রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রসুনের ডাবল সেঞ্চুরি আলু লাফ দিচ্ছে

দ্রব্যমূল্যে ক্রেতাদের অস্বস্তি : পকেট খালি হয়, বাজারের ব্যাগ ভরে না

মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

চাল নিয়ে চালবাজি থামছেই না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নিয়মিত অভিযান, গত বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআইয়ের মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীদের আশ্বাস। খোদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বোরো মৌসুমে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধে বাজার দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও বাজারে তার কোন প্রভাব পড়েনি। দিনকে দিন বেড়েই চলছে চালের দাম। মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা। একসপ্তাহ আগে মিনিকেটের কেজি ছিল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা। ২৮ চালের কেজি ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। আগে দাম ছিল ৫০ টাকা কেজি। নাজিরশাইল চালের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে পোলাওর চাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। চালের পাশাপাশি বেড়েছে আলুর দামও। গত সপ্তাহে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে আলু। এখন তা ২৫ থেকে ৩০ টাকা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর কুচুক্ষেত বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মোতালেব হোসেনের সাথে। খাসির গোশত কিনতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দাম শুনে তার মাথায় হাত। দেশি মুরগিও কিনতে পারলেন না, দাম ৫৫০ টাকা। বাধ্য হয়ে ২৯০ টাকায় কক মুরগি কেনেন তিনি। বাজারের অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারের যে অবস্থা, টাকার বস্তা নিয়া আসতে হবে। গরু, খাসি বা দেশি মুরগি কেনার অবস্থা নেই আমার মতো অনেক মধ্যবিত্তের। কাঁচা বাজারেও আগুন। পকেটের টাকা শেষ হয়ে যায় কিন্তু বাজারের ব্যাগ ভরে না। এ বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতাই এভাবে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

মিরপুর ১১ নাম্বারের বাজারের ক্রেতারা বলেন, পাঙ্গাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। আর গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এসব মনিটরিং করবে কে? অন্যদিকে গরুর গোশত ৬৮০ থেকে ফিরেছে ৭০০ টাকায়। খাসি ৯৫০ টাকা, বকরির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। বিক্রেতারা বলেন, গরুই তো ৭০০ টাকা। সেখানে খাসি-বকরির দাম তো আরও বেশি হবে।

এ বাজারের মাছের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। মাছ বিক্রেতা সরোয়ার হোসেন বলেন, ১ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশের দাম দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা। সে হিসেবে একটি বড় ইলিশের দাম পড়ে ৩৫০০ থেকে ৩৭০০ টাকা। তবে ছোট ইলিশ ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দুই কেজি ওজনের কাতল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। মৃগেলও ২৫০ টাকা। তবে রুই-কাতলা ও মৃগেল ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা ৩৫০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা, শৌল ৮০০ টাকা, মাগুর ৬০০ টাকা, কই ২৪০-২৫০ টাকা, আইর ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৭০০ টাকা। দেশি পোয়া ৪০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, বাইলা ৭৫০।

মুরগির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা কেজিতে, কক ২৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এসব বাজারে লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। বাজারে হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৯০ টাকা।

কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গাজর, টমেটো ও বেগুনের দাম চড়া। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউয়ের ৫০ পিস টাকা, পেঁপে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, কচু ৬০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, কচুর মূল ৬০ টাকা, কাঁচা কলা ৩০ টাকা, কচি কুমড়া ৪০ টাকা প্রতি পিস, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ২৫০ গ্রাম মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।
গাজর-টমেটোর বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে ওই বাজারের কাইয়ুম নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, দেশে এখন গাজর নাই। যা আছে সব চায়না গাজর। টমেটোর একই দশা। দেশি কোনো টমেটো নেই, যে কারণে দাম বেশি।

বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। বাজারে চায়না রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বার্মা আদার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। চায়না আদার দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এছাড়া প্যাকেট চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। এসব বাজারে দেশি মুশুরের ডালের কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। ইন্ডিয়ান মুশুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। প্যাকেট আটার কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০। খোলা আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

চালের বাজারে কথা হয় মুন্সি সোহরাব নামে ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্য সব বাজার করে এসে এখন যা অবস্থা তাতে চাল কেনায় টান পড়েছে পকেটে। গোশত সামর্থ্যরে বাইরে যাচ্ছে। সবজি খাব, সেখানেও বাড়তি দাম। ইলিশ আর বাঙালির মাছ নেই। দেশি মাছ কিনব সেখানেও ৪০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। এসব দেখার যেন কেউ নেই। অনেকটা বাধ্য হয়েই বেঁচে থাকার তাগিদে বাজার করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Muhammad Mynul Haq ৪ জুন, ২০২২, ৬:১৪ এএম says : 0
সরকার যদি ইচ্ছা করে,দ্রব্য মূল্যের দাম কমানো সম্ভব :-)সরকার যে চোরদেরকে মনিটরিং বা আইন প্রয়োগের দায়িত্ব দিয়েছে ওদের অবহেলার কারনেই এমন হচ্ছে বলে আমি মনে করি
Total Reply(0)
Muhammad Mynul Haq ৪ জুন, ২০২২, ৬:১৪ এএম says : 0
সরকার যদি ইচ্ছা করে,দ্রব্য মূল্যের দাম কমানো সম্ভব :-)সরকার যে চোরদেরকে মনিটরিং বা আইন প্রয়োগের দায়িত্ব দিয়েছে ওদের অবহেলার কারনেই এমন হচ্ছে বলে আমি মনে করি
Total Reply(0)
H.a. Sumon ৪ জুন, ২০২২, ৬:১৪ এএম says : 0
সবাই এগিয়ে না আসলে সরকারের একার পক্ষে দাম নিয়ন্ত্রন করা সম্ভবপর হবেনা। আর যেহেতু এই সময়ে চাহিদা বাড়ে, সেহেতু দাম কিছু বাড়বে, এটা সাভাবিক, তবে তা নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার।
Total Reply(0)
Amzad Hossain Chowdhury ৪ জুন, ২০২২, ৬:১৪ এএম says : 0
আসলে সরকার বলেন আর বিক্রেতা বলেন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কেউই আন্তরিক নয়
Total Reply(0)
Shamjad Hossain Maruf ৪ জুন, ২০২২, ৬:১৫ এএম says : 0
সরকার এর কাছে অনুরোধ যেন দাম টা সহনিয় রাখে, সাধরন মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে আর বলে আমাদের সরকার কি করে দেখেনা এগুলো আরো অনেক কথাই বলে.
Total Reply(0)
Shamjad Hossain Maruf ৪ জুন, ২০২২, ৬:১৫ এএম says : 0
সরকার এর কাছে অনুরোধ যেন দাম টা সহনিয় রাখে, সাধরন মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে আর বলে আমাদের সরকার কি করে দেখেনা এগুলো আরো অনেক কথাই বলে.
Total Reply(0)
Yousman Ali ৪ জুন, ২০২২, ৯:৩০ এএম says : 0
সব কৃষি কাজ ছেড়ে দিচ্ছে তাই এ অবস্থা যাদের আছে তাদের কিছু না কিছু আবাদ করার দরকার
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন