শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

আলেম সমাজের ঐক্য ও সংহতি একান্ত দরকার

মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলাম কোন নতুন ধর্ম নয়, বরং সৃষ্টির শুরু থেকেই ইসলামের উৎপত্তি। আদম (আ.) ছিলেন এই পৃথিবীর প্রথম মানব এবং ইসলামের প্রথম নবি। আর শেষ নবি হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায়ের মধ্য দিয়ে নবুয়তের অবসান ঘটে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরবর্তীতে দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য রেখে গেছেন সোনালী মানুষ সাহাবীদেরকে। যাঁদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়ারাদ্বু আনহু’ (তাঁরা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট আল্লাহ তাঁদের ওপর সন্তুষ্ট)। তাঁরা সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান লাভ করেছেন। তাঁরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রথম উত্তরাধিকারী। সাহাবায়ে কেরামের পর এই আসমানি সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়েছেন তাবেইরা। এরপর তাবেতাবেইরা। এভাবেই চলমান রয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আসমানি আমানত রক্ষার পবিত্র ধারা। আল্লাহ যত দিন চাইবেন এ ধারা বহমান থাকবে। যুগে যুগে যাঁরা এই আসমানি আমানত রক্ষা করে আসছেন, তাঁরাই যুগের হক্কানি উলামায়ে কেরাম। যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমাদের হাত পর্যন্ত পৌঁছেছে তাফসির, হাদিস, ফিকহ ও অন্যান্য ইসলামী শাস্ত্রগুলোর সুবিন্যস্ত বিশাল বিশাল গ্রন্থাবলি।

ইসলামের প্রাথমিক কাল থেকেই দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দেয়া ব্যক্তিদের বিরোধীতা ছিলো তুঙ্গে। ইসলাম যখনই কারো স্বার্থের হানি ঘটিয়েছে তখনই ইসলাম ও আলেমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা হয়েছে। কাফের মুশরিকদের পাশাপাশি মুসলিম নামধারী মুনাফিক কেউই ইসলামের বিরোধীতায় পিছিয়ে নেই। যুগ যুগ ধরে প্রকাশ্য বিদ্বেষের মধ্যদিয়ে ইসলামের আলো নিভিয়ে দিতে চাইলেও বর্তমান সময়ে সে পদ্ধতির পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সময় কালে সরাসরি বিরোধীতা না করে ইসলামের সুধী সেঁজে চুরি মারার পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। ধর্মবিদ্বেষী মানুষ গুলো যখন দেখলো আসলে মানুষদের ধর্মবিমুখ করা যাবেনা। তখন তারা নতুন ফন্দি আটলো। ইবাদাতের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে শিরক-বিদয়াতের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। যারা জীবনভর রোজার নামাজের বিরোধীতা করেছে তারাও এখন নামাজ-রোজার প্রশংসা করে। তারা বলতো রোজা উপবাস; যা স্বাস্থ্যহানির প্রথম দ্বার। অথচ তারাই আজ প্লেটো এরিস্টটলের উদাহরণ টেনে বলেন, প্লেটো এরিস্টটলরা মস্তিষ্কের বিকাশের স্বার্থে উপবাস থাকতেন। যারা চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়ে রোজাকে মোকাবেলা করার প্রয়াস চালাতেন তারা আজ বলছেন রোজা রক্তের কোলেস্টরল কমায়; যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। ইসলাম বিদ্বেষীরা মুমিনদের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে না পেরে বর্তমানে নতুন মাত্রায় নিজেদেরকে ইসলামের খাদেম হিসেবে উপস্থাপন করতে বদ্ধ পরিকর। তারা আজ মনগড়া যুক্তি তত্ত্ব উপস্থাপন করে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতার সূচনা করছে। তারা ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাত করে হকপন্থী আলেমদেরকে নানান ট্যাগ ও গালি দিয়ে নিজেদেরকে ইসলামের খাদেম উপস্থাপন করছে। তারা বলে থাকে মনের পর্দা বড় পর্দা; সবকিছু নিয়তের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং চিন্তা পরিশুদ্ধ রেখে নারী-পুরুষ একত্রে অবাধে মেলামেশা দোষনীয় নয়। মুসলমানদের বড় একটা অংশও সে যুক্তিকে গ্রহণ করে নিয়েছে। লালন করে হৃদয় দিয়ে। অথচ আগুনের কাছে মোম গলবেই, তেঁতুল দেখলে জিহ্বে জ্বল আসবেই, গলা চিপে ধরলে নিঃশ্বাস বন্ধ হবেই। প্রগতিশীলগণ অশুদ্ধ নিয়ত নিয়ে মুসলমানদের সুধী হয়ে মুসলিমদের ক্ষতি করার যে অপচেষ্টা করছেন সেটাও আজ অনেক মুসলিম বুঝতে চায়না। মাকাল ফলের মত কথিত প্রগতিশীলতাকে ধারণ করছে।
কারো শত্রুতা করে তার যতটুকু ক্ষতি করা যায়; বন্ধুত্বতা দেখিয়ে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করা যায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র স্নেহ ভালোবাসা। ইসলাম বিদ্বেষীরা বর্তমানে সে অস্ত্রটাকেই ব্যবহার করছে। তারা নিজেদেরকে মুসলমানদের বন্ধু বানাতে বড় তৎপর। তারা কথায় কথায় ইসলামের প্রশংসা করে মুসলমানদের হৃদয়ে স্থান নিতে চায়। মুসলমানদেরকে ভালোবাসা দিয়ে অন্ধ বানিয়ে সে অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে তৎপর। চারিদিকে তাকালে মনে হয় তারা আজ বড় সফল।মুসলিম গুরু ব্যক্তিদের ঘুমে রেখে সাধারণ মুসলমানদের চেতনার বড়ি খাইয়ে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে নিজেদের তত্ত্বের প্রচলন ঘটাচ্ছে। মুসলিম ধর্মগুরুরা হচ্ছেন ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রথম টার্গেট। অর্থ-ভিত্তের লোভ দিয়ে কিনে নিচ্ছেন তাদেরকে। খ্রিস্টান মিশনারীর তৎপরতায় যখন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শ’খানেক মুসলমানকে খ্রিস্টান বানাতে পারেনি তখন ইসলাম বিদ্বেষীরা কতিপয় দরবারী পীর, খানকা শরীফের দরবেশ, ইসলামী দল ও সংস্থার নেতাকে কিনে নিয়ে মুক্তমনার প্রচলন ঘটিয়ে হাজারো মুসলিমের ইমানের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আমরা মুসলিমরা নিজেদের যতটুকু জানি যতটুকু চিনি তার থেকে আমাদেরকে বেশি চিনে আমাদের জাত শত্রু ইহুদি সম্প্রদায়। ইহুদিরা বিভিন্ন আমলে যেসব কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে তার ব্যাপক প্রচলন আমাদের বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে । কোনো মানুষ চাইলেই হিন্দু থেকে মুসলিম বা অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে, মুসলিম থেকে হতে পারে খ্রিস্টান বা অন্য কিছু অর্থ্যাৎ একজন মানুষ চাইলেই এক ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে কিন্তু কখনোই অন্য কোনো ধর্ম থেকে ইহুদী হতে পারেনা। ইহুদী হতে হলে জন্মাতে হবে অভিশপ্ত বনী ইসরাইলের বংশে। তাই ইহুদীরা অন্য ধর্মের লোক গুলোকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ইহুদী বানিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে মনোনিবেশ না করে তারা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ গুলোকে নানান কৌশলে বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গু করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে। ইহুদিদের তৎপরতা আজ অনেক দূর এগিয়ে। তাইতো তাদের জনৈক মহিলা সাংবাদিক বলেছেন, ”যদি আমেরিকার হোয়াইট হাউজে তিন জন মানুষ থাকে তাহলে তন্মধ্যে একজন আমাদের হিতাকাংখী, আর যদি দু’জন থাকে তাহলে তাদের একজন আমাদের আর যদি একজন মানুষ থাকে তাহলে তিনিই আমাদের হিতাকাংখী”। ইহুদীদের প্রধান টার্গেট মুসলিম সম্প্রদায়। সুতরাং যেখানে খ্রিস্টান রাষ্ট্র আমেরিকা নিয়ে ইহুদীদের এতো তৎপরতা সেখানে মুসলিম রাষ্ট্র গুলোতে তাদের তৎপরতা কতবেশি গভীর তা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ইসলাম বিদ্বেষীদের তৎপরতা ও তাদের খুঁটির জোর নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করলে বারবার ইহুদীদের তৎপরতার চিত্রই ফুটে ওঠে। অনেকে হয়তো এক্ষেত্রে আমার মতের সাথে অমিল হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটা ইহুদী চক্রের তৎপরতাই মনে হয়েছে। অনেকে বলতে পারে বাংলাদেশে এসে ইহুদীদের কাজ করার সময় কই? তারাতো ভাববে সৌদি, আমেরিকা, তুরস্ক, রাশিয়া ও চীনের মত রাষ্ট্র নিয়ে। আসলেই তারা সে সকল বড় বড় রাষ্ট্র গুলোই নিয়েই প্রধানত ভাববে আর তাদের চেলা-চামুন্ডারা ভাববে অন্য সকল মুসলিম ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র নিয়ে। কোনো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কখনো গ্রাম কমিটির কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ণ করে না; তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজের তদারকি করারও সময় পান না। তারজন্য দল গুলো কেন্দ্রের অধীন বিভাগীয় কমিটি, তারও অধীন জেলা কমিটি, তারও অধীন উপজেলা কমিটি, তারও অধীন ইউনিয়ন ও গ্রাম কমিটি গঠন করে। কেন্দ্রে নির্দেশ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে গ্রাম কমিটি গুলো নিজেদের মত নানান কৌশল প্রয়োগ করে। ইহুদী সম্প্রদায় সৌদি-আমেরিকার মত বড় বড় রাষ্ট্র গুলোকে নিজেদের মত বানিয়ে নেয়ার পর এখন বাংলাদেশের মত রাষ্ট্র গুলোর দিকে নজর দিয়েছে। আর সেগুলো তদারকি করার জন্য রয়েছেন কথিত প্রগতিশীল ইসলাম বিদ্বেষী মানুষ গুলো। ইহুদীরা অত্যন্ত হীন মানসিকতার জাতি। তারা নিজেদের স্বার্থে পৃথিবীর সকল মানুষকেও হত্যা করতে দ্বিধা করবে না।অন্যের ঘরে আগুণ দিয়ে আলু পোড়াতে বেশ পারেন তারা। যারা স্বয়ং নিজেদের নবীদেরকে হত্যা করতে পারে তাদের পক্ষে সব কিছুই সম্ভব। ইহুদী অভিশপ্ত জাতি। আল্লাহ ইহুদিদের ওপর স্থায়ীভাবে লাঞ্ছনা, অপমান ও নির্যাতন নির্ধারিত করে দিয়েছেন। যুগে যুগে ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে তাদের লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়েছে। মিসরের ফেরাউন ক্ষমতায় এসে জেরুজালেম দখল করে এবং ইহুদিদের তাড়িয়ে দেয়। তারপর ব্যাবিলনের রাজা বখতে নসর জেরুজালেম দখল করে ইহুদিদের বন্দি করে নিয়ে আসে এবং তাদের দাস বানিয়ে রাখে। পরে পারস্য সম্রাট ইহুদি দাসদের সেখানে ফেরত পাঠান সত্য, কিন্তু তখন পারস্য সম্রাটেরই অধীন ছিল। ৬৬ খ্রি. রোমান সম্রাট তাইতুস জেরুজেলেম দখল করে এবং ইহুদিদের ব্যাপক হারে হত্যা করে। উপরন্তু ৭০ খ্রি. রোমান বাহিনী হাজার হাজার ইহুদিকে বন্দি করে নিয়ে যায় এবং তাদের দাস বানায়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ও জার্মানের এডলফ হিটলার গণহারে ইহুদি হত্যা করেন। যুগে যুগে সকল শাসক শ্রেণী ও সূক্ষ্ম চিন্তার মানুষ গুলো ইহুদীদের চিনতে পেরেছে। তারা সবসময়ই স্বার্থান্বেষী এবং বনী ইসরাইল ব্যতিত সকল মানব গোষ্ঠী বিরোধী। তারা সর্বদা অন্যের অনিষ্ট সাধন করতে ধ্বংসযঙ্গ চালিয়েছে। যার ফলে সবাই তাদেরকে বয়কট ও ঘৃণা করে চলার চেষ্টা করেছিলো। বর্তমানে ইহুদী সম্প্রদায় এক নতুন মাত্রার সূচনা করেছে। তারা মানবিকতা সহনশীলতার কথা বলে বলে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে নিয়েছে। ১৯৪৮ সালে ডেভিড বেনগুরিনের নেতৃত্বে গঠিত হওয়া ইজরাইল রাষ্ট্র আজ প্রত্যক্ষ বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে তারাই যেন বিশ্বের বড় পরাশক্তি। তারা আজ অস্ত্রের যুদ্ধে খেলতে চায়না তারা স্নায়ু যুদ্ধে জড়াতে তৎপর। বিভিন্ন পরাশক্তির রাষ্ট্র গুলোকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। আবার মুসলিম রাষ্ট্র গুলোর প্রশাসকদেরকে অর্থ ভিত্ত ও নারীর বিনিময়ে কিনে নিয়ে সাধারণ মুসলিমদেরকে নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ও মতভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আলেমদের মধ্যে বিভেদ আজ চূড়ান্তরূপ ধারণ করেছে। সে সুযোগকে লুপে নিচ্ছে কাফির-মুশরিক সম্প্রদায় ও তাদের চেলা-চামুন্ডারা। তারা আলেমদের বিরুদ্ধে সকল অপতৎপরতা প্রতিষ্ঠিত করছে। কোন ব্যক্তি বিশেষ বা বিশেষ ইসলামী দল তাদের টার্গেট নয় বরং তাদের টার্গেট হলো ইসলামের বাণী প্রচারক। (চলবে)
লেখক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন