উত্তর : সাহাবাদের মজলিস, বিশ্ব মানবের ইহা-পরকালের চিরশান্তি, মুক্তি ও উন্নতির পথ বাতলাতে বক্তব্য রাখছিলেন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম। তাঁর বক্তব্যে চলে আসে অতীত জনগোষ্ঠী বনি ইসরাইলের কিছু সংখ্যক দীর্ঘায়ুপ্রাপ্ত বিচক্ষণ মহাপুরুষের জীবনকথা। বিচক্ষণ আলেম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (রাঃ) বর্ণনা দিয়েছেন, দীর্ঘায়ুপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যাঁরা একনাগাড়ে জীবনের সর্বশেষ হাজারটি মাস আল্লাহর উপাসনায় মশগুল ছিলেন। তন্মধ্যে কেউ দিনের বেলা জেহাদ ও রাত্রিবেলা এবাদতেই মগ্ন থাকতেন, আবার কেউ দিবারাত্র এবাদতেই কাটাতেন। এ সময়ে তাদের থেকে পূন্য ব্যতীত পাপ বা ভ্রষ্টতা কিংবা অপ্রিয় কিছু সংঘটিত হয়নি। সাহাবারাও আশ্চর্যবোধ করলেন ওসব মনীষীদের জীবনাদর্শনের বর্ণনা শুনে। সেই মুহুর্তে জিব্রাইল (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে আশার আলো পবিত্র কুরআনের ‘সূরা কদর’ নিয়ে উপস্থিত হন। সূরাটি শুনে সাহাবারা খুশিতে আত্মহারা। আল্লাহ ও রসূলের প্রশংসায় তাঁরা মাতোয়ারা হয়ে উঠেন।
কী সংবাদ দেওয়া হয়েছে সূরাটিতে, মুসলিম জীবনে শবে-কদরের কী-ই বা প্রয়োজন, কী স্বার্থে নাজিল হালা সূরাটি? এর রহস্য উদঘাটনে সাহাবারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। নবী (স.) এর কাছ থেকে এর ব্যাখ্যা জানতে তাঁরা উদগ্রীব। নবী (স.) ব্যাখ্যা দিলেন, অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ কীভাবে শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তির পথ ও পন্থা পেয়ে যায় সে বিষয়ের সন্ধান দিতে সূরাটি অবতারিত। সাহাবাদের অন্তরে খুশির জোয়ার নেমে এল। প্রিয় নবী (স.) বলে দিলেন, যাঁরা ঈমান সহকারে পুণ্যের আশায় রমজানের এ রাতে এবাদত করবে তাঁদের পূর্বকৃত সমস্ত পাপ মাফ করে দেওয়া হবে। নবী (স.) শবে-কদর লাভের উদ্দেশ্যে রমজানের প্রতিটি রাত বিশেষ করে শেষ দশটি রাত জেগে থাকতেন ও পরিবারস্থ সকলকে জাগিয়ে দিতেন। শেষকালে গুরুত্ব সহকারে রমজানের শেষ দশদিন মসজিদে অবস্থান (এ’তেকাফ) করতেন ও বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশটি রাতে শবে-কদর তালাশ করবে। অন্য বর্ণনায় বলেছেন, বে-জোড় রাতে তালাশ করবে। আরও বলেছেন, শবে-কদর নির্দিষ্ট করে আমাকে বলা হয়েছিল, এ সুসংবাদটি তোমাদের দিতে গিয়ে দেখি তোমাদের দুই ভাই ঝগড়ায় লিপ্ত, তাদের বিবাদের কারণে শবে-কদরের নির্ধারিত তারিখ আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার আল্লাহপাক এই রাতকে রমজানের কোনও এক রাতে গোপন করে রেখে দিয়েছেন। তালাশ করে বের করতে হবে।
শবে-কদর দু’ধরনের হতে পারে। এক, যে রাতে পূর্ণ কুরআন লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজেল হয়েছিল সে রাতটি বছরের যে কোনও এক রাতেই হতে পারে, রমজানেও হতে পারে। দুই, আর যে রাতটিতে খোদাপ্রেমীদের মন পরিতুষ্ট হয় ও উপাসনায় পরিতৃপ্তি আসে, ফেরেস্তারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং মুসলমানরা আল্লাহর এবাদতে আত্মনিয়োগ করেন ও আল্লাহপাক বান্দাদের মর্যদার উচ্চাসনে উন্নীত করেন, তাঁরা বিশেষ নুরপ্রাপ্ত হন, ফেরেস্তাদের নৈকট্য লাভ করেন, তাদের দোয়া-প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়, সে রাতটি রমজানে বিশেষ করে শেষ দশদিনের কোনও এক বে-জোড় রাতে হয়ে থাকে।
শবে-কদরে জিব্রাইল (আঃ)-এর নেতৃত্বে অসংখ্য ফেরেস্তা করুণাময় আল্লাহতায়ালার নির্দেশে সবধরনের কল্যাণ, শান্তি নিয়ে অবতরণ করেন। কোনও কোনও বর্ণনায় সত্তর হাজার ফেরেস্তা অবতরণের উল্লেখ পাওয়া যায়। আল্লাহর এবাদতে মশগুল এমন সব নর-নারীকেই তাঁরা সালাম বা অভিবাদন জানান। দুনিয়ার সর্বত্র তাঁরা বিচরণ করেন ও আল্লাহর গুণগান করেন এবং আল্লাহর এবাদতে রত বান্দাদের দোয়ার সঙ্গে আমিন বলতে থাকনে। প্রত্যেক মুমিন বান্দার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন, তবে তাঁরা ওইসব বাড়ি বা গৃহে প্রবেশ করেন না যেখানে কুকুর, শূকর বা যে কোনও জীব-জন্তুর ছবি, মূর্তি কিংবা কোনও ধর্ষক অথবা ব্যভিচারিণী উপস্থিত, ওদের ওপর দয়া-শান্তি বর্ষিত হয় না। এ রাতে ফেরেস্তারা প্রাণীকুলের ভাগ্যলিপি নোট করেন ও এক বছরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
উত্তর দিচ্ছেন : আফতাব চৌধুরী। সাংবাদিক ও কলামিষ্টি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন