বিচার হলে হয়তো পরবর্তীর ঘটনাগুলো ঘটতো না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন