ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি কর্মকর্তার দফতরের সামনে থেকে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে মারধর করে ২১ লাখ টাকার পে-অর্ডারসহ দরপত্র ছিনিয়ে নেয়া, দরপত্র জমা দিতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ডিএসসিসিতে দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ, দরপত্র ছিনতাই ও পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন। এদিকে মারধরের শিকার হওয়া পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছে ডিএসসিসি। ডিএসসিসি বলছে, ওই পুলিশ সদস্য টেন্ডার জমা দিতে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে তুলকালাম চলছে ডিএসসিসিতে।
গত বৃহস্পতিবার নগরভবনে এসব ঘটনা ঘটে। ডিএসসিসির ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর তিনটি ব্লক- এ, বি এবং সি তে উচ্ছেদ চালানো বেজমেন্টে কার পার্কিং এর ইজারার জন্য দরপত্র আহবান করা হয় গত ২৮ এপ্রিল। পার্কিং তিনটির প্রতিটির ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে সাত লাখ ষাট হাজার টাকা করে। এক বছরের জন্য এই ইজারা। ১৮ মে ছিল সিডিউল ক্রয়ের শেষ দিন এবং ১৯ মে সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ছিল জমা দেয়ার সময়। ১৯ মে বৃহস্পতিবার উক্ত ঘটনাগুলো ঘটে। দরপত্র ছিনতাই হওয়া হৃদি কন্সট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের দুইজনকে সিডিউল জমা দিতে নগর ভবনে পাঠাই আমি। সেখানে ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আউয়ালের নেতৃত্বে আমার লোকদের কাছ থেকে সিডিউল ছিনতাই করা হয়েছে। কাউন্সিলরকে প্রশ্রয় দিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়রের এপিএস নাছিরুল হাসান সজীব। আমি সাথে সাথে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা এবং জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ফোন দেই, কিন্তু তারা রিসিভ করেননি। সাথে সাথে মোবাইলে হোয়াটসএপে মেসেজের মাধ্যমে তাদের বিষয়টি জানাই। তারা আমার মেসেজ দেখেছে কিন্তু এ বিষয়ে কোন প্রতিত্তর বা কোন ধরণের ব্যবস্থাগ্রহণ করেননি। পরে বিষয়টি লিখিতভাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব ও সম্পত্তি কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগে তিনি কারো নাম উল্লেখ করেননি।
মেসার্স জাইন ইন্টারন্যাশনাল এর সত্ত্বাধিকারী জাকির হোসেন জানান, নগরভবনে সিডিউল জমা দিতে না পেরে সেগুনবাগিচায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।
বিষয়টি অস্বীকার করে ডিএসসিসির ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমি নিয়মিত কার্যক্রমে করপোরেশনে গিয়েছি। সেখানে টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কোন কারণই নেই।
মারধরের শিকার হওয়া ডিএসসিসির কন্ট্রোল রুমের ওয়ারলেসের দায়িত্বে থাকা এসআই কামরুল ইনকিলাবকে বলেন, ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন নিজে তাকে মারধর করেছেন। তিনি সিভিল ড্রেসে ছিলেন। পুলিশ পরিচয় দিলে তাকে আরো মারধর করা হয়। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএসসিসি মেয়রের এপিএস নাছিরুল হাসান সজীব ঘটনার একদিন আগে ফোন করে বলেন, আগামীকাল যেন অফিসে যাই। পরদিন আমি অফিসে গেলে অনেক মানুষের জটলা দেখায় সম্পত্তি কর্মকর্তার রুমের সামনে যাই। সেখানে গেলে আমাকে সাধারণ টেন্ডার জমাকারী ভেবে সন্দেহ করে মারধর করে কাউন্সিলর আউয়াল। পরে পুলিশ পরিচয় দিলে আবারও মারধর করা হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তখন কাউন্সিলর আউয়াল বলেন, এপিএস নাছিরুল হাসান সজীবের নির্দেশে তাকে মারা হয়েছে। তখন সাথে সাথে নাছিরুল হাসান সজীবকে ফোন করে বিষয়টি জানালে, তিনি (সজীব) বলেন, আমি কেন অফিসে এসেছি। প্রতিত্তরে কামরুল বলেন, ‘আপনিই তো আমাকে আসতে বলেছেন।’
এ বিষয়ে কাউন্সিলর আউয়াল বলেন, আমি মারধরের সাথে জড়িত না। আমি ছিলাম না। তবে পুলিশ হয়ে কেন সে টেন্ডার জমা দিতে গিয়েছে সেজন্য অন্যরা তাকে মারধর করেছে।
এদিকে উক্ত ঘটনায় সিটি করপোরেশন থেকে এসআই কামরুলের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ডিএসসিসির বক্তব্য, ‘পুলিশ হয়ে একজন ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে দরপত্র জমা দিতে গিয়েছেন তিনি। যা গুরুতর অপরাধ।’
পুলিশ সূত্র জানায়, এসআই কামরুলের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে এসআই কামরুল জানান, তিনিও ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে ডিএসসিসি মেয়রের এপিএস নাছিরুল হাসান সজীবকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল সাবরিন ইনকিলাবকে বলেন, তার দফতরের ভিতরে কোন ঘটনা ঘটেনি। কয়টি সিডিউল বিক্রি হয়েছে এবং কয়টি জমা পড়েছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি দফতরের হিসেব দেখে বলতে হবে।
এদিকে কেউ দরপত্র জমা দিতে না পারলে যথাযত কারণ দেখিয়ে সম্পত্তি কর্মকর্তার দফতরে আবেদন করলে পুনরায় দরপত্র আহবান করা হয়। এ বিষয়ে রাসেল সাবরিন বলেন, মূল্যায়ন কমিটি রয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পুনরায় দরপত্র আহবান করবেন কী না।
এদিকে দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনায় হৃদি কন্সট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন শাহবাগ থানায় জিডি করতে গেলে তার জিডি নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, শাহবাগ থানার ওসি জানিয়েছেন ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হবে, জিডি নয়। আজ রোববার অফিস খুললে সিটি করপোরেশনের সাথে কথা বলে মামলা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি। দেলোয়ার হোসেন বলেন, তৎক্ষণিক জিডি না করলে পে-অর্ডারের টাকা আটকে যায়। বিষয়টি জানানো হলেও থানায় জিডি নেয়া হয়নি। এসময় জিডির অর্ধেক লিখিত একটি কাগজও দেখান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন