বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

পথচলার ৫০ বছরে চবি

রওশন-আরা-আফরোজ রিমা | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৫৫ পিএম

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে পালিত হলো দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য মহাউৎসবের একটি দিন। স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখতে দেখতে পঞ্চাশে পৌঁছল। যারা বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালে বা প্রথমদিকের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাদের জন্য এই দিনটি বড় পাওয়া। সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছিলেন প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
চবির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের খবর পেয়েই উৎফুলতায় মেতে উঠেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সুবর্ণজয়ন্তীকে উপলক্ষ করে প্রায় দুই মাস আগেই আড্ডা-আলোচনার শুরু। ফেসবুকে মাতামাতি। ইভেন্ট আর গ্রুপ খোলার প্রতিযোগিতা। সেখানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের সময়ের ক্যাম্পাসের ছবি, নিজেদের ছবি, আড্ডার ছবি প্রকাশ করায় সবার আগ্রহ তুঙ্গে।
১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও সেসময় ক্যামেরার প্রতুলতা ছিল না। কিন্তু তার পরবর্তী সময়ের শিক্ষার্থীরা সেই অভাব যেন অনেকটাই কাটিয়ে দিয়েছে। বরং তাদের তোলা কাটা পাহাড় রাস্তার ছবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভবন কলা অনুষদ, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির ছবি সেই সময়টা বর্তমানদের আরো কৌতূহলি করে দিয়েছে।
এ মিলনমেলায় যোগ দিতে আগে থেকেই চট্টগ্রামে চলে এসেছিলেন হাজারো সাবেক শিক্ষার্থী। চবি শিক্ষার্থীতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। ছবিতে ছবিতে পুরো ফেসুবুক ভরে উঠেছে। কারো কারো কাছে এ আনন্দ ঈদের মতোই। সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশ নিতে এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৫৮ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ২০ হাজার ২৯২ জন।  প্রথম দিন বিকেল তিনটায় নগরীর বাদশাহ মিয়া সড়কে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সুবর্ণজয়ন্তীর আনুষ্ঠানিকতা। এ শোভাযাত্রা নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে সিআরবি’র শিরীষতলায় এসে শেষ হয়। সন্ধ্যায় জিইসি কনভেনশন সেন্টারে সাবেক শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় ‘ওয়েলকাম নাইট’। সাথে ছিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন। ওয়েলকাম নাইটে বিশেষ আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠানে মঞ্চ মাতান দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপন চৌধুরী।
দ্বিতীয় দিনে ছিল সুবর্ণজয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠান। সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এ মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সুবর্ণজয়ন্তী বক্তা ছিলেন, ইমিরেটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান।
১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বৃহত্তর চট্টগ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ৫০ বছর আগে চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে সবুজ, শ্যামল পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চারটি বিভাগ, ২০৪ জন শিক্ষার্থী ও সাত শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালে ১৮ নভেম্বর উদ্বোধনের পর ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। অর্ধশতাব্দী পরে বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি অনুষদের অধীনে সাতটি ইনস্টিটিউট ও ৪৩টি বিভাগ রয়েছে। যার বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার (২৩ হাজার ৮৭৬ জন), শিক্ষক ৮৯৯ জন, কর্মকর্তা ৩৪৮ জন, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা ৫০৬ জন, কর্মচারী ১০৬৩ জন। তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম, কুমিলা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট জেলা নিয়ে গঠিত বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগে শিক্ষা বিস্তারে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আন্দোলন চলছিল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আন্দোলনের ফলস্বরূপ ৬০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও তা চট্টগ্রাম নাকি কুমিলায় হবে তা নিয়ে শুরু হয় মতানৈক্য। অবশেষে স্থান নির্ধারণ হয় চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নে। ১৯৬৪ সালের ২৯ অগাস্ট পূর্ব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খান স্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর। চারদিকে পাহাড় ঘেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয়তন প্রায় এক হাজার ৭৫৪ একর। বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, আবাসিক এলাকা, হ্রদ, পুকুর ও পাহাড় দিয়ে ঘেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠার কথা থাকলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে হয়ে উঠেনি। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৩টি ছাত্রাবাস। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন এমন শিক্ষকদের মধ্যে একজন ড. মুহাম্মদ ইউনূস (অর্থনীতি) পেয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। আলোচনা সভার পরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা জানানো হবে। শহীদদের সম্মাননা জানানোর পরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানদের সাথে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে মেলবন্ধন তৈরি করা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান ভিসি হিসেবে সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারা আমার জন্য গৌরবের।”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন