আগামী নির্বাচনের আগে দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী করে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই দলের ত্রুটি দূর করে অভ্যন্তরীন কোন্দন নিরসন করে শক্তিশালী করা হচ্ছে দলকে। এজন্য তৃণমূল চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নতুন কমিটির মাধ্যমে তৃণমূলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এতে করে বিএনপির আন্দোলন ও ষড়যন্ত্র সামাল দিয়ে আগামী নির্বাচনে আবারও জয়লাভের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্য আওয়ামী লীগের।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, বিএনপিকে রাজপথে আন্দোলন করার সুযোগ দেওয়া হবে না। রাজপথ সব সময় দখলে রাখবে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি আন্দোলন করলে চাইলে মাঠেই তাদের প্রতিহত করা হবে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি যেকোন সময় সুযোগ পেলেই সহিংসতা শুরু করে দেশকে অস্থিতিশীল করবে। তাই বিএনপিকে সে সুযোগ দেওয়া হবে না। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা ও আন্দোলন মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র বিএনপি-জামাত অপশক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা লাশ চায়, লাশের রাজনীতি করে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র করুন কোন লাভ নেই, নির্বাচনকে প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। বিএনপির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি আবারও আগুন সন্ত্রাসের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই দেশের আপামর জনতার দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে আছে এবং থাকবে। সন্ত্রাসীরা যদি এই বাংলাদেশে বিএনপি এবং জামাতের নেতৃত্বে আবারও নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করে আমাদের নেতা আমাদের নেতা কর্মীরা জনগণকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করবে।
গত ৩১ মে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথসভায় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকারও নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস করলে জবাব রাজপথেই দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, নির্বাচনের আগে আন্দোলন মোকাবেলায় তিনটি কৌশল থাকবে আওয়ামী লীগের। এক. বিএনপি যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, তাহলে দলের নেতা-কর্মীরা তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দেবে। দুই. গুজব রটালে তাদের বিষয়ে আমরা জনগণকে সচেতন করব। তাদের মিথ্যা কোনো তথ্যের বিষয়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা সচেতন থাকবে। তৃতীয়ত, তাদের যেকোনো অসত্য বক্তব্যের বিষয় জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই কাউন্টার দেব।
এদিকে আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দল গোছানোর কাজ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় আট টি টিম সারাদেশে দোয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন করছেন। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা এবং কোন্দাল দূর করা মূল লক্ষ্য। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের চেষ্টার মাঝেও কিছু কিছু স্থানে দলীয় কোন্দল ও মারামারি লেগেই আছে।
গত ২ মে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন। গত ১৪ মে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদ এবং সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে এ সংঘর্ষ ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
এর আগে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ ও সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় উপজেলা শহর।
গত ৩০ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তার ও গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরায় বাঁশগাড়ী ও মির্জাচরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের সংঘর্ষে ১ জন গুলিবিদ্ধসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সঙ্গে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুলের দ্ব›েদ্ব এ সহিংসতা হয়।
গত ৩ মে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন এবং উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ঈদের নামাজ শেষে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন হাওলাদার ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চিতলিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ছালাম হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গত ২১ মার্চ রাজশাহীর বাঘায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলীর সমর্থক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
২০ ফেব্রæয়ারি জেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নাটোর সার্কিট হাউজে স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
গত ৯ মে সামনের সারিতে বসা নিয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি অবৈধ বালুর ঘাট দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এে ত আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের বাগানবাড়ি এলাকায় নিকরাইল ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ ও একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকারের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
গত ১৩ এপ্রিল ফরিদপুরের সালথায় রাস্তা কাটা নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ২৯ জন আহত হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়।
বগুড়ার শেরপুরে বিশালপুর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন