স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আলোকিত মানুষ তৈরির লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি গৌরবের ৩৭ বছর পেরিয়ে পদার্পণ করছে ৩৮ বছরে। আধুনিক শিক্ষার সাথে ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় ঘটিয়ে আলোকিত মানুষ তৈরির মহান উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।
জাগতিক শিক্ষার সাথে ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় ঘটিয়ে আলোকিত মানুষ তৈরির মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালটির যাত্রা শুরু হয়েছিল কালের আবর্তে তা আজ ভুলোণ্ঠিত। তবে শত বাধাবিপত্তি ও ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরই মধ্যে দেশকে উপহার দিয়েছে অসংখ্য আলোকিত মানুষ। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বর্তমানে দেশ-বিদেশের বড় বড় পদে অবস্থানের মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জল করছে। সরকার দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার গুরুদায়িত্ব দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিব্যপ্তি সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্বাধীন দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে রূপান্তরিত হয়েছে।
১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি দুটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগে মোট ৩০০জন ছাত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এ্যান্ড রিসার্চ (আই.আই.ই.আর) নামে রয়েছে একটি ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে ৭টি। যার মধ্যে ছাত্র হল ৪টি ও ছাত্রী হল ৩টি। ফলে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা ভোগ করছে। বিভিন্ন বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১১৮০৫ জন। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রী নিয়েছে ৪৭০ জন এবং পিএইচডি করেছে ৩০৭ জন শিক্ষার্থী। বর্তমানে ৩৫৯ জন শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
১৭৫ একর আয়তনের এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আছে ২টি প্রশাসনিক ভবন, ১ টি অত্যাধুনিক মিলনায়তনসহ ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি), ভাইস চান্সেলরের বাসভবনসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোয়াটার, দৃষ্টিনন্দন লাইব্রেরী, শহীদ মিনার, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ১টি মুক্তবাংলা, ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত শহীদের স্মারক শহীদ স্মৃতিসৌধ, ক্যাম্পাসভিত্তিক সর্ববৃহৎ মসজিদ, চিকিৎসাকেন্দ্র, জিমনেশিয়াম, প্রকৌশল অফিস, লেক, পুকুর, বাসের ডিপো, ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ। ফুটবল ও ক্রিকেটের জন্য আছে স্বতন্ত্র বিশাল ও নান্দনিক খেলার মাঠ। নির্মাণাধীন রয়েছে ‘রবীন্দ্র নজরুল কলা ভবন’ এবং ছাত্রদের জন্য ‘শেখ রাসেল’ নামে নতুন একটি হল। এছাড়াও ক্যাম্পাসের মধ্যে রয়েছে একটি ডাকঘর ও ইবি থানা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় আছে ১২টি চত্বর। যে চত্ব¡রগুলো শিক্ষার্থীদের আড্ডার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচয় বহন করে। তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য, ডায়না চত্ব¡র, প্রশাসন ভবন চত্ব¡র, মিডিয়া চত্ব¡র, সবুজ চত্ব¡র, টিএসসিসি চত্ব¡র, লাইব্রেরী চত্ব¡র, পশ্চিম পাড়া প্রভৃতি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই মহাবিদ্যাপীঠটি এখন এ অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগের সিলেবাস আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বর্তমানে দেশ-বিদেশে শিক্ষকতাসহ নানা পেশায় নিয়োজিত আছে। নতুন প্রশাসন আসার পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে যে আধুনিকতার ছোঁয়া এসেছে তা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। আর ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কিছু প্লান হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করি কাজটি শেষ হলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহু গুণে বেড়ে যাবে। ’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন