রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন এ আইনের প্রয়োজন নেই : নোয়াব

প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন সাংবাদিকদের জন্য মর্যাদাহানিকর হবে বলে মনে করছে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। এ আইন পাস হলে শিল্প হিসেবে সংবাদপত্র আরো বেশি রুগ্ন হয়ে পড়বে বলে মনে করে সংগঠনটি। গতকাল রোববার নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ ও সহ-সভাপতি এ এস এম শহীদুল্লাহ খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, নোয়াব মনে করে নতুন এ আইনের কোনো প্রয়োজন নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশে নোয়াব (নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। নোয়াবের ধারাবাহিক দাবির কারণে সরকার ২০১৪ সালে সংবাদপত্রকে ‘শিল্প’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু ‘শিল্প’ সম্পর্কিত প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সংবাদপত্র পাচ্ছে না।
কোভিডের অভিঘাতের কারণে সংবাদপত্র শিল্প আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কোভিডকালে লকডাউনের সময় সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানালেও অন্যান্য খাতের মতো সংবাদপত্র শিল্প কোনো সহায়তা পায়নি। ২০২০ সালে নিউজপ্রিন্টের আমদানি মূল্য টন প্রতি ৫০০ ডলারের আশেপাশে থাকলেও এখন তা ১ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে ডিজিটাল বাস্তবতা ছাপা সংবাদপত্রকে পাঠকপ্রাপ্তি ও ব্যবসায়িক দিক থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
কিন্তু সংবাদপত্রের এ সঙ্কটকালীন সময়ের মধ্যেই গত ২৮ মার্চ জাতীয় সংসদে গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন, ২০২২ উত্থাপন করা হয়েছে। গণমাধ্যম বিল, সাংবাদিকতা, সংবাদপত্র, বেতন পরিশোধ, ছুটি নির্ধারণ, নিম্নতম বেতন হার নির্ধারণ, গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণ ও চাকরির শর্ত ও কর্ম পরিবেশসহ গণমাধ্যম কর্মীদের আইনি সুরক্ষা এবং দাবি নিস্পত্তির জন্য প্রয়োজনে আদালত গঠনের বিধান রেখে বিলটির খসড়া উপস্থাপন করা হয়। বিলটি ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রস্তাবিত আইনটির ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকবান্ধব নয় বলে সম্পাদক পরিষদ, সিনিয়র সাংবাদিক এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মতামত ব্যক্ত করেছেন।
আমাদের জাতীয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতা যে আজকের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে তা হয়তো আগে থেকে কেউ ভাবতে পারেনি। অথচ পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশকের স্বাধিকার আর স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বাপর অবিস্মরণীয় ভূমিকা রয়েছে আমাদের সংবাদপত্রের। নব্বই দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এমনিতেই সাংবাদিকতা পেশা অন্য আর দশটি পেশার চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষেত্রে এক ধরণের চাপ তৈরি করেছে। এর ওপর প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন পাশ হলে শিল্প হিসেবে সংবাদপত্র আরো বেশি রুগ্ন হবে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য তা হবে মর্যাদাহানিকর।
প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনে দেনাপাওয়া নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এক বা একাধিক বিভাগীয় এলাকার জন্য গণমাধ্যম আদালত স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এ আদালতের একজন চেয়ারম্যান এবং দুইজন সদস্য থাকবেন। কর্মরত জেলা জজদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান হবেন। দুই সদস্যের একজন হবেন গণমাধ্যম মালিক, আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী। উল্লেখ্য যে, সংবাদকর্মীদের দেনা-পাওনা এবং যে কোনো বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ‘শ্রম আদালত’ রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির মাধ্যমে গঠিত ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল’ বাংলাদেশের সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ ও বাক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কাজ করে আসছে। একইসঙ্গে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান বজায় রাখা ও সংশোধন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও সুরক্ষার উদ্দেশ্যেই সংস্থাটি কাজ করে থাকে। কাজেই প্রচলিত শিল্প আইন, বাংলাদেশ শ্রম আইন, প্রেস কাউন্সিল এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মাধ্যমেই সংবাদপত্রের সকল কার্যক্রম তদরকি করা সম্ভব। ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন’ নামে নতুন কোনো আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই।
নোয়াব মনে করে, প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা, শিল্প আইন এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই আইন পাশ হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্তসহ সংবাদপত্রের বিকাশকে সঙ্কুচিত করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন