পদ্মা সেতু সহ আগামী মাসে দক্ষিনাঞ্চলের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চুড়ান্ত হলেও যাত্রী সেবা সম্প্রসারনে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসির কোন হেলদোল নেই। অথচ সংস্থটির সারা দেশের বাস ডিপোগুলোর মধ্যে বরিশালই পরিচালন মুনফায় প্রায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো জেলা থেকে রাজধানী ঢাকার দুরত্ব ১শ থেকে দেড়শ কিলোমিটার হ্রাস পাবে।
অপরদিকে, আগামী মাসেই চট্টগ্রামÑবরিশালÑখুলনা/ মোংলা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে ‘৮ম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেত’ু এবং বরিশালÑগোপালগঞ্জÑনড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ‘কালনা সেতু’ চালু হচ্ছে। এরফলে বরিশাল,গোপালগঞ্জ,মাদারীপুর এবং শরিয়তপুরের সহ দক্ষিনাঞ্চলের ৯টি জেলার সাথে যশোর ও বেনাপোলের সড়ক পথের দুরত্ব ৫০ থেকে ১শ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে আসবে।
চীন সরকারের অনুদানে বেকুঠিয়াতে ৮ম বাংলাদেশÑচীন মৈত্রী সেতু এবং জাপানী ঋনে কালনা সেতুর নির্মান কাজ প্রায় শেষ। চলতি মাসের মধ্যেই বেকুঠিয়ার কঁচা নদীর ওপর সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হচ্ছে। কালনা সেতুটিও যান চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হচ্ছে আগামী মাসেই। সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় থেকে অনুরোধপত্র পেলে প্রধানমন্ত্রী আগামী মাসের যেকোন দিন ৮ম চীন-বাংলাদেশ মেত্রী সেতু ও পরবর্তিতে কালনা সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
পদ্মা সেতু সহ এ ৩টি সেতুই সারা দেশের সাথে দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়নের ঐতিহাসিক মাইলফলক রচনা করতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞগন। কিন্তু এসব সেতুকে কাজ লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা- বিআরটিসি’র দক্ষিনাঞ্চলের সাথে রাজধানী ছাড়াও বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ মোংলা,বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের যাত্রী পরিবহন উন্নত ও সম্প্রসারনের নুন্যতম কোন উদ্যোগ নেই।
বরিশালে রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটির একমাত্র বাস ডিপোটিত ৭০ নতুন ও পুরনো বাসের মধ্যে বর্তমানে গড়ে চালু থাকছে ৪০টি। এরমধ্যে এসি ও নন এসি মিলিয়ে নতুন গাড়ীর সংখ্যা মাত্র ২০টির মত। অথচ নতুন ও পুরনো ৪০টি বাসের সাহায্যে দক্ষিনে সাগর পাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরবঙ্গের রংপুর পর্যন্ত বিঅরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোর মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
কিন্তু প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিচালন মুনফার এ ডিপোটিতে দীর্ঘদিন ধরেই আরো এসি বাস দেয়ার দাবী থাকলেও সংস্থাটির সদর দপ্তর বিষয়টি নিয়ে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি। বরিশালে এ ডিপোটির মাত্র ১৪টি এসি বাসের মধ্যে ১১টির সাহায্যে বরিশাল থেকে মাওয়ায় পদ্মার পশ্চিম পাড়ের কাঠাল বাড়ী পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে এসব বাসেই ঢাকার গুলিস্তান পার্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হবে। ফলে বর্তমানে বরিশাল থেকে প্রতি আধঘন্টা অন্তর যে বাস ছাড়ছে দুরত্¦ বৃদ্ধির কারনে তা এক থেকে দেড় ঘন্টা পরে ছাড়বে বলে সংস্থাটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে বেকুঠিয়ায় সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে খুলনার ফেরিবিহীন সরাসরি সড়ক পথের দুরত্ব ১১০ কিলোমিটারের নিচে কমে আসবে। কিন্তু বিআররিটিসি বর্তমানে বরিশাল থেকে ৩টি ও কুয়াকাটা থেকে খুলনায় আরো দুটি বাস সার্ভিস পরিচালন করলেও তার ৩টি গাড়ীই দীর্ঘ দিনের পুরনো। এছাড়া একসময়ের বরিশালÑযশোর-বেনাপোল রুটেও এখন সংস্থাটির কোন বাস সার্ভিস আর অবশিষ্ট নেই। অথচ আগামী মাসের মধ্যেই বরিশালÑগোপালগঞ্জ-নড়াইলÑযশোর হয়ে বেনাপোলের ফেরি বিহীন সংক্ষিপ্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন যাত্রীদের পক্ষ থেকে বরিশাল ছাড়াও কুয়াকাটা সহ এ অঞ্চলের প্রতিটি জেলা সদর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ঢাকার পাশাপাশি খুলনা ও বেনাপোলের সরাসরি বাতানুকুল বাস সার্ভিস চালুর দাবী জানান হয়েছে। এ ব্যাপারে বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোর ব্যাবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ঢাকা, খুলনা ও বেনাপোল সহ সব গুরুত্বপূর্ণস্থানের সাথে যাত্রীবান্ধব সেবা প্রদানের লক্ষ আমাদের রয়েছে। এলক্ষে সদর দপ্তরের কাছে এসি বাস চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। কতৃপক্ষ গাড়ী বরাদ্ব দিলেই যাত্রী সেবার মান আরো উন্নত করার কথাও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন