অধিক সংখ্যক পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে। প্রায় ১১ হাজার ফুট রানওয়ে নিয়ে কক্সবাজারে দেশের চতুর্থ বৃহত্তর বিমানবন্দর হতে যাচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিরামহীনভাবে এগিয়ে চলছে টার্মিনাল নির্মাণসহ রানওয়ে সম্প্রসারণ উন্নয়ন কাজ। আগামী বছরের ডিসেম্বরে উন্নয়ন কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ২৯ আগস্ট ভার্চুয়ালি কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হলে অধিক সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক আসবে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত দেখতে। সারা বছর চাঙ্গা থাকবে হোটেল মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা খাত। আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজারে ৭০টির মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাস্তবায়নে সমুদ্রের উপর এক হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে সম্প্রসারণ করে ৯ হাজার ফুট থেকে ১০ হাজার ৭০০ শত ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। এ জন্য প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ হচ্ছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
সিভিল অ্যাভিয়েশন বাংলাদেশ এর পক্ষে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন, বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার কাজ বিরামহীনভাবে চলছে। এ পর্যন্ত কাজের ১৭ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর ম্যানেজার মুর্তজা হুসাইন বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এটি দেশের জন্য বটেই কক্সবাজারবাসীদের জন্য খুশির খবর। বর্তমানে টার্মিনাল নির্মাণসহ সাগরে এক হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ এগিয়ে চলছে। তাছাড়া বিমানবন্দরের চারপাশের সীমানা প্রাচীর সংস্কার করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিমানবন্দরের ৯৮২ একর জায়গার মধ্যে অবৈধ দখলদারদের কব্জায় রয়েছে প্রায় ২০০ একর। তবে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য আরো ৬৮২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই এলাকার অধিবাসীদের পার্শ্ববর্তী খুরুস্কুল শেখ হাসিনা আশ্রায়ণ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে।
দুই পর্যায়ে সম্প্রসারণ কাজের মধ্যদিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা প্রদানে সক্ষম বিমানবন্দর হিসাবে উন্নীত করা হবে। এতে করে সুপরিসর বিমানগুলো উড্ডয়ন-অবতরণ ও পার্কিংয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
বর্তমানে প্রতিদিন কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের অর্ধশত ফ্লাইট উঠানামা করছে। রানওয়ে সম্প্রসারণ হলে রাত-দিন বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিসর উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭ ও বোয়িং-৭৪৭ এর মডেলের বিমানও কক্সবাজার থেকে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। সেই সাথে রিফুয়েলিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে। সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশি সরাসরি ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা আরো বাড়বে।
দেশে প্রথমবারের মত সমুদ্রবক্ষের ওপর নির্মিতব্য এক হাজার ৭০০ ফুট রানওয়েসহ কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। রানওয়ের অন্তত ৭০০ ফুট থাকছে উত্তর দিকে সাগরের পানির ওপর। চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউসিবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন-জেভি যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পুরো কার্যক্রমের জন্য সরকার চীনের সাথে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি সই করেছে বলেও জানা গেছে।
বর্তমানে বিমানবন্দরের ছয় হাজার ৭৯০ ফুট দৈর্ঘ্য রানওয়ে থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ৭০০ ফুট এবং ১৫০ ফুট প্রশস্থ থেকে বাড়িয়ে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। সুপরিসর বিমানের জন্য রানওয়ের ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হবে। এর সাথে রানওয়ের লাইটিং ফ্যাসিলিটিজ ও নেভিগেশন এইড বাড়ানো হবে। দূরত্ব পরিমাপক সরঞ্জাম, ডপলার ওমনি ডিরেকশন রেঞ্জ, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা হালনাগাদ করা হবে। যান্ত্রিক অবতরণ ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় মেট্রোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত প্রকল্প। বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হলে দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়বে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে। আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট, কক্সবাজারের সাথে রেল যোগাযোগসহ বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পগুলো শেষ হলে কক্সবাজার একটি আন্তর্জাতিক শহরে পরিণত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন