বুষ্টার ডোজ প্রদানের এক সপ্তাহের ক্যাম্পেইনে প্রায় ৭ লাখ মানুষ এ প্রতিষেধক গ্রহনের ফলে দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায় ১ কোটি ৪১ লাখ ডোজ করোনা ভ্যকসিন প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১ কোটি জনসংখ্যার দক্ষিণাঞ্চলে ১২ বছরের ঊর্ধের ৮৫ লাখেরও বেশী মানুষের প্রায় ৭১ লাখ এ পর্যন্ত করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ এবং ৬০ লাক্ষাধীক দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করলেও গত ৪ জুন ক্যাম্পেইন শুরুর আগে বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৬ লাখেরও কম। যা ছিল ভ্যাকসিন গ্রহনযোগ্য মানুষের ১০ ভাগেরও কম।
এ অবস্থায়ই গত ৪ জুন থেকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও সপ্তাহব্যাপী ক্যাম্পেইনে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলায় ৬ লাখ ৭১ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন প্রদানের ফলে বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখে উন্নীত হয়েছে বলে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। এসময়ে জেলা ও উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়েও বুষ্টার ডোজ প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়। চার মাস আগে যারাই দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছেন, যেকোন কেন্দ্রেই তাদের বুষ্টার ডোজ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের নুন্যতম ৩টি কেন্দ্রে এসব ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। এলক্ষ্যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও বুষ্টার ডোজ প্রদান করা হয়।
২০২১-এর ৭ ফেব্রুয়ারী দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান শুরুর পর থেকে গত ১০ জুন পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাসে এ অঞ্চলের ৬ জেলায় ৭১ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছেন ৬০ লক্ষাধিক মানুষ। আর গত এক সপ্তাহের কাম্পেইন সহ বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১ লাখ ৮০ হাজারের মত। এরমধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রথম ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজারের মত। আর ৪ লাখ ৫ হাজারের মত দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন গ্রহন করেছেন। তবে এ নগরীতে বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা এখনো মাত্র ১ লাখ ২০ হাজারের বেশী নয়।
অপরদিকে, দক্ষিণাঞ্চলের ১০ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৮ ছাত্রÑছাত্রী গত ৩১ মে পর্যন্ত করোনা ভাকসিনের প্রথম ডোজ ও ৮ লাখ ৯ হাজার ৬৩৬ জন দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছে। এরমধ্যে বরিশাল মহানগরীতেই ৯৩ হাজার ৫৯৯ ছাত্রÑছাত্রী প্রথম ডোজ ও প্রায় ৭৯ হাজার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছে বলে জানা গেছে। এবারের ক্যাম্পেইনে দক্ষিণাঞ্চলে ‘এ্যস্ট্রেজেনেকা, ফাইজার ও মডার্ণা’ ভ্যাকসিনের বুষ্টার ডোজ দেয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
তবে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও করোনা সংক্রমন উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস ৪ জুনের আগে বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা অতি সিমিত ছিল বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। গত মাসে সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলে মাত্র ৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যারমধ্যে বরিশাল মহানগরীতে দুজন ও ভোলাতে ১ জন। যা ২০২১-এর মধ্য মার্চে দক্ষিনাঞ্চলে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পরে এ অঞ্চলে সর্বনি¤œ সংক্রমন। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। গত মার্চে এ অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২০ জন। মৃত্যু হয় দুজনের। তবে এপ্রিলে ৭ জনের দেহে সংক্রমন শনাক্ত হলেও কোন মৃত্যু ছিলনা।
তবে এ অঞ্চলে ১০ জুন পর্যন্ত সর্বমোট ৫২ হাজার ৭০৭ করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৫১ হাজার ৬৪০ সুস্থ হয়ে উঠেছেন ইতোমধ্যে। সর্বশেষ হিসেবে সুস্থতার হার ৯৯%-এর ওপরে। আর সর্বমোট মৃত্যু হয়েছে ৬৯০ জনের।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী দক্ষিনাঞ্চলের মধ্যে সর্বাধীক করোনা শনাক্ত হয়েছে বরিশাল জেলায়, ২১ হাজার ২২৩ জন। এ জেলায় মারা গেছেন ২২৫ জন। তবে জেলায় আক্রান্ত ও মৃতের এ তালিকা ভারি করেছে বরিশাল মহানগরী। দক্ষিণাঞ্চলের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬%-এর এ নগরীতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার করোনা আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ১০৩ জন।
দ্বীপজেলা ভোলাতে ৭ হাজার ৮৬৫ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯২ জনের। পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্ত ৭ হাজার ৪১ জনের মধ্যে মারা গেছেন ১১০ জন। পিরোজপুরেও ৬ হাজার ৩০৬ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধীক মৃত্যু হারের বরগুনাতে ৪ হাজার ৬৬৮ জন আক্রান্তের মধ্যে ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নমুনা পরিক্ষার তুলনায় সর্বাধীক শনাক্ত হারের ঝালকাঠীতে ৫ হাজার ৬০৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৭১ জন।।।। ১১-৬-২০২২.
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন