শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকে অভিযান দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন নেই

৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০২০ সালে করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৭ হাজার ২৪৪টি। তবে বাস্তবের এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন। তবে এতোগুলোর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৫শ ১৯টির। এসব হাসপাতালের অধিকাংশের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের কারণে অবৈধ হাসাপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এতোদিন পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ক্লিনিক বন্ধে গতকাল ঢাকা, যশোর, টাঙ্গাইল, ঝিনেইদহ, ভোলা, নেত্রকোনা, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি শহরে অভিযান চালানো হয়েছে। এর আগে গত ২৬ মে সারাদেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। আদালত গত কয়েক বছরে কয়েক দফায় অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় অবৈধভাবে চিকিৎসা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যশোরে ৬টি, টাঙ্গাইলে ৪টি ও ঝিনাইহদে ৮টি ক্লিনিক সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে হাজার হাজার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব হাসপাতালে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চিতিৎসা দেয়া হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে রোগীদের পকেট থেকে হাজার হাজার টাকা খসানো হয়। ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপ বলছে, দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা বর্তমানে ১৭ হাজার ২৪৪টি। শৃংখলা আনতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণার পর লাইসেন্স নবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয় ২০২০ সালে। ওই বছরের ২৬ মার্চ লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। আবেদন জমা পড়েছে ১৩ হাজারের কিছু বেশি।

লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ ছাড়া রোগ পরীক্ষা, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে রোগ পরীক্ষা, মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার, অপারেশন থিয়েটারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন ও নিবন্ধন জটিলতা নিরসনসহ সেবার মান বৃদ্ধি ও অনিয়ম বন্ধে গত ২০২০ সালের ২৬ জুলাই ৯ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সারা দেশের হাসপাতালে সেবার মান পর্যবেক্ষণে ৪৫ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই বছরের গত ৮ আগস্ট টাস্কফোর্স কমিটির সভায় ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন বা নিবন্ধন নিতে আবেদনের সময় বেঁধে দেয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে অনুমোদিত ও আবেদন করা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ৪ হাজারের মতো হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটিও বন্ধ হয়নি। ২০২০ সালে হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নে আবেদনের শেষ সময় ছিল ওই বছরের ২৩ আগস্ট। কথা ছিল যারা আবেদন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে হয়নি অভিযান। যে ১৩ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল, তাদের মধ্যে হালনাগাদ লাইসেন্স আছে ৫ হাজার ৫১৯টির। যাচাই-বাছাই ও পরিদর্শনের অপেক্ষায় ৭ হাজার ৪১টি। অসম্পূর্ণ আবেদনপত্র পাওয়া যায় ৩ হাজার ৩০৪টি। এগুলোর কোনোটির ট্রেড লাইসেন্সই নেই, কোনোটির নেই পরিবেশ ছাড়পত্র বা অবস্থানগত ছাড়পত্র, কোনো কোনোটির অন্য ত্রুটি আছে। ফলে আইন অনুযায়ী এদেরও নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি তেমন হয়নি।

স্বাস্থ্যা অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে গত শনিবার থেকে বিভিন্ন জেলায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাা নিতে দেখা গেছে প্রশাসনকে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রানুয়ারা খাতুনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সিলগালাকৃত ক্লিনিকগুলো হয় স্বদেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক, আমানত ক্লিনিক এন্ড হসপিটাল ও ডিজিল্যাব।

নেত্রকোণার সদরের পৌরশহরের নাগড়া এলাকার অনুমোদনহীন তানিয়া ও লির্বাটি প্রাইভেট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বন্ধ করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় হাসপাতাল দুটিকে পাঁচ হাজার করে মোট দশ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নেত্রকোণায় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা আক্তার।

হাইকোর্টের নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা শহরের অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বিভিন্ন ক্লিনিকের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা স্বাস্থ্যা বিভাগ। এসময় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়ক এলাকার তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দুইটি ক্লিনিক সিলগালা করে বন্ধ করা হয়েছে। অভিযান চালান সদর উপজেলা স্বাস্থ্যা ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আওলিয়ার রহমান। অভিযানে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সেন্ট্রাল মেডিকেল সেন্টার, আমাদের সনো ও চুয়াডাঙ্গা আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেন্টার সিলগালা করা হয়। এছাড়া ইসলামী হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক বিভাগ ও তিশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার মৌখিকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। অভিযানের খবরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রেখে পালিয়ে যান মালিকরা। সদর উপজেলা স্বাস্থ্যা ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আওলিয়ার রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গায় ২৫ টি ক্লিনিক ও প্যাথলজি চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ভোলায় নিবন্ধন না থাকায় আব্দুল খালেক মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী সুজার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যা বিভাগের একটি টিম ভোলা নতুনবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঐ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাদেশের সব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সময়ের পর নিবন্ধনহীন কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে সাক্ষর করেছেন সাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের মনিটরিং এবং সুপারভিশন নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়ালি এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে নিয়মিত আমাদের অভিযান চলছে। ৭২ ঘণ্টা শেষ হলে আমরা বসব। নিবন্ধনের কতটা অগ্রগতি হয়েছে, অবৈধ কতগুলো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হয়েছে, আমরা তা দেখব। এরপর সে অনুযায়ী- বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তাদের সঙ্গে বসে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

কতগুলো অবৈধ ক্লিনিক এ পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোববার পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের পর আমরা সেই তথ্য জানাব।
পরিচালক ডা. বেলাল হোসেন বলেন, সারা দেশে কতগুলো অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। কারণ যারা অবৈধভাবে ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার দিয়েছে, তাদের সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না।

এর আগে সাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনিবন্ধিত ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে কিন্তু নবায়ন করেনি। তাদের নবায়ন করতে একটি সময় বেঁধে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে নিবন্ধন করতে না পারলে সব কার্যক্রম স্থগিত করা হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে এনেসথেসিয়া ও ওটিতে কোনো অনিবন্ধিত ডাক্তার বা কাউকে রাখা যাবে না। এমনটি করা হলে ওইসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধনের আবেদন করেছে তাদের দ্রুত নিবন্ধন দিতে হবে। নিবন্ধন হওয়ার আগে প্রতিষ্ঠান চালানো যাবে না।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নগরীতে নানা অনিয়মের অভিযোগে দুটি হাসপাতাল ও দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস। গতকাল শনিবার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠান চারটিকে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয় লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র না পাওয়া, পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকা, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো-কসমোপলিটন হাসপাতাল, পপুলার মেডিক্যাল সেন্টার, নিরুপনী প্যাথলজি ল্যাবরেটরি ও এসটিএস হাসপাতাল।

চট্টশ্বেরী রোডের চট্টগ্রাম কসমোপলিটন হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় হাসপাতালের লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এজন্য হাসপাতালটি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের কাগজপত্র থাকলে তা সিভিল সার্জন অফিসে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ডবলমুরিং থানার ডিটি রোডের পপুলার মেডিক্যাল সেন্টারে দেখা যায় ব্লাড কালেকশানের জন্য কোন পাশ করা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। এক্স-রে রুম ও প্যাথলিজ রুম মানসম্মত নয়। এক্স-রে রুমের দেওয়ালের ঘনত্ব ৫ ইঞ্চি। ছাদে লিড শিট লাগানো নেই। এছাড়া লাইসেন্স, ভ্যাট ট্যাক্সের কাগজপত্র না থাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দামপাড়া এলাকার নিরুপনী প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতেও পরির্দশনকালে রিসেপশনের সামনে রোগী বসিয়ে ব্লাড কালেকশন করতে দেখা গেছে। এছাড়া অনলাইনে আবেদন পাওয়া যায়নি, পরিবেশ ছাড়পত্র, ভ্যাট, টিন সার্টিফিকেট পাওয়া যায়নি। ল্যাবরেটরিটি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পাওয়া গেছে। পাঁচলাইশের এসটিএস হাসপাতালে দালাল চক্রের আনাগোনা দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তারা হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। আরো দুটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান সিভিল সার্জন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ১৪টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ৯টিই অবৈধ। গতকাল শনিবার বিকেলে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। সেগুলো হচ্ছে ফুলতলা বাজারের জামিরা সড়কের কাজী নুর হোসেনের মালিকাধীন আল-শেফা ডায়াগনস্টিক, ইমরানুল ইসলাম রুমনের সেবা ডায়াগনস্টিক, ডা. শফিউদ্দিন মোল্যার করিমুনেচ্ছা প্যাথলজি, শিকিরহাট সড়কের মো. ইরসাফিল হোসেনের স্কয়ার ডায়াগনস্টিক, বেজেরডাঙ্গা বাজারের হাসানুজ্জামান মোড়লের মেডি ল্যাব প্যাথলজি, শিরোমনির ডা. কামাল হোসেনের দি গ্রেট হাসপাতালের প্যাথলজি। এছাড়া নতুনহাট এলাকার নিপুন চন্দ্রের মডার্ণ ডায়াগনস্টিককে সীলগালা করে দেয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জেসমিন আরার নেতৃত্বে অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের আরএমও ডা. হাসিবুর রহমান, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন, এসআই নিরঞ্জন কুমার।

নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ, লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে প্রশাসন। অভিযানকালে বেগমগঞ্জ উপজেলায় ৩টি, সোনাইমুড়ী উপজেলায় ২টি, নোয়াখালী সদরে ১টি, সেনবাগ উপজেলায় ২টি ও চাটখিল উপজেলায় ১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক সীলগালা করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দিনব্যাপী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন এ অভিযান পরিচালনা করেন।
সীলগালা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- চাটখিলের এশিয়ান ফিজিওথেরাপি সেন্টার, সদরের দত্তেরহাটের নোয়াখালী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, বেগমগঞ্জের ছয়ানির মালিয়া ডায়াগনস্টিক এন্ড ডায়াবেটিস, বাংলাবাজারের নিউ চৌধুরী প্যাথলোজি ল্যাব, রাজগঞ্জের বিসমিল্লাহ্ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সোনাইমুড়ীর আল হাবিব হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, কাশিপুরের লাইফ লাইন প্যাথলোজি, সেনবাগের কানকিরহাটের সিটি ডায়াগনস্টিক এবং ছাতারপাইয়া বাজারের জেনুয়িন ডায়াগনস্টিক ল্যাব অ্যান্ড কনসালটেশন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, গতকাল সকাল থেকে জেলার প্রতিটি উপজেলায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় বৈধ কাগজপত্র না থাকায় গতকাল সকাল থেকে ৮টি ও গত শুক্রবার বিকেলে চাটখিলে ১টি প্রতিষ্ঠান সীলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও স্বাস্থ্যসেবাসহ ৫টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ১টি ক্লিনিককে সতর্কীকরণ করেছেন সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম। এসময় কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আকুল উদ্দিন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তালুকদারসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযানে প্রতীক আধুনিক ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রদীপ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিশ্বাস ডেন্টাল কেয়ার, শিমুল ডেন্টাল কেয়ার, কুমারখালী ডায়াবেটিক সমিতি বন্ধের নির্দেশ ও নোভা ক্লিনিককে সতর্ক করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

অভিযানকালে ক্লিনিক মালিকরা সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পদ্মা ডিজিটাল ক্লিনিক, আমানত স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং স্বদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল তাৎক্ষণিক বন্ধের নির্দেশ দিয়ে সীলাগালা করে দেয়া হয়। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে ডিজি ল্যাবকে ৩০ হাজার, কমফোর্ট ক্লিনিককে ৩০ হাজার ও দি সিটি ক্লিনিককে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম। এসময় জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল শনিবার সকালের দিকে নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহাবুবুর রহমান এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ হাসানের নেতৃত্বে প্রথমে শহরের মাদরাসা মোড়ে সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অনুমোদনের কোন কাগজপত্র না থাকায় সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সীলগালা করে দেওয়া হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পদ্মা ক্লিনিক, প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মোট ১১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সীলগালা করে দেন। এসময় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. রাসেলসহ অন্যন্যরা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, শেরপুরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে গতকাল শনিবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য অধিদফতর। দুপুর ১২টা থেকে শুরু করে দিনব্যাপী পরিচালিত অভিযানে ক্লিনিকগুলোতে কোন বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাৎক্ষণিক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, শেরপুর জেলাজুড়ে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে ১০১টির মধ্যে ৪২টি বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য্য। এসময় যে সকল প্রতিষ্ঠানের কাগজের মেয়াদউত্তীর্ণ রয়েছে, তাদের আগামি ১৫দিনের সময় দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
রেজাউল করিম মুকুল ২৯ মে, ২০২২, ৯:৫৯ এএম says : 0
বাংলাদেশের চিকিৎসা এখন সেবা নয়, অতি লাভজনক একটি ব্যবসা। ডাক্তার, নার্স, ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগোনষ্টিক সেন্টার ঔষধ কোম্পানি যোগসাজসে চিকিৎসার ব্যবসা করে। এরা সরকার ও জনগণকে জিম্মি করে প্রতারণার পথে অর্থ উপার্জনে মরিয়া হয়ে উঠে। ডাক্তারি লাইসেন্স ও সরকারি হাসপাতালের পদ পদবীর অপব্যবহার করে কেউ কেউ ফৌজদারি অপরাধ করেন, প্রচলিত আইন ও সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে এরা সংঘবদ্ধ হয়। রাষ্ট্রপতি অনেক আগেই এদের সতর্ক করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এদের দুর্বৃত্ত, ডাকাত বলেছেন। আপামর জনগণ এদের কর্মকান্ডে ত্যক্ত-বিরক্ত। এদের কারণে হাজার হাজার রোগী আজ ভারতমুখি।
Total Reply(0)
মোশাররফ হোসেন ৩ জুন, ২০২২, ৩:১২ এএম says : 0
স্বাস্থ্য খাতটি একটি অতিব গুরুত্বপূর্ন। গনমানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম। অথচ এখানে কেউ কসাই সাজবে আবার কেউ ঠিকমত তদারকি না করে মাসোহারা গুনবে এটি হতে পারে না। আমি একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে বিশ্বাস করি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলো প্রয়োজনীয়। নীতিমালা অনুসরণ করে যদি পরিচালিত হয় তবে খুবই ভাল কথা। বৈধভাবে চলমান থাকলে স্বাস্থ্য খাতের যেমনি উন্নয়ন হবে ঠিক তেমনি জীবীকা নির্বাহে কাজ করে বেঁচে থাকবে নূন্যতম ৮০ হাজার থেকে এক লাখ পরিবার। এ খাতে শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত অসংখ্য মানুষ কর্মরত আছে। যা কিনা বেকারত্ব দূরীকরণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। খাতটিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে, তাই এগুলো স্থায়ী ভাবে বন্ধ করার সুযোগ নেই, এসব অভিযান সাময়িক। তবে সরকারি নজরদারী কঠোর হওয়া প্রয়োজন। আগে সরিষার ভুত তাড়াতে হবে অন্যথায় এসব অভিযান লোক দেখানো মাত্র বলে গন্য হবে। এ জন্য মহানগর,বিভাগ,জেলা,উপজেলা পর্যায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন