শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন ঃ শবে-কদর অর্থ কি?

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

উত্তর : কদরের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, পরিমাপ অর্থাৎ এক বছরের জন্য শবে-বরাত, গৃহীত কার্যবিবরণী সংযোজন ও বিয়োজনের সঙ্গে কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট ফেরেস্তাদের কাছে সমজিয়ে দেওয়া হয়। ধন-সম্পদ, উন্নতি-অবনতি, জন্ম-মৃত্যু, সমস্যা ও সমাধানের পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়।
দুই, মর্যাদাসম্পন্ন রজনী-এ রাতে প্রচুর সংখ্যক ফেরেস্তা পৃথিবীতে আসেন, বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়, এরাতে দোয়া-উপাসনার মর্যাদা রক্ষা করা হয়, পবিত্র কুরআনের মতো মহানিয়ামত মানবকূলের হেদায়েতের জন্য এ রাতেই নাজিল করা হয়। এ রাতের এবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম করা হয়েছে যা তিরাশি বছর চার মাসের অধিক। ভোর অবধি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, বরকত, শান্তি বর্ষিত হয় এবং ক্ষমার দ্বার উন্মুক্ত থাকে।
তিন, সঙ্কোচন- অর্থাৎ অগনিত ফেরেস্তা অবতরণের ফলে ভূ-মন্ডল ও নভমন্ডলে সঙ্কোচনের সৃষ্টি হয়। ভোরের দিকে যখন ফেরেস্তারা আকাশপথে প্রত্যাবর্তন করেন তখন জিব্রাইল (আঃ)-কে ফেরেস্তারা জিজ্ঞাসা করেন খোদা বিশ্বাসীদের সমস্যাবলী ও প্রয়োজনাদির ব্যাপারে আজ কী সিদ্ধান্ত হলো? জিব্রাইল (আঃ) উত্তর দেন, পূণ্যবানদের ক্ষমা ও পাপীদের বেলায় সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। এতটুকু শুনে আসমান-জমিনের সকল ফেরেস্তা আনন্দিত হয়ে আল্লাহর গুণগান শুরু করেন। এতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠে। শবে-কদরের লক্ষণ কী তা অবগত হওয়া দরকার। এক, পূণ্যবানদের অন্তর কোমল হয়, তাঁরা খোদার দরবারে অবনত মস্তকে ভেঙ্গে পড়েন, অন্তরে শান্তি-স্নিগ্ধতা অনুভূত হয়। দুই, এবাদতে তৃপ্তি আসে। তিন, অনেকে খোদার নূর (আলো) দর্শন করেন। চার, গাছপালা সেজদারত থাকে। পাঁচ, অনেকে ফেরেস্তাদের সালাম-কালাম শ্রবণ করেন। ছয়, নির্মল বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। সাত, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। আট রাত নাতিশীতোষ্ণ থাকে। নয়, ফেরেস্তাদের ফেরার পথে পরদিন সকালে সূর্যের আবছা কিরণ থাকে।
পূর্ববর্তী নবীগণের সময় শবে-কদর ছিল না। একমাত্র মোহাম্মদ (স.)-এর উম্মতকে আল্লাহতায়ালা দয়া পরবশ হয়ে দান করেছেন। এ রাত যার ভাগ্যে জুটল না সে হতভাগা আর যারা পেয়ে যায় তাদের মতো ভাগ্যবান আর কে? এ রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম অর্থাৎ হাজার মাসের রোজা-জেহাদ থেকেও এ রাতের এবাদত উত্তম। শবে-কদর রমজানের রাতে বিশেষ করে শেষ দশ রাতে তালাশ করতে বলা হয়েছে। দিন-তারিখ অনির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে। নবী (স.) ও সাহাবাগণ নিজ নিজ পরীক্ষা ও অভিজ্ঞতা থেকে সম্ভাব্য দিন-তারিখ বর্ণনা ক
রেছেন, নির্দিষ্ট করে বলেননি। কিন্তু আজকাল যেভাবে প্রতিবছর নির্দিষ্ট করে সাতাশতম রাতে শবে-কদর পালিত হচ্ছে তা সঠিক পদ্ধতি নয়। গৎবাঁধা প্রথা অনুযায়ী পালন করে শবে-কদরের মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে চলেছে। এতে শবে-কদর মুর্খতার আবরণে চাপা পড়ে থেকে যায় আর মুসলমান রেওয়াজের বশে বঞ্চনার শিকার হন এ উপলক্ষে। এ উপলক্ষে শিরনির জন্য চাঁদা সংগ্রহ করা শরিয়ত সম্মত নয়।
শবে-কদরে দু’টি কাজ প্রমাণিত। এক, এবাদতের মাধ্যমে রাত জাগরণ, দুই, ইহ-পরকালের কল্যাণে দোয়া ও ক্ষমা-প্রার্থনা। এজন্য মসজিদে মসজিদে সমবেত এবাদতের কোন ভিত্তি নেই। বরং হাদিসে বর্ণিত আছে, একাগ্রচিত্তে আপন গৃহে নফল এবাদত করা পূণ্যের দিক দিয়ে মসজিদে নববির চেয়েও উত্তম। এ রাতের ইবাদত ইনকেরাদী বা ব্যক্তিগত ইবাদত। সামষ্টিক নয়। একদা হযরত আয়শা (রাঃ) রাসূল (স.) কে জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল। আমি যদি শবে-কদর পেয়ে যাই তাহলে কি আমল করবো। রাসুলুল্লাহ (স). বলেন তুমি দুআ করবে, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী”- হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
উত্তর দিচ্ছেন : আফতাব চৌধুরী। সাংবাদিক ও কলামিষ্টি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন